প্রায় সব বয়সের মানুষই বিষণ্ণতার মত মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারে। অনেক সময় মনের মধ্যে পুষে রাখা রাগ বা ক্ষোভ থেকে সৃষ্টি হতে পারে এই বিষণ্ণতা।
মানুষের বিষণ্ণ হওয়ার পেছনে সব সময়ই কোন আকস্মিক ও বিপত্তিকর ঘটনা জড়িয়ে থাকে। হতে পারে সেটি কোন মহামারীর মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক সমস্যা যে সমস্যার সমাধান করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আবার বিষণ্ণতা হতে পারে কারও প্রতি মনের মাঝে জমে থাকা বহু পুরাতন কোন রাগ বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যা তার মনে নেতিবাচক প্রভাব রেখে গেছে। যেমন, ধরুন কোন ছোট্ট শিশু কোন কাজে অস্বীকৃতি জানালো। এমন সময় তার পিতা বা মাতা তাকে সজোরে এক চড় দিয়ে বসলো।
তিনি ভাবলেন চড় দিলে তার শিশু সেই কাজে স্বীকৃতি জানাবে এবং এটাই তাকে দিয়ে ঐ কাজ করানোর সব থেকে ভালো উপায়। শিশুটি হয়তো সেই কাজটি করলো কিন্তু তার মনের মাঝে তার অভিভাবকের উপর তৈরি হল অসম্ভব রকম রাগ। শিশুর সাথে প্রতিনিয়ত অভিভাবকের এমন ব্যবহার সহ্য করেই সে বড় হয়। কিন্তু তার মনের মাঝে জমে থাকা পাহাড় সমান রাগ। আর এই রাগ থেকে তার জীবনে নেমে আসে চরম বিষণ্ণতা। তার মনে এই প্রশ্ন সারা জীবন থেকে যায় যে কেন তার পিতা-মাতা তার মনের কথা কখনো জানতে বা বুঝতে চায়নি। কেন শুধু তাকেই দোষারোপ করা হয়েছে। কেন তার সমস্যাগুলো জানার বা বোঝার প্রচেষ্টা তারা করেনি। এই রাগ থেকে মনের মাঝে অভিমান এবং বিষণ্ণতার সুবিশাল পাহাড় সৃষ্টি হয় যা তার মানসিক বিকাশে চরম দুস্প্রভাব রেখে যায়।
অব্যক্ত রাগ থেকে মানুষের মাঝে সৃষ্টি হওয়া বিষণ্ণতা তার মনের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক অনুভূতির দ্বন্দ্বের ফলেই সৃষ্টি হয়। এমন বিষণ্ণ ব্যক্তি তার আবেগ এবং অনুভূতিকে সঠিকভাবে প্রকাশে ভীষণ মানসিক দ্বন্দ্বের মাঝে থাকে। যত বেশী সময় অতিবাহিত হয় তাদের মাঝে বেড়ে ওঠা বিষণ্ণতাও আরও খারাপ পর্যায়ে যেতে থাকে। মনের মাঝে চাপা রাগ এই বিষণ্ণতাকে তাদের জীবনে একটি শক্ত পোক্ত অবস্থান করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ করতে না পারার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাদের মাঝে বিষণ্ণতা, কষ্ট, অভিমান প্রভৃতি সৃষ্টি হয়। মানুষের মাঝে মানসিক এই পীড়ার ততক্ষণ কোন নিবারণ করা সম্ভব হয়না যতক্ষণ এর মূল কারণ নির্মূল করা না যায়। এতে মানুষ এক চরম মানসিক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করে এবং অন্যান্যদের সাথে সম্পর্কের উপরেও এর দুস্প্রভাব পড়ে।
যখন কোন ব্যক্তির মাঝে বিষণ্ণতা, হতাশার মত মানসিক সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয় তার উচিৎ এর সঠিক সমাধানের প্রচেষ্টা করা। আর এর সমাধানে প্রথমেই বিষণ্ণতার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আর যখন একজন ব্যক্তির মনের সুপ্ত কোন রাগ তার বিষণ্ণতার কারণ হয় তখন তার জন্য সমাধান খুব সহজ হয়না। অনেকের ক্ষেত্রেই সবার সামনে নিজের সমস্যা বা রাগের কথা তুলে ধরা সহজ হয়না। মনের মাঝে দ্বিধার যে মেঘ জমে থাকে তা খুব সহজে দূর করা সম্ভব হয়না। কিন্তু সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পর সেটি সমাধানে আমরা যদি যথেষ্ট মানসিক শক্তি একত্রিত করে সেটি সমাধানের প্রয়াস করি তাহলে সমাধান অবশ্যই আসবে।
মনে রাখবেন আপনার মানসিক সমস্যা আপনার থেকে ভালো আর কেউ বুঝবেনা এবং এটি সমাধানের প্রয়াস ও আপনি ই সব থেকে ভালো করতে পারবেন। তাই সব ধরণের দ্বিধা ভুলে মনের ভেতরে জমে থাকা রাগ ঝেড়ে ফেলুন। যাদের সাথে আপনার মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাদের সম্মুখীন হন। মনের মাঝে যা যা আছে সব কিছু এক নিশ্বাসে বলে ফেলুন। আপনি বুঝিয়ে বলুন আপনি ঠিক কি চেয়েছেন বা এখন কি চান। সব কিছু প্রকাশ করে দিলে মনের মাঝে জমে থাকা পাহাড় সমান রাগ এবং অভিযোগ এক নিমিষে শেষ হয়ে যাবে এবং আপনি বিষণ্ণতার পরিবর্তে অবশ্যই মনের মাঝে শান্তি অনুভব করতে পারবেন।
আমাদের মন অনেক সময় ছোট কোন পরিস্থিতিকেও বেশ বড় ভেবে নিয়ে অযথা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তাই কারও উপর রাগ করলে আমাদের উচিৎ সেটি চেপে না রেখে বরং প্রকাশ করে দেওয়া। অনেক সময় হয়তো আমরা যেটা ভাবছি সেটা সঠিক নাও হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় বহু দিন ধরে আমরা যে রাগ পুষে আসছি, যে কারণে বিষণ্ণতায় ভুগছি সেটি আমাদের মনের কোন কাল্পনিক ঘটনার বা ভাবনার ফল। তাই মনের ভাব প্রকাশ করার থেকে ভালো কিছু আর হতে পারেনা। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত রাগ এবং সেটি থেকে উৎপন্ন বিষণ্ণতার মত পরবর্তী মানসিক সমস্যা গুলো এড়ানো সম্ভব হবে।
তাই বলা যায়, যে কোন পরিস্থিতিতে নিজের মনের কথা বুঝিয়ে বলা বা অন্যের মনের কথা ধৈর্য সহকারে শোনা রাগ বা বিষণ্ণতার মত অত্যন্ত ঘাতক মানসিক সমস্যা গুলোকে দূরে রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরী এবং মানসিক সুস্থতার জন্য কার্যকরী।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে