বিভিন্ন সময় সঙ্গীর করা বিভিন্ন কাজ বা বলা বিভিন্ন কথা কিংবা না করা কোন কাজ বা না বলা কোন কথা অপর জনের মনঃকষ্ট বা অসন্তোষের জন্ম দেয়। যা দুজনার মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি করে। এই সমস্যা দূর না হলে সম্পর্কে তিক্ততা বৃদ্ধি পায়।
আমরা চাই আমাদের চারপাশের পরিবেশ, আমাদের কাছের মানুষ সব কিছু আমাদের মন মত হবে। ঠিক সব কিছু সেরকম ভাবেই ঘটবে যেটি আমাদের মনকে শান্তি দেবে। আমাদের মতের সাথে মিল হলেই আমাদের মনের মিল তার সাথে হবে। এর ব্যত্যয় হলেই ছন্দ পতন হয়, মানসিক অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়। আর সময়ের সাথে সাথে দাম্পত্য জীবনে ধীরে ধীরে হতাশা, তিক্ততা, এবং সম্পর্কে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। এগুলো মানসিক চাপ এবং জীবনে অশান্তির সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক ভাবেই আমরা কেউই অশান্তির মধ্যে থাকতে চাইনা। ফলে সম্পর্কে বাজে ভাঙ্গনের সুর। তাই দাম্পত্য জীবনে এমন অসন্তোষ দূর করতে না পারলে সম্পর্ক কখনোই মজবুত হবেনা।
একজন মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কখনোই সম্পূর্ণরূপে আরেক জন মানুষের সাথে মিলবেনা এবং একজন মানুষের মাঝে যেমন ভালো গুণ থাকবে তেমনি খারাপ গুণ ও থাকবে। দুজন মানুষ যখন দাম্পত্য বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন ভাল-মন্দ উভয় গুণ এবং মতভেদকে মেনে নিয়েই একসাথে চলার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কখনোই এমন ভেবে নেওয়া উচিৎ নয় যে সর্বদা এক জনের সাথে অপর জনের মনের এবং মতের মিল হবে আর মতের অমিল হলেই অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হবে। দাম্পত্য জীবনে সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে থাকার মানসিকতা বজায় রেখে চলতে হয়। কখনো কোন খারাপ অনুভূতি যেন অন্যান্য ভালো লাগা এবং ভালবাসার অনুভূতি গুলোকে ভুলিয়ে না দেয় সেদিকে উভয়েরই খেয়াল রাখতে হবে। একে অপরের সুখ দুঃখের সাথী হয়ে একে অপরকে ভালো রাখার প্রয়াস করতে হবে। সম্পর্কের যত্ন নিতে হবে।
মতের অমিল এবং মানসিক অসন্তুষ্টি দাম্পত্য জীবনের সব থেকে জটিল এবং প্রচলিত সমস্যা। যখন একজন সঙ্গী অপর জনকে নিয়ে মানসিক অসন্তোষের মাঝে থাকে বা ভুল বোঝা বুঝির সৃষ্টি হয় তখন সেটিকে একে অপরের উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস করে। একে অপরকে দোষারোপ করে এবং নিজদেরকে সঠিক প্রমাণের প্রয়াস করে। একে অপরের সঙ্গী কম বরং প্রতিদ্বন্দ্বী বানিয়ে ফেলে। কিন্তু এটা ভুলে যায় যে পারস্পরিক সম্প্রীতি, সৌহার্দ, বোঝাপড়া এবং মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থেকেই একে অপরের পরিপূরক হওয়া যায়। একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে কখনোই একে অপরের পরিপূরক হওয়া সম্ভব নয়। দাম্পত্য জীবন ঠিক একটি গাড়ির মত যেখানে একটি চাকা নষ্ট হলে বা না চললে অপর চাকাটি সম্পূর্ণ গাড়িকে এগিয়ে নিতে অসমর্থ। দুজনের সহনশীলতা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়াই দাম্পত্য জীবনকে পরিপূর্ণ করতে পারে। তাই ভালো মন্দের উপরে উঠে একে অপরের মানসিক অবস্থাকে মেনে নিতে হবে এবং একে অপরের অসম্পূর্ণতাকে তুলে না ধরে বরং একে অপরকে পূর্ণ করতে হবে।
দাম্পত্য জীবনে মানসিক শান্তি বজায় রাখআর মূল মন্ত্র হল এটা মনে রাখা যে, কেউই নিখুঁত হয়না। আপনি নিখুঁত নন, এবং, অবশ্যই, আপনার সঙ্গীও একইভাবে নিখুঁত নন। যদি একদম নিখুঁত মানুষ খুঁজে পেতে হয় তবে সেটি গল্প বা চলচিত্রের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব, বাস্তব জীবনে নয়। সবারই নির্দিষ্ট সহ্য শক্তি, সামর্থ্য এবং দুর্বলতা রয়েছে। বাস্তব ধর্মী সম্পর্ক মানে নিজেকে এবং নিজের সঙ্গীকে ঠিক যে যেমন আছে তেমন ভাবেই মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়া। আর এটিই দাম্পত্য জীবনে সুখী হবার মূল মন্ত্র।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে