চিন্তাভাবনা, চলাফেরা, আচার-আচরণ সবকিছুতেই মানুষ একে অপরের থেকে আলাদা। তবুও মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে গড়ে তোলে সম্পর্ক, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র।
মানুষের এত ভিন্নতার মধ্যেও একে অপরের সঙ্গে সর্ম্পকে জড়ায়। তবে এই সর্ম্পকের ধরণ আবার নানান রকম। যেমন- মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদি।
পারিবারিক সর্ম্পক ছাড়া অন্য সর্ম্পকগুলো মানুষকে আয়ত্ত করতে হয়। কারণ দুজন আলাদা মানুষের মধ্যে পছন্দের পার্থক্য থাকবেই। থাকতে পারে মতবিরোধও। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, মতবিরোধ যেন ঝগড়ার পর্যায়ে না যায়। সর্ম্পকের দূরত্ব ঘুচে গেলে অনেক মতবিরোধেরই অবসান হয়। সুতরাং বলা যায়, একজনের অপরজনকে জানা জরুরি।
একসাথে চলার সঙ্গী এবং নতুন জীবন নিয়ে প্রায় প্রতিটি মানুষের মনেই থাকে বাহারি স্বপ্ন। তবে কিছুদিন যাবার পর অনেক সময়ই দেখা যায়, সঙ্গীর সঙ্গে নানা বিষয়ে পছন্দ বা মতের পার্থক্য। বিয়ের আগে থেকেই বা একসঙ্গে পথ চলতে শুরু করার পর দেখা যায় বিভিন্ন অমিল।
ভিন্ন চিন্তাভাবনার দুটি মানুষ নতুন জীবন শুরু করার পর দ্বন্দ্ব হওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে দুজনের মধ্যে যদি পছন্দ-অপছন্দের পার্থক্য বেশি হয়। আর পার্থক্য হতেই পারে, কারণ দুজনই পূর্ণাঙ্গ মানুষ। এমন ক্ষেত্রে অযথা উদ্বিগ্ন না হয়ে বা মন খারাপ না করে একটু সময় দিন। ধীরে ধীরে সব ঠিকও হয়ে যেতে পারে। কেননা কিছু বিষয়ে জোরাজুরি বা বলপ্রয়োগ চলে না।
প্রতিটি মানুষই বেড়ে ওঠে নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও মতামত নিয়ে। এই ব্যক্তিত্বই আকর্ষণ করে একে অপরকে। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের জন্যেই ভালোবাসার সর্ম্পক তৈরি হয়। আর এই নিজস্বতা বাদ দিলে মানুষের অস্তিত্বই থাকে না। যার যার স্বাতন্ত্র্যকে যতটা সম্ভব মেনে নেওয়া উচিত।
নারী-পুরুষ উভয়কেই মনে রাখতে হবে, একজন মানুষের সবকিছুই ভালো লাগবে না। ভালোমন্দ মিলিয়েই তো একজন মানুষ। তার মানে কিন্তু এই নয় যে নিজের পছন্দ-অপছন্দ বিসর্জন দিতে হবে। নতুন সর্ম্পক তৈরির প্রধান শর্তই হলো পছন্দের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং একজনের পছন্দ অন্যজনের ওপর চাপিয়ে না দেওয়া।
দুজন মানুষের মধ্যে যদি একজন সেটা না বোঝেন, তা হলে অপরজনকে একটু কৌশলী হতে হবে। যেকোনো একজনকে এমন দায়িত্ব নিতেই হবে। তাহলেই সর্ম্পক পূর্ণতা পাবে। সবচেয়ে বেশি সর্তক থাকতে হবে এই বিষয়ে যে মানুষটিকে বদলে ফেলার চেষ্টা করা যাবে না। এটি মস্ত বড় ভুল হতে পারে।
পরস্পর একে অপরের মতামতের গুরুত্ব দিন। ভুল মতামত দিলেও সরাসরি বলা উচিত নয়। যুক্তি দিয়ে ভালোভাবে বোঝানো উচিত আপনার কাছে কোনটা ভুল বা ঠিক। পক্ষান্তরে তার যুক্তিও জানতে হবে। বিশেষ করে কোনো পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সঙ্গীর মতামত নিন। এভাবে যদি একজন আরেকজনের পছন্দ-অপছন্দ মেনে চলা যায়, মতামতের গুরুত্ব দেওয়া যায়, তাহলে সর্ম্পক আরও সহজ ও সুন্দর হবে।
কোনো বিষয়ে যদি পরস্পর একমত হতে না পারেন তাহলে যেকোনো একজন তার পছন্দকে ছাড় দিতে পারেন। বড় কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছাড়া ছোট ছোট কাজ বা শখ পূরণে একে অপরকে ছাড় দেওয়া উচিত। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো একসঙ্গে নিতে হবে।
নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পছন্দ-অপছন্দগুলো জোর করে সঙ্গীর ওপর চাপাবেন না। এমনকি খাওয়া-দাওয়া, জামা-কাপড়, বেড়াতে যাওয়া, এসব সিদ্ধান্ত সব সময় দুজন আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিন। তাহলে দুজনের মতামতই গুরুত্ব পাবে। একজন হুকুম করছেন, অন্যজন সেই হুকুম মেনে চলছেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে না।
সঙ্গী যদি প্রাধান্য তৈরির চেষ্টা করেন, তাহলে তার সঙ্গে বির্তকে না গিয়ে আলোচনা করুন। প্রয়োজনে শর্ত সাপেক্ষে, ব্যক্তিগত চুক্তিও করে নিতে পারেন। যার মাধ্যমে একে অপরের কথা মেনে চলার এবং নিজের স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ তৈরি হবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে