কোভিড-১৯ মহামারী এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা

কোভিড-১৯ মহামারী এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা
কোভিড-১৯ মহামারী এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা

মহামারীর এক চরম পরিণতি হল কর্মহীনতা। এই অবস্থায় নিজের ও পরিবারের প্রতিদিনের চাহিদা মেটানো এবং মহামারী মোকাবেলা করা এক চরম দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা এবং বিষণ্ণতার সৃষ্টি করেছে। ঠিক এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক সমস্যার যুতসই যথেচ্ছ সমাধান করা না গেলেও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মানসিক সমস্যা গুলোর নিবারণ করার প্রয়াস আমরা করতেই পারি।
মহামারীর কারণে সারা বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে  পড়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ ভীষণ দুশ্চিন্তায় রয়েছে যে যেকোন সময় তারা চাকরীচ্যুত হতে পারে। আর বিভিন্ন পেশার এমন অনেক মানুষ যাদের চাকরী আছে, যারা প্রতি দিন কর্মক্ষেত্রে দৌড়চ্ছেন, তাদের বেতনের একটা সিংহ ভাগ কেটে রাখা হয়েছে। এসব কারণে সব