মনে হয় হার্টের সমস্যা কিন্তু রিপোর্ট ভালো

0
97

আমার নাম রফিকুল। বয়স ৪৬ বছর, বাড়ি খুলনা। প্রায় এক বছর ধরে সমস্যায় ভুগছি। সমস্যার শুরুর প্রথম দিকে সামান্য বুক ব্যথা করত। সাথে মাথা ঘুরত, শরীর ঝিমঝিম করত, শরীর অবশ আসছে এমন লাগত। তারপর কিছুদিন পর হঠাৎ করে বুক ধড়ফড় শুরু হয় এবং হাত-পা কাঁপতে শুরু করে। মনে হতে থাকে আমি মারা যাব। পরপর কয়েকবার এমন হওয়ার পর হার্টের সমস্যা ভেবে আমি ডাক্তার দেখাই এবং ডাক্তারের পরামর্শে সব ধরনের টেস্ট করাই; কিন্তু রিপোর্ট সব ভালোই আসে। তবুও বারবার একই সমস্যা হয়। আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্তু কোনো ডাক্তারই আমার রোগ ধরতে পারেন না। আমার মনে হয়, আমার কোনো বড় রোগ হয়েছে, এটা চিন্তা হলে মন আরো অস্থির হয়ে যায়। সবসময় এটা মনে করে প্রচণ্ড অস্থিরতায় ভুগি। মনে হয়। আমি কোনোদিনই ভালো হবো না। আসলে আমার এ রোগের নাম কী? আমাকে সমাধান দিবেন।

অধ্যাপক ডা. নিলুফার আক্তার জাহান : রফিকুল, ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান প্রশ্নের জন্য। আপনি লিখেছেন আপনার কিছু উপসর্গ নিয়ে সমস্যা শুরু হয়েছে। যেমন বুক ব্যথা, মাথা ঘোরা, শরীর ঝিমঝিম করা, শরীর অবশ হয়ে আসা। কিছুদিন পর হঠাৎ হঠাৎ করে বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা কাঁপা শুরু হয় এবং ঐ সময়ে আপনার মনে হতে থাকে আপনি মারা যাবেন। সেই থেকে আপনার মনে হয়. আপনার বড় কোনো রোগ হয়েছে। সবসময় এটা মনে করে প্রচন্ড অস্থিরতায় ভোগেন। আপনার মনে আসে আপনি কোনোদিন ভালো হবেন না। আপনার সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ শেষে আমার অভিমত হলো, আপনি প্যানিক ডিজঅর্ডার নামক রোগে ভুগছেন যা নিয়ে। আপনি দুশ্চিন্তায় আছেন। মনে রাখবেন, প্যানিক ডিজঅর্ডার কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। এ রোগের অনেক প্রকার বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা রয়েছে। এখানে তার কিছু ধারণা দিচ্ছি। গবেষণামতে সমন্বিতভাবে ঔষধ এবং সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা চালালে তা এককভাবে ঔষধ খাওয়া কিংবা
সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা নেয়ার চেয়ে ভালো ফল দেয়। কোনো নিষেধ না থাকলে স্পেসিফিক সিরোটনিন রিআপটেক ইনহিবিটর বা এসএসআরআই (SSRI) গ্রুপের ঔষধ খেতে পারেন। পাররেটিন ২০ মিলিগ্রাম (মি.গ্রা.), সিটালোগ্রাম ১০-২০মি.গ্রা.. অথবা সারট্রালিন ৫০মি.গ্রা. হলো এই রোগের প্রধান ঔষধ। ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টও [কোমিপ্রামিন ২৫মি.গ্রা., ইমিপ্রামিন ২৫ মি.গ্রা.] খুব কার্যকরী। অন্যান্য ঔষধের মধ্যে আছে-ভেলাফাক্সিন (Venlafaxine ) ভেনলাফ ৩৭.৫/৭৫ মি.গ্রা., বুসপাইরোন (Buspirone) ৫.০ মি.গ্রা.। এসব ঔষধ খেলে এ রোগে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। অল্প মাত্রায় শুরু করে সপ্তাহে সপ্তাহে ডোজ বাড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছলে ঐ নির্দিষ্ট মাত্রার ঔষধ নির্দিষ্ট মেয়াদে (৮- ১২ মাস) ধরে সেবন করতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী এসব ঔষধ বিভিন্ন কম্বিনেশনে ধাপে ধাপে সেবন করা যেতে পারে। যেহেতু এসব ঔষধ ভালোভাবে কাজ করতে ৪-৬ সপ্তাহ সময় লাগে, সেই পিরিয়ডে এই ঔষধের সঙ্গে বেনজোডায়াজেপিন
(Benzodiazepines) (ক্লোনাজিপাম ০.৫ মি.গ্রা.) / অ্যালপ্রাজোলাম ০.৫ মি.গ্রা খেতে পারেন। প্যানিক অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিকভাবে বেনজোডায়াজেপিন মাঝে মাঝে ব্যবহারের জন্য তুলে রাখা যেতে আপনার কিছু কিছু সমস্যা ঔষধে ভালো হবে, কিছু কিছু সমস্যা সাইকোথেরাপির সাহায্যে ভালো হবে আর কিছু কিছু সমস্যার জন্য দুটোই লাগবে। যেমন : মনের মাঝের চিন্তা কাটানোর জন্য দুটোই করুন। পারে। লাগবে। দেখা যায়, কিছু কিছু পরিস্থিতিতে এ রোগের লক্ষণগুলো বেড়ে যায়। পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে ১টি বা ২টি প্রোধানলল (১০) মি.গ্রা.) নামক বিটা ব্লকার ঔষধ বা বেনজোডায়াজেপিন খেয়ে নিতে পারেন। সাইকোথেরাপির মধ্যে কগনিটিভ থেরাপি, বিহেভিয়র থেরাপি বা কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি কার্যকরী। প্যানিক ডিজঅর্ডার বা প্যানিক অ্যাটাক সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানা, চিন্তার ত্রুটিগুলো। সংশোধন করার জন্য সাইকোথেরাপি কার্যকর। আর মি. রফিকুল, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অ্যানালাইসিস করে আপনার চিকিৎসা করতে পারবেন। তাই আপনি শীঘ্র মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে সাক্ষাৎ করুন।

পরামর্শ দিয়েছেন-

ডা. নিলুফার আখতার জাহান

অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান

জেরিয়াট্রিক ও অর্গানিক সাইকিয়াট্রি

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা

দৃষ্টি আকর্ষণ মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শের জন্য monerkhaboronline@gmail.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন অথবা মেসেজ করতে পারেন মনের খবরের ফেসবুক পেজে।

MK4C-এর সেবা নিতে এখানে ক্লিক করুন

মনের খবর টিভির স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রোগ্রাম দেখতে ক্লিক করুন

Previous articleআত্মহত্যা প্রতিরোধই প্রধান চিকিৎসা
Next articleমানসিক রোগের চিকিৎসা: সব স্তরের মানুষ কি সমানভাবে পায়?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here