প্রতি মুহূর্তেই ব্যস্ততা। স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, টেনশন, রোগব্যাধিও নিত্যসঙ্গী। এর থেকে মুক্তির উপায় কী? কীভাবে ফিট রাখবেন নিজেকে, রইল তারই সন্ধান।
মেয়েদের জন্য যে কোনও বয়সেই পায়ের ব্যথা গুরুতর সমস্যা। মেয়েদের লোয়ার পার্ট অর্থাৎ কোমরের নিচ থেকে পা পর্যন্ত দুর্বল হয়। তার কারণ বেশির ভাগেরই ওপরের অংশ মেয়েদের খুব ভারী হয়।
মেয়েদের শরীরে ফ্যাট টিস্যু বেশি থাকে ও মাসকুলার লেয়ার বা মাস্ল টিস্যুগুলো খুব পাতলা হয়। ফলে সহজেই মেদ বাড়ে।
বাচ্চা হওয়ার পর অনেকেরই অস্বাভাবিক ওজন বেড়ে যায়, পেট, কোমরের মেদ বেড়ে যায় আর ক্রমাগত পা ও হাঁটুতে চাপ পড়তে থাকে, হাড় ক্ষয় হতে থাকে।
দুধ, ছানা জাতীয় ক্যালশিয়াম কম খাওয়ার ফলে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হয়। হাড় পাতলা হতে থাকে, যাকে বলে অস্টিওপেনিয়া। পরবর্তীকালে এটাই অস্টিওপোরোসিস হয়ে যায় অর্থাৎ হাড় ক্ষয় শুরু হয়।
পায়ের ব্যথা কমানোর জন্য রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হওয়া জরুরি। রক্ত চলাচল কম হলে দূষিত রক্ত জমে থাকে নিচের দিকে ফলে পায়ের যন্ত্রণা বাড়ে।
শোয়ার সময় পায়ের তলায় বালিশ দিয়ে শুলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়, সমস্যা অনেক কমে।
এক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার দিকেও নজর দিতে হবে। মাটির তলার জিনিস- আলু, মুলো, গাজর, কচু কম খেলে ভাল। হড়হড়ে খাদ্য যেমন- ঢেঁড়স, বিউলির ডাল কম খাওয়া উচিত।
যাদের পায়ে ব্যথা রয়েছে, তারা লাউ, পটল, ফুলকপি খেতে পারেন।
এক জায়গায় একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করলেও হাঁটু ও পায়ে, গোড়ালিতে যন্ত্রণা হয়। এইসব কিছু সহজ সমাধান হল যোগাসন। যোগ থেরাপি লুব্রিক্যান্টের কাজ করে। জয়েন্ট স্টিফ হতে দেয় না, মোবিলিটি বাড়ায়।
একপদ শলভাসন
উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। দু’টো হাত থাইয়ের নিচে হাতের তালু মাটির দিকে উপুড় করে রাখুন। কোনও একটা পা টানটান করে উপরে তুলুন। দশ গুনে নামান। এবার অন্য পা-টা তুলুন। দশ গুনে নামিয়ে নিন। তিনটা সেট করুন।
কোয়াড্রিসেপ ড্রিল
সোজা হয়ে বসে হাঁটু ভিতর দিকে টানুন ছাড়ুন। এইভাবে দশবার করুন। পরের ধাপে হাঁটু টেনে ভিতর দিকে নিয়ে ধরে রাখুন কিছুক্ষণ, তারপর ছাড়ুন।
স্বল্প মহামুদ্রা
প্রথমে দু’পা ছড়িয়ে বসুন। দু’হাতের তালু দু’হাঁটুর ওপর রাখুন। এবার ডান পায়ের পাতা বাইরের দিকে ফেরান ও পা সোজা করে রাখুন। এবং বাঁ পায়ের পাতা দেহের ভিতর দিকে টানুন এবং সঙ্গে হাঁটু অল্প একটু ভাঁজ করুন। বিপরীতভাবে ডান পায়ের পাতা দেহের ভিতর দিকে টানুন ও অল্প হাঁটু ভাঁজ করুন। বাঁ পায়ের পাতা বাইরের দিকে ফেরান ও পা সোজা রাখুন। এইভাবে দশবার অভ্যাস করুন শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। দু’তিন সেট করা যেতে পারে।
