অমুকের কোনো ব্যক্তিত্ব নেই, তমুক সাংঘাতিক ব্যক্তিত্ববান লোক-এমন আলোচনা লোকমুখে প্রায়শই শোনা যায়। লোকমুখে এই কথাগুলো প্রায়শই শোনা গেলেও ব্যক্তিত্ব আসলে এক একজন মানুষের চরিত্রের এমন একধরনের বহিঃপ্রকাশ যা তাকে অন্য মানুষজন থেকে আলাদা করে দেয়।
মানুষের পোষাক-পরিচ্ছদ, কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, মূল্যবোধ, বুদ্ধিমত্তা, নিজের সম্পর্কে ধারণা, অন্যকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা, অন্যদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা ইত্যাদি গুণাবলীর সামষ্টিক রূপই হলো ব্যক্তিত্ব।
উপযুক্ত ব্যক্তিত্ব যেমন মানুষকে সম্মান এনে দেয় ঠিক তেমনি ব্যক্তিত্বের এক বা একাধিক গুণাবলীর অস্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ সমস্যারও সৃষ্টি করে। সমস্যা যখন গ্রহণযোগ্যতার বাইরে চলে যায় তখনই ব্যক্তিত্বে র সমস্যা নামক অসুখের সৃষ্টি হয় যার প্রভাব সামগ্রিকভাবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, পেশাসহ সবকিছুর ওপর পড়ে।
ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্ত একজন ব্যক্তি অন্যান্যদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না। বাধার সম্মুখীন হয়। তাই তারা পরিবারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, সমাজে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়।
যার পরিণতিতে দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, সন্দেহবাতিকগ্রস্ততাসহ বিভিন্ন মানসিক অসুখে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় নিজেকে আঘাত করা, অন্যকে অবজ্ঞা করা, অপরাধমূলক কাজ করা, মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়া, এমনকি আত্মহত্যার মতো জীবন হননকারী কর্মকান্ডেও লিপ্ত হয়।
ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্ত একজন সদস্য নিজের এবং পরিবারের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় সে কারোর উপদেশ-অনুরোধ মানে না, কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনাও করে না। প্রায়ই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে, বেশি বেশি চাহিদা দেখায়। তাই পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে সবসময় আতঙ্কিত থাকে। তার কর্মকান্ডে বিব্রতবোধ করে। তার আচরণে বা কর্মকান্ডে আশপাশের লোকজনের অভিযোগেও অতিষ্ঠ হতে হয়।
ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির নৈতিক বা মানবিক মূল্যবোধ থাকে না। তাই মারামারি, চুরি, ছিনতাই, খুন, ইভটিজিং, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকান্ড তার কাছে নিত্যনৈমত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়। ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্ত একজন ব্যক্তি অন্যের উপকার তো দূরের কথা, নিজের জন্যও কিছুই করতে পারে না।
তাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে সে আপদ বলেই বিবেচিত হয়। সবকিছুরই গ্রহণ যোগ্যতার একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠি থাকে। সমস্যা মানেই সেই মাপকাঠি অতিক্রান্ত হওয়া।
ব্যক্তিত্বের সমস্যা মানেই তার কর্মকান্ড গ্রহণযোগ্যতার বাইরে চলে গেছে। কাজেই ব্যক্তিত্বের সমস্যা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা অনেকটা ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি’-এর মতো। সে শাস্তিকে ভয় পায় না, সমালোচনাকে তোয়াক্কা করে না, উপদেশকে গুরুত্ব দেয় না। তার মধ্যে নৈতিকতা বা মানবিকতা তৈরি হয় না। তাই তার চিকিৎসা করা খুব সহজ কাজ নয়। তবুও নিরাশ হলে চলবে না। আসুন, আমরা আশায় বুক বেঁধে রোগী, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে তার ব্যক্তিত্বের সমস্যার কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে চিকিৎসার সর্বাত্মক চেষ্টা করি।
সূত্র: মনের খবর, মাসিক ম্যাগাজিন, ২য় বর্ষ, ১ম সংখ্যায় প্রকাশিত