মহামারীতে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা; লাগাম টানুন কিছু সহজ কৌশলে

0
125
মহামারীতে বাড়ছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা; লাগাম টানুন কিছু সহজ কৌশলে

আমাদের প্রতিটা দিন এখন অস্বাভাবিক অবস্থাকে স্বাভাবিক ভেবেই কাটিয়ে দিতে হচ্ছে। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা বা দুর্ভাবনা এখন আমাদের খুবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে যা শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত হানিকর। এই অস্বাভাবিক অবস্থায় নিজেকে সুস্থ রাখাই এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

এখন আমাদের সবার একটাই দুশ্চিন্তা, একটাই আশঙ্কা। আসন্ন যে দিন বা সময়, সেই সময়ে কি আমরা করোনা মুক্ত থাকতে পারবো? আমরা কি সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবো? আমাদের পরিবার, আত্মীয় স্বজন সবাই কি সুস্থ থাকতে পারবে? এসব চিন্তা আমাদের প্রতিনিয়ত মানসিক চাপ বাড়িয়ে চলেছে। করোনা মহামারী এক অস্বাভাবিক অবস্থাকে আমাদের নিত্য নৈমিত্তিক অবস্থায় পরিণত করেছে এবং দীর্ঘ দিন ধরে আমরা এই অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিনানিপাত করছি। বহু দিন ধরে আমরা স্বাভাবিক ভাবে বাইরে যেতে পারছিনা। আমাদের বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা হচ্ছেনা। এমনকি ঘরে থেকেও আমরা দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে পারছিনা। ভাবতে পারছিনা যে এভাবে গৃহবন্দী থেকেও আমরা করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবো।

চারদিকে যখন এমন বিশৃঙ্খলা তখন অস্থিরতা দূরে রেখে নিজের মানসিক শান্তি ধরে রাখা সত্যিই খুবই কঠিন। কিন্তু একবার ভাবুন তো, এই অস্থিরতা কি আমাদের শরীর ও মনের কোনরকম ভালো কিছু করছে? দুশ্চিন্তা করলেই কি সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসবে? মোটেও না। করোনা যেমন তার থাবা দেখিয়ে আমাদের ভয় দেবার প্রয়াস করছে, তেমনি আমাদেরকেও করোনা থেকে সুরক্ষিত ও সুস্থ থাকতে নিজেদের নিয়ে আগে ভাবতে হবে। মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থতা আগে নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য দুশ্চিন্তা কমানোর প্রয়াস অবশ্যই করতে হবে। নিচে কিছু কৌশল তুলে ধরা হল যা এই মহামারীকালীন সময়েও আমাদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করবে।

১) ছোটখাটো সমস্যাগুলোকে খুব বেশী গুরুত্ব না দেওয়াঃ
মহামারী কালীন এই দুঃসময়ে আমাদের স্বাভাবিক সব কিছুই এখন বদলে গেছে। সব ক্ষেত্রেই আমাদের সেসব কাজ করতে হচ্ছে যা আগে কখনো আমরা করিনি। তাই সমস্যা কম বেশী থাকবেই। কিন্তু সব ধরণের সমস্যাকে যদি সমান গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো নিয়ে যদি দুশ্চিন্তা করা হয় তাহলে কখনোই সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব হবেনা। মহামারীর এই বৈশ্বিক সমস্যার সময়ে তাই ছোটখাটো সমস্যাগুলোকে আমাদের এড়িয়ে চলাই যুক্তিসঙ্গত হবে। এতে মানসিক চাপ যেমন কমবে, তেমনি এই পরিবর্তিত সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াও সহজ হবে।

২) নিজের মত করে আনন্দে থাকাঃ
হ্যাঁ, এখন ইচ্ছে করলেও হয়তো আমরা দূরে অবকাশ যাপন করতে যেতে পারছিনা। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেতে পারছিনা। আমাদের অধিকাংশ আনন্দদায়ক কাজ গুলো করা থেকেই এখন আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। কিন্তু তাই বলে যদি মন খারাপ করে থাকি তাহলে কি আমাদের সময়টা ভালো কাটবে? যেহেতু আমাদের আর কিছুই করার নেই তাই পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে যদি নিজের মত করে ভালো থাকার, আনন্দে থাকার প্রয়াস করা যায় সেটাই সঠিক হবেনা কি? ঘরে বসে টিভি দেখা, সিনেমা দেখা, গাছের যত্ন নেওয়া, সৃষ্টিশীল কোন কাজ যেমন ছবি আঁকা, রান্না করা ইত্যাদি করে সময়টা আনন্দে কাটানোর প্রয়াস করা যেতেই পারে। আর এতে আমরা দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকবো, আমাদের মনটাও ভালো থাকবে।

৩) শরীর চর্চা করাঃ
সুস্থ শরীরেই সুস্থ মনের বাস। তাই করোনা সংক্রমণ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বরং নিজেদেরকে করোনা মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার প্রয়াস করতে হবে। উৎকণ্ঠায় না ভুগে শরীরকে সুস্থ রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কি কি করা যায় সেগুলো করার প্রয়াস করতে হবে। ঘরে থেকেই বিভিন্ন ধরণের শরীর চর্চা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে সময়টা যেমন কেটে যাবে তেমনি শরীর ও মনও সুস্থ থাকবে।

৪) পরিবারের অন্যান্যদের সাথে অধিকতর সময় অতিবাহিত করাঃ
করোনায় অন্যান্য সমস্যার সাথে বেড়েছে একাকীত্ব। এই একাকীত্ব থেকেই নানা ধরণের মানসিক সমস্যা যেমন দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। তাই এই একাকীত্বকে দূরে রাখার প্রয়াস করতে হবে। আর করোনা কালীন সময়ে একাকীত্ব দূর করার এবং সুন্দর সময় কাটানোর সব থেকে ভালো উপায় হল যত বেশী সম্ভব পরিবারের অন্যান্যদের সাথে মিলেমিশে থাকার প্রয়াস করা। এতে আপনার মনোযোগ অন্যান্য সমস্যা থেকে সরে যাবে এবং আপনি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

সময়ের সাথে নিজেকে বদলে নিতে না পারলে আমাদেত অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ে। এটিই প্রকৃতির নিয়ম। তাই সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বা সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করে আমরা কখনো ভালো কিছু পাবো না। নিজেদের সুস্থ রাখতে এবং ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হলে মন ও শরীর দুটিকেই সুস্থ রাখতে হবে। আর এটি করতে হলে সর্ব প্রথম আমাদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা সহ সব ধরণের মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী কাজ থেকে দূরে থাকার প্রয়াস করতে হবে।

সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/lifetime-connections/202012/15-ways-de-stress-when-pandemic-fatigue-sets-in

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleঅটিজম এর আদ্যোপান্ত
Next articleগর্ভাবস্থায় নারীর নিদ্রাহীনতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here