উপবিষ্ট একপদ উত্থানপদাসন
প্রথমে চেয়ারে বসুন। দু’হাত দিয়ে চেয়ারের দু’পাশে ধরুন। এবার প্রথমে ডান পা সোজা করে যতটা সম্ভব ওপরদিকে তুলুন। দশ গোনা পর্যন্ত অবস্থান করুন। এবার ডান পা নামিয়ে একই রকমভাবে বাঁ পা তুলুন। এটা হল পুরো একবার। এইভাবে তিনটা সেট অভ্যাস করুন, প্রয়োজনে সেট বাড়াতে পারেন।
উত্থানপদাসন
চিৎ হয়ে শুয়ে দু’হাত শরীরের দু’পাশে রাখুন। দু’পা জোড়া ও সোজা রেখে মাটি থেকে এক হাত উঁচুতে তুলে রাখুন। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস রেখে মনে মনে দশ থেকে তিরিশ পর্যন্ত গুনুন। দু’পা মাটিতে নামিয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন। এইভাবে তিনবার অভ্যাস করুন।
একপদ উত্থানপদাসন
যারা দু’পা তুলতে অসুবিধা বোধ করেন তারা চিৎ হয়ে শুয়ে প্রথমে ডান পা এবং পরে বাঁ পা মাটি থেকে তুলে অভ্যাস করতে পারেন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন।
যষ্টি আসন
চিৎ হয়ে শুয়ে দু’পা মাথার দু’পাশে পাশাপাশি রেখে একহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে অপর হাতের বুড়ো আঙুল ধরুন। এবার কোমর থেকে শরীরের উর্ধ্বাংশ ওপরদিকে এবং নীচের অংশ নীচের দিকে টানটান অবস্থায় রাখুন। স্বাভাবিক শ্বাসের মাধ্যমে ২০ সেকেন্ড থাকুন। তারপর শবাসন করুন। এইভাবে তিনবার করুন।
উৎকটাসন
সোজা হয়ে দাঁড়ান। দু’হাত সোজা করে সামনের দিকে বাড়িয়ে দিন। এবার মেরুদণ্ড সোজা রেখে চেয়ারে বসার মতো করে ধীরে ধীরে বসার ভঙ্গিমায় আসুন। লক্ষ রাখবেন বুক যেন সামনের দিকে বেশি ঝুঁকে না যায়, স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন, দশ গুনুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। তিনবার করুন। শুধুমাত্র পেশিবাত থাকেল তবেই এটা অভ্যাস করা উচিত। অন্যথা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
স্বস্তিকাসন
২-৩ ফুট গ্যাপ রেখে দুটো পা ফাঁক করে দাঁড়ান। পায়ের পাতা বাইরের দিকে পাশে ফেরানো থাকবে একই সরলরেখায়, হাঁটু সামান্য ভাঁজ করে বসার ভঙ্গিতে থাকুন। দু’টো হাত কাঁধ বরাবর রেখে কনুই থেকে মুড়ে ওপরে সোজা করে রাখুন। এইভাবে অভ্যাস করুন দশ গোনা পর্যন্ত একই অবস্থানে থেকে। ২-৩ সেট করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। পায়ে যদি খুব ব্যথা থাকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে এই ব্যায়াম করুন।
পদটানাসন
চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার অন্য আর একজনের সহযোগিতায় পায়ের পাতা ভিতর দিকে রেখে গোড়ালির তলায় এক হাতের তালু রেখে অ্যাঙ্কেল জয়েন্ট থেকে প্রথমে ডান পা টানুন। এটা দশবার করুন। এরপর বাঁ পা করুন একইভাবে। এটা হল ম্যানুয়াল ট্র্যাকশন।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন