বিশ্বে মহামারী আকারে রূপ ধারন করেছে মরণঘাতী করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাস শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে এক আতংকে নাম। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে চলছে সাধারণ ছুটি। জরুরী সেবা সেহ বন্ধ রয়েছে প্রায় সব পেশার কার্যক্রম। তবে জরুরী সেবা হিসেবে স্বীকৃত না হলেও প্রায় প্রতিটি ভবনের নিরপত্তার পাহারায় কর্মরত রয়েছে সিকিউরিট র্গাড পেশাজীবীরা।
বাণ্যিজ্যিক ভবন বন্ধ থাকলেও সেসব ভবনে সিকিউরিটি র্গাডদের ছুটি নেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এসব লোকেরা সাধারণত সাশ্রয়ী হোটেলে খাবার খেয়ে তাদের দিন কাটান। কিন্তু দোকানপাট বন্ধ থাকায় খাবার সংকট কিংবা শুধু শুকনো খাবার খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। কোনো কোনো ভবনে মালিকপক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও বেশিরভাগেরই অবস্থা করুন। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ মোটামুটি ত্রাণ পেলেও এসব মানুষদের খোঁজ রাখছে না কেউ। কোনো কোনো ভবনে আমরা মূল গেটে তালা থাকায় ভবনেই সঙ্গীহীন দিনের পর দিন পার করছেন কেউ কেউ। বিভিন্ন কোম্পানীর অধীনে যারা কাজ করেন তারা শিফট ভিত্তিক দায়িত্ব পালন করলেও যারা নির্দিষ্টভবনে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন তারা রয়েছে সবচেয়ে বেশি কষ্টে। খাবারের সংকট, পরিবারের জন্য দুঃশ্চিন্তায় দুর্বিষহ তাদের জীবন। মিরপুরের এমনই এক বাণিজ্যিক ভবনে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল হাই (ছদ্মনাম) বলেন, “ অফিসের স্যারেরা সবাই নিজের বাড়িতে থাকলেও আমরা যাইতে পারি নাই, বাড়িতে বউ পোলাপনের জন্য চিন্তা হয়, রাইতে ঘুমাইতে পারি না, ঘুমাইলে খারাপ স্বপ্ন দেহি।”
একইভাবে আবাসিক ভবনগুলোতেও কর্মরত রয়েছেন অসংখ্য মানুষ, কাজের বুয়াদের ছুটি থাকায় বাসা-বাড়ির দেখাশোনা থেকে শুরু করার পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বড় একটা দায়িত্ব পালন করছেন সিকিউরিটি র্গাডরা। করোনার কারণে তারাও উদ্বিগ্ন, তার থেকেও বেশি উদ্বিগ্ন পরবর্তী আরো সামনের দিনগুলোর জন্য। এমনই উদ্বিগ্নতার কথা জানান একটি আবাসিক ভবনের সিকিউরিটি র্গাড হিসেবে কাজ করা মনসুর আলী (ছদ্মনাম)। উদ্বিগ্নতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, তার কাছে মনে হচ্ছে যখন এই ভাইরাস আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে তখন সে কি করবে? তার চাকরিটা থাকবে কি না, গ্রামে পরিবারকে টাকা দিতে কি না। যদিও সে র্বতমান অবস্থায় আরো সংকটের ভয়ে পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে কিছুটা স্বস্ত্বি বোধ করছে। সে আরো বেশি উদ্বিগ্ন করেনার কোনো প্রতিষেধক নেই বলে।
করোনার পরিস্থিতির আগে যেভাবে সে নির্ভয়ে চলাফেরা, কাজকর্ম করতে পারতো, কিন্তু এখন কিছুটা আতংকের মধ্যেই তার কাজকর্ম করতে হচ্ছে। যদিও করোনার বিস্তার ঘটানোর আগে অনেক ব্যস্ত সময় কাটতো। এখন তার কাজের পরিমান অনেকটা কম। শুধু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপার নিয়ে কাজে ব্যস্ত থাকে। অন্যান্য কাজের পরিমান কম, তাই অনেকটা অবসর সময় কাটাচ্ছে। এই অবসর সময়ের মধ্যেই করোনার ভীতি তাকে নানাভাবে ব্যাধিগ্রস্ত করছে। করোনার এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও হয়তো তার এই ভীতিকর পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। এই ভীতিকর পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার জন্য হয়তো প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও তার প্রয়োজন হতে পারে।
লিখেছেন: সৈয়দা মুমতাহিনাহ সোনিয়া