বিষণ্ণতা একটি নিরাময়যোগ্য মানসিক রোগ

0
347
ফেইল করার ভয়ে পরীক্ষা দেওয়া বন্ধ করে দিই

[vc_message message_box_style=”solid” style=”square” message_box_color=”black” css=”.vc_custom_1607179468727{border-radius: 35px !important;}”]আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা,দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আমাদের আজকের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন -হামিদুল ইসলাম (ছদ্মনাম)-[/vc_message]
[vc_message message_box_style=”solid” style=”square” message_box_color=”sky” icon_fontawesome=”fas fa-question” css=”.vc_custom_1607179556650{border-radius: 35px !important;}”]আমি চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই আমি একটু খুঁতখুঁতে, কিছুটা চাপা স্বভাবের এবং হস্থমৈথুনের বদ অভ্যাস ছিল। আনন্দ ফুর্তি কম করতাম তবে ক্রিকেট খেলে ভীষণ আনন্দ পেতাম। আমি গণিতে কাঁচা ছিলাম, তবুও নিজের চেষ্টায় এস.এস.সি তে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন ৫ পাই। এইচ.এস.সি দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালীন একটা মেয়ের সাথে আমার প্রেম হয়, সেই আমাকে প্রথম প্রস্তাব দেয়। এমনিতে সে ভাল কিন্তু সব সময় ছোটোখাটো ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া করতো, অনেক ব্যাপারে আমার উপর জোড় করতো । বেশীরভাগ সময় তার রাগ ভাঙ্গাতেই আমি ব্যস্ত থাকতাম, ভালো পড়ালেখা করতে পারিনি। ফলে এইচ.এস.সি তে আমি পদার্থ বিজ্ঞানে ফেল করি। তখন খুব ভেঙ্গে পড়ি কিন্তু দমে যাইনি, আবার প্রস্তুতি নিতে থাকি। প্রায় ৩ বছর আগে হঠাৎ একটা বিষয় নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করি তখন আমার প্রথম প্যানিক এটাক হয়, যদিও তখন এটা বুঝতাম না। এরপর খুব ভয় পেয়ে যাই, প্রায় মাস খানেক লেগেছিল এটা ঠিক হতে, পরে আবার প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, ভালোই চলছিলো দিনগুলো ,পড়ালেখাও চলছিল খুব ভালভাবে। হঠাৎ গত রমজানে (২০১৪) আবার প্যানিক এটাক হয়, তখনও বিষয়টা জানতাম না। এরপর আস্তে আস্তে মাথা ঘুরতো, মৃত্যু ভয় কাজ করতো এবং বর্তমানে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখন সব সময় মাথার তালুতে পিছনে কেমন লাগে, অল্পতেই নার্ভাস হয়ে যাই, বাইরে বের হতেও ভয় লাগে, সব সময় মনে হয় মরে যাব, মাথা ঘুরে পড়ে যাব। স্বাস্থ্যের চরম অবনতি হয়েছে , ভাল ঘুম হয় না। যদিও আমি কবিরাজ ফকিরদের বিশ্বাস করি না তার পরও মা এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়, সে বলে মেয়ে পক্ষের কেউ আমাকে বাণ মেরেছে। আমি আমার প্রেমিকাকে সব বলেছি। এতো কিছুর পরেও ও আমার সাথে আছে, ব্যাপারটা ও শুনে খুবই মর্মাহত হয়েছে। এদিকে আমার মাথায় বিভিন্ন রকম দ্বন্দ্ব হয়, একই চিন্তা বার বার আসে, সব কিছু কেমন অদ্ভুত মনে হয়, মনে হয় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি বাবা মা’র একমাত্র ছেলে, আমাদের আর্থিক অবস্থাও ভাল না। আমার বাড়ি নওগাঁ জেলায়, আমার বয়স ২২ বছর। আমি ভাল হতে চাই। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলে কৃতার্থ থাকবো।[/vc_message][vc_message style=”square” message_box_color=”white” icon_fontawesome=”fas fa-envelope-open-text” css=”.vc_custom_1607223704607{border-radius: 35px !important;}”]সমস্যাগুলি ভালো করে পড়লাম। আস্বস্ত করছি, ভয় পাবার কিছু নেই। ভালোভাবে চিকিৎসা করালে এসব সমস্যা সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যাবে। শুধু কিছুটা সময় লাগবে। লেখাগুলো পড়ে মনে হচ্ছে, প্যানিক এটাক কয়েকবার হলেও বর্তমানে আপনি বিষণ্নতায় ভূগছেন। বিষণ্নতা একটি নিরাময়যোগ্য মানসিক রোগ। তবে অনেকে চিকিৎসার ব্যাপারে অবহেলা করেন, যা একেবারেই উচিত নয়।

কবিরাজের কাছে গেছেন বুঝা গেলো, কিন্তু আগে কখনো ডাক্তারের চিকিৎসা করিয়েছেন কিনা বোঝা গেলনা। যাহোক, বাণ মারা বিষয়টি সত্যি নয়। মনে রাখবেন রোগকে রোগ হিসেবেই দেখতে হবে। রোগ ভালো হবার উপায় সঠিক চিকিৎসা, অন্য কোনোভাবে রোগ ভালো হয়না। ছোটকাল থেকে একটু খুঁতখুঁতে স্বাভাবের ছিলেন। এটাও কোনো সমস্যা নয়, তবে এসবকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে এনজাইটি ট্রেইট বা উদ্বেগজনিত একধরণের ব্যক্তিত্ব। এটা যে রোগের কারণ এমন কোনো কথা নেই। হস্তমৈথু্ন্য সম্বন্ধে গত প্রশ্নউত্তর পর্বে লেখা হয়েছে। বৈজ্ঞানিকভাবে হস্তমৈথন্যও কোনো সমস্যা নয়। বান্ধবীর সাথে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা উচিত। ওর সমস্যাগুলি ভালো করে বুঝে সেমতো চলতে পারলে ভালো হয়। দরকারে তার বিষয়গুলি নিয়েও বিশেষজ্ঞ কারো সাথে কথা বলা যেতে পারে।

আবার ক্রিকেট খেলা ভালো লাগবে, নিজেও খেলা শুরু করবেন। জীবন অনেক সুন্দর। পড়ালেখা আড্ডা, ব্যক্তিগত পারিবারিক সামাজিক এবং ছাত্র জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আনন্দ ফিরে আসবে সেই আশাই করছি।

একটা কথা, উদ্বেগজনিত যেকোনো মানসিক রোগ বা সমস্যার পিছনে থাইরয়েড হরমোনের একটা বড় প্রভাব থাকতে পারে। তাই কোনো একজন বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করে থাইরয়েডের কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটা দেখে নিবেন। যেহেতু চিকিৎসায় একটু সময় লাগবে তাই সরাসরি কোনো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করাটা ভালো হবে। তবে আপাতাত, ক্যপসুল প্রলার্ট (ফ্লুক্সেটিন ২০ মিগ্রা) সকালে একটা করে খাওয়া শুরু করতে পারেন। তবে, সরাসরি চিকিৎসা নেয়াটাই বেশী উপকারী হবে। খুব বেশী খরচও হবেনা, শুধু সময়মতো ফলো করতে হবে। চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজেও সেবা পাওয়া যাবে। জীবনে আনন্দ ফিরিয়ে আনতেই হবে, এমন ইচ্ছা মনে রাখতে হবে।

মনের খবরের সাথেই থাকুন। শুভ কামনায়।[/vc_message]

ইতি,
প্রফেসর ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব

চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক – মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সেকশন মেম্বার – মাস মিডিয়া এন্ড মেন্টাল হেলথ সেকশন অব ‘ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন’।
কোঅর্ডিনেটর – সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট – বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।
সম্পাদক – মনের খবর। চেম্বার তথ্য – ক্লিক করুন

Previous articleমাদকাসক্ত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হওয়ার অধিকতর ঝুঁকিতে
Next articleমহামারীর সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের সহায়ক কৌশল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here