বায়োবাবল কী ক্রিকেটারদের মানসিক স্বাস্থ্যে অবনতি করছে?

0
42

ক্রিকেট খেলাটা যতখানি শারীরিক, ঠিক ততখানিই মানসিক। একজন ক্রিকেটার চোটে পড়লে তার শারীরিকভাবে সেরে ওঠা যতটা জরুরি, মানসিকভাবে সেরে ওঠাও ঠিক ততখানিই জরুরি। অনেক ক্রিকেটারই মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে আর সেখান থেকে কাটিয়ে উঠতে না পেরে ক্রিকেট থেকেই অবসর নিয়ে ফেলেছেন। এই তালিকায় আছেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার মার্কাস ট্রেসকোথিক, জোনাথন ট্রট, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, সারাহ টেলরের মতো তারকারা।

বর্তমানে ক্রিকেটারদের মানসিক স্বাস্থ্য আগের চেয়েও আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ জৈব সুরক্ষা বলয় বা বায়ো-বাবল। করোনা বিশ্বের বুকে এখনো নিজের প্রতাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটারদের এই ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখার জন্য বায়ো-বাবল এর ব্যবস্থা করেছে সব দেশের ক্রিকেট বোর্ড। এতে ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে নিজেদের চাঙ্গা রাখতে পারছেন না।

বর্তমানের ক্রিকেটারদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান তারকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল থেকে শুরু করে ইংলিশ অল রাউন্ডার বেন স্টোকসও মানসিক অবসাদের কারণে ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম নিচ্ছেন। অনেকে জৈব সুরক্ষা বলয় সহ্য করতে না পেরে হুটহাট ক্রিকেট থেকে সরে গিয়ে নিজের পরিবারে আশ্রয় নিচ্ছেন।

ক্রিকেটারদের নিত্যসঙ্গী বায়ো সিকিউর বাবল কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে ফেলছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের সুপারস্টার সাকিব আল হাসান কথা বলেছিলেন। আইপিএল খেলতে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনের সময় একা একটা রুমে নিজেকে বন্দি রাখা সাকিব সে সময়ের অনুভূতি নিয়ে বলেন, ‘ঘরবন্দি থেকে একবার প্রচণ্ড রকম অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তারপর একটু রিকভারি শুরু হয়েছে। খুব বাজে রকমের ডিপ্রেশন ছিল, আমার আগে কখনও এরকম হয়নি। একটা পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে, লোকে যে আত্মহত্যা করে ডিপ্রেশনে, কেন করে, সেটা বুঝতে পেরেছি আমি। এতটাই বাজে অবস্থা হয়েছিল।’

ক্রিকেটারদের বায়ো-বাবলে থেকে মানসিক অশান্তিতে থাকা নিয়ে ভারতের সাবেক মেন্টাল কন্ডিশনিং কোচ প্যাডি আপটন বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন বায়ো বাবলে থাকার কারণে খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। কিছু কিছু সমস্যা হয়তো প্রতিরোধ করা যাবে। কিন্তু আমার মনে হয় না আমরা এই বিষয়ে যথেষ্ট কাজ করছি। হয়তো খেলোয়াড়দের কারো খারাপ কিছু হয়ে যাবার পর আমাদের টনক নড়বে।’

ক্রিকেটারদের মানসিক সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে মনোবিদ নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করেছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ছেলেদের ক্রিকেটে এই দায়িত্ব পালন করবেন মনোবিদ মাইকেল লয়েড। আর মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য দেখভাল করবেন মনোবিদ পিটার ক্লার্ক। কিন্তু উপমহাদেশে বিষয়টা এখনো অনেকটা ট্যাবুর মতো। এ নিয়ে ভারতের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান শ্রীবৎস গোস্বামী একটা টুইট করেন। যেখানে তিনি বলতে চেয়েছেন, এখানে কেউ ‘লোকে কী বলবে’ এই ভয়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলে না। কেউ বলতে পারে না যে সে অবসাদগ্রস্ত, পাছে কেউ তাকে দুর্বল মানসিকতার লোক ভেবে না বসে। আর মানুষের ট্রলিং তো আছেই।

কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা যে ভীষণ প্রয়োজনীয় এটা বলার চেষ্টা করছেন সদ্য সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এই তারকা ক্রিকেটার বলেন, ‘দলের সঙ্গে এমন কাউকে দরকার যাকে মানসিক সমস্যার কথাটা খুলে বলা যাবে। এক্ষেত্রে পেশাদার কারও সাহায্য অবশ্যই প্রয়োজন।’

এদিকে প্যাডি আপটন মনে করছেন, কেবল ক্রিকেট বোর্ডগুলো নয়, আইসিসিরও উচিৎ এই বিষয়ে এগিয়ে আসা। এর জন্য নিয়ে নিজের মতামতে আপটন বলেন, ‘আমি এখনো শুনিনি আইসিসি ক্রিকেটারদের থেকে বায়ো-বাবলের ব্যাপারে ফিডব্যাক নিয়েছে। তাদের উচিৎ ক্রিকেটারদের সাথে কথা বলে এমন একটা উপায় খুঁজে বের করা। যাতে তাদের মানসিক ক্লান্তি কমিয়ে আনা যায়।’

অর্থাৎ, ক্রিকেটারদের শারীরিকের পাশাপাশি আমাদের মানসিক দিকগুলোতেও সমান নজর দেওয়া উচিৎ। এর ব্যত্যয় ঘটলে মাঠের ক্রিকেটে বাজে প্রভাব পড়তে পারে। ক্রিকেটারদের নিজেদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে, এর সমাধানের জন্য। একইভাবে ক্রিকেট বোর্ডগুলোকেও আরও উদ্যোগী হতে হবে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর এই সময়ে বায়ো-বাবল নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিৎ আইসিসি থেকে শুরু করে সবাইকে।

লিখেছেনঃ কামরুল ইসলাম ইমন

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous articleঅতিরিক্ত সেক্সের প্রতি আগ্রহ কী কোনো সমস্যা?
Next articleঅভিবাসন এবং মানসিক স্বাস্থ্য

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here