বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীদের মনোজগৎ

0
300
বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীদের মনোজগৎ

যখন একজন মেয়ে শিশু দেহে ও মনে বড় হতে থাকে, পরিবার এবং সমাজ থেকে আলাদা কিছু নিয়ম আর উপদেশ তাঁর উপরে আরোপ করা হয়। কিন্তু সে দেখে তার বয়সী একটি ছেলের জন্য সেই নিয়ম আর উপদেশ নেই, তখন এই বৈষম্যমূলক ‘নিয়ম মানার নির্দেশ’-তার মনোজগৎ এর উপর এক বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলে।

এদিকে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীদের যে শারীরিক পরিবর্তন হয় যেমন স্তন স্ফীত হওয়া, রজঃস্রাব বা মাসিক শুরু হওয়া ইত্যাদি নিয়ে সে ব্রিবত থাকে, লজ্জা পায় এবং নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। অনেক সময় পরিবার ও আশেপাশের মানুষের আচরণ তাকে গুটিয়ে থাকতে বাধ্য করে।

মাসিক বা রজঃস্রাব নিয়ে অনেক মিথ বা কুসংস্কার রয়েছে। যদিও মাসিক বা রজঃস্রাব নারীর একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া কিন্তু মাসিক নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কার থাকার কারনে অনেকেই মাসিককে অন্য চোখে দেখে থাকেন। মাসিকের সময় মনে করা হয় যে নারীর মধ্যে বিশেষ কোন অসুবিধা তৈরি হয়েছে, এটা একটি অসুখ। এই সময় কিশোরীদের মধ্যে নানা ধরনের মানসিক চাপ দেখা দেয়।

একজন কিশোরী যখন তার মাসিকের দিনগুলো পার করে তখন কেবল মা নন, বাবাকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয়। বিষয়টিকে এড়িয়ে না যেয়ে, গোপন না করে প্রয়োজনে মেয়ের যত্নে বাবাকেও ভূমিকা  রাখতে হবে। তিনি এসময় সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করবেন, বিষয়টি নিয়ে যে লজ্জ্বা পাবার কোনো কারণ নেই তা ব্যাখা করবেন। এসময় মেয়েদের আবেগের উঠানামা করতে পারে। বিষয়টি বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের বুঝতে হবে।

হরমোনের পরিবর্তনের কারনে এই সময়ে কিশোরীদের মধ্যে আবেগের বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। সে অতিরিক্ত আবেগ প্রবণ হয়ে পড়তে পারে, খেয়ালি হয়ে উঠতে পারে, মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে ইত্যাদি। প্রায়শঃ তাই সে বড়দের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়তে পারে, বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে, নিজের ক্ষতি কর।র মত আচরণ করতে পারে যেমন হাত কাটা, নিজেকে আঘাত করা, নিজের শরীরে আগুনের ছ্যাকা দেওয়া ইত্যাদি। এমনকি এই সময়ে সে আত্মহত্যার চিন্তা ও আত্মহত্যা করার ঝুঁকিতে থাকে।

বয়ঃসন্ধিকালে একজন কিশোরী বেশ কিছু সামাজিক নিয়ম কানুনের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ে। এই সময় সে যেমন ছোটদের সাথে মিশতে পারেনা আবার বড়দের আসরেও সমাদৃত হয়না। অনেক সময় পরিবার তাঁর চলাফেরায় বিধিনিষেধ দিয়ে দেয় যেমন- একা একা চলাফেরা করা যাবে না, একা একা ছাদে যাওয়া যাবে না, বাইরে যাওয়া যাবে না ইত্যাদি। অনেক সময় সে পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু বা অন্য কারো দ্বারা উত্যক্তের শিকার হয় – এমনকি ধর্ষণের মত ঘটনার শিকার ও হতে পারে। এগুলোই তার মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বা চরম মানসিক চাপ তৈরি করে।

মনে রাখা জরুরী যে এই বিষয়গুলো একজন কিশোরীকে মানসিক সমস্যায় ফেলতে পারে । একটি গবেষণায় দেখা গেছে সারা পৃথিবীতে যত ধরনের মানসিক রোগ হয় তার ৫০ শতাংশ ১৪ বছর বয়সের আগে আর ৭৫ শতাংশ, ২৫ বছর বয়সের আগে শুরু হয়। একারণে কিশোরী আর তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ
সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

 

Previous articleঅতিরিক্ত দুশ্চিন্তা দূর করবেন যেভাবে
Next articleবেঁচে থাকাটাই আনন্দের- Cast away

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here