প্রযুক্তির এক বড় উপহার বর্তমানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। এটি এখন আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। বৃহৎ থেকে বৃহত্তর দূরত্ব এই মাধ্যমে কমে আসছে নিমিষেই! দূরে থাকা আপনজনকে দেখতে পাওয়ার জন্য আছে মেসেঞ্জারে ভিডিও কল, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার কিংবা স্কাইপ। অনবরত চ্যাটিংয়ের জন্যও রয়েছে জানা-অজানা আরও অনেক যোগাযোগ মাধ্যম।
যারা পরিবার ছেড়ে কাজের বা পড়াশোনার জন্য দূরে থাকছেন, তাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা একরকম অক্সিজেনের মতোই প্রয়োজনীয়। দিন শেষে একবার স্বজনদের দেখতে পাবার জন্য বা তাদের খোঁজ নেবার জন্য এছাড়া আর যে কোনো উপায়ই নেই।
কিন্তু এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কি কেবলই আশীর্বাদ, নাকি এর সাথেও জড়িয়ে আছে কোনো অপকারিতা? এর ফলে আমাদের অজান্তেই কি কোনো খারাপ প্রভাব পড়ছে? দাম্পত্যজীবনের মতো অনুভূতিপ্রবণ সম্পর্কে এর প্রভাবই বা কতখানি? এ নিয়েই থাকছে পাঠকদের জন্য আমাদের আজকের এই আয়োজন।
দাম্পত্যজীবনে খুবই সাধারণ কিছু সমস্যা হলো অপর্যাপ্ত সময়, বন্ধুবান্ধবকে সময় দেয়া, অফিসের কাজ বাসায় নিয়ে আসা ইত্যাদি। এমন নাজুক একটি সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিভিন্নভাবে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চলুন দেখা যাক সাধারণ কিছু অভিযোগ।
“তুমি ফেসবুকে অনেক বেশি সময় কাটাও”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফেসবুক। সারাদিন ক্লাস, কাজ বা অফিসের ফাঁকে, ঘুমাতে যাবার আগে অথবা ঘুম থেকে উঠেও কখনও প্রথম কাজটাই হয় নিউজফিড একবার চেক করে দেখা। ‘Computer in Human Behavior’ এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডিভোর্সের সাথে ফেসবুকের বেশ নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ২.১৮%-৪.৩২% বিয়েতে ছাড়াছাড়ি হবার পিছনে ফেসবুকের অত্যধিক ব্যবহারই দায়ী। এ গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন, তারা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দম্পতির চেয়ে ১১% বেশি সুখী হয়ে থাকেন।
সন্দেহ, ঈর্ষা, লুকোচুরি
অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দাম্পত্য জীবনে সন্দেহের হার বাড়ায়। লুকিয়ে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ফোন চেক করা, মেসেজ চেক করা, এমনকি অফিসিয়াল মেইলগুলো চেক করার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। অনেক দম্পতিই একজন আরেকজনের সাথে মন খুলে কথা বলতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে তারা একাই এই বিষয়গুলো নিয়ে ভুক্তভোগী হন।
কেউ কেউ বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকেন। সবসময় পরামর্শের ফলাফল ভালো হয় না। তাই অনেক দম্পতিই টিকে থাকতে পারেন না অথবা শুধুমাত্র সামাজিকতা রক্ষার খাতিরে একসঙ্গে অসুখী হয়েও বসবাস করে থাকেন।
অস্বচ্ছতা
দুর্ভাগ্যবশত অনেকেই তার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কাছে খুব কাছের বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু বা বান্ধবীর কথা গোপন করে যান। যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা যোগাযোগ রাখলেও মেসেজ বা ফোনকল এর লিস্ট বাসায় পৌঁছানোর আগেই মুছে ফেলেন। কখনও হঠাৎ করেই সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সামনে বেজে ওঠে মুঠোফোন এবং ভেসে ওঠে অনাকাঙ্ক্ষিত নামটি। এটা নিয়েই এককথা- দু’কথায় পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। অথচ হয়ত তারা শুধু খুব ভালো বন্ধুই ছিলেন। এমন একটা সম্পর্কের কারণেও ভেঙ্গে যায় সংসার অথবা প্রশ্ন ওঠে যেকোনো একজনকে বেছে নেয়ার।
স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার অনেকের কাছে এখন অন্যান্য কাজের চেয়েও জরুরি হয়ে পড়েছে। এক দুই মিনিট পর পর ফেসবুকের নিউজফিড চেক করা, ইন্সট্রাগ্রামে আপলোড করার জন্য রোজ ছবি তোলা, ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করা, এমনকি পত্রিকা পড়ে খোঁজ নেয়ার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো খবর নেয়াটা বেশি বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
এই বিষয়গুলো অপরজনের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়। বারবার এভাবে কারণে-অকারণে ফোনের কাছে ছুটে যাওয়াটা দৃষ্টিকটু এবং সন্দেহজনক হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনেকেই রাত জেগে ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপে বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন। এই ব্যাপারটি যখন কোনো একটা সময় সঙ্গী বা সঙ্গিনীর চোখে পড়ে তখন তার সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে পাসওয়ার্ডের মতো ব্যক্তিগত জিনিস তার হাতে তুলে দেয়া ছাড়া আর কোনো গতি থাকে না।
এরপরেও ঘটনা শেষ হয় না। যখনই মনে একটু সন্দেহ উঁকি দেয় তখন অপরজনের ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা ভাইবারে একটা ঢুঁ মেরে আসাই হয়ে যায় নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। এসবের ভিড়ে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়।