মন ভালো রাখে ঘরের পোষা প্রাণীটি

পোষা প্রাণী
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যাদের বাড়িতে পোষা প্রাণী আছে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অন্যদের তুলনায় উত্তম স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে থাকেন। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং শরীরের উপর পোষা প্রাণী ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

করোনা মহামারীর এই বছরটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার গুরুত্ব বেশ ভালোভাবে বুঝিয়েছে। অধিকাংশ মানুষের মাঝেই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। ইমিউনো সিস্টেম ভালো রাখার হেন প্রচেষ্টা নেই যা আমরা করছিনা।  এসব বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে একটি খুব সহজ উপায় আমাদের হাতের নাগালেই রয়েছে। আর সেটি হল আমাদের ঘরে থাকা পোষা প্রাণীটি। গবেষণায় দেখা গেছে যাদের ঘরে পোষা প্রাণী রয়েছে তাদের মন ও শরীর দুটোই অন্যান্যদের তুলনায় অধিক মাত্রায় ভালো থাকে। তাদের ইমিউনো সিস্টেম অন্যান্যদের তুলনার উত্তম রূপে কাজ করে। কিন্তু কিভাবে এটি সম্ভব হয়? আজ এটি নিয়েই আমরা জানার চেষ্টা করবো।

বর্তমান সময়ে মানুষের মাঝে ঘরে একটি পোষা প্রাণী রাখার সংস্কৃতি বেশ লক্ষণীয়। প্রায় ৫৫-৬০ ভাগ লোকের বাড়িতে এখন পোষা প্রাণী রয়েছে। আমাদের উপর বাড়িতে পোষা প্রাণী রাখার সব থেকে বড় প্রভাব আমাদের মনস্তত্ত্বের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে,  যাদের মানসিক বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, ঘরে কোন পোষা প্রাণী আনার পর ধীরে ধীরে তাদের সেসব সমস্যার উন্নতি হয়েছে। প্রায় ২,০০০ পোষা প্রাণীর মালিকদের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে তাদের মধ্যে প্রায় ৭৪ ভাগ মানুষের বিভিন্ন প্রাণী পোষার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছে। এমনকি অন্যান্য অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিভিন্ন প্রাণী লালন পালন করেন, তাদের আয়ু ও বেশী হয়। ২০১৯ সালে ৩ মিলিয়ন মানুষের মাঝে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের ঘরে পোষা কুকুর রয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ২৪ ভাগ মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত কমে গেছে।

এসব কিছুর মূল কারণ হল যখন একজন ব্যক্তি কোন পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটায়, লালন পালন করে তখন তার মধ্যে সকল ধরণের মানসিক অস্থিরতা হ্রাস পায়। ইতিবাচক মানসিক পরিবর্তন আসে এবং মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। মানসিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অস্থিরতা, অবসাদ, বিষণ্ণতা এগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে, হজম শক্তি নষ্ট করে দেয়, তথা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পথে বাধা সৃষ্টি করে। আর পোষা প্রাণী এই ক্ষতির হাত থেকে তার মালিককে রক্ষা করে। সামাজিক সম্পর্কেও উন্নয়ন ঘটায়। যারা ঘরে পোষা প্রাণী রাখেন তারা অন্যান্যদের তুলনায় অধিক মিশুক এবং মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হয়ে থাকেন। যা আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকায় এটা তাদের শরীরের উপরেও প্রভাব ফেলে। এতে তারা শারীরিকভাবেও সুস্থ জীবন যাপন করার সুযোগ পায়।

অনেক ক্ষেত্রেই মনে করা হয় যে, ঘরে পোষা প্রাণী থাকলে সেটি হয়তো আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে ওঠে। কিন্তু সঠিক লালন পালন ব্যবস্থা এবং তত্ত্বাবধান থাকলে এমন ঝুঁকি কখনোই সৃষ্টি হয়না। মানসিক স্বাস্থ্যের ইতিবাচক পরিবর্তন এবং মানসিকভাবে সুস্থ ও সুন্দর জীবন পেতে আমাদের সবার উচিৎ সবার প্রতি সহানুভূতিশীল ও মানবিক হওয়া যা পোষা প্রাণীর মাধ্যমে বেশ সহজেই সম্ভব। বাসায় কোন পোষা প্রাণী থাকলে সেটি পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ ভাবে আমাদের মানসিক চাপ হ্রাস করে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে যা আমাদের শরীরকেও সুস্থ রাখে এবং আমাদের ইমিউনো সিস্টেমকেও চাঙা করে। তাই এই মহামারী কালীন সময়ে মানসিক চাপ কমাতে এবং মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে ঘরে একটি পোষা প্রাণী রাখার পরিকল্পনা করা যেতেই পারে।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleপারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস একটি সুন্দর সম্পর্কের ভিত্তি
Next articleযৌন জীবনের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে করোনাকালীন সময়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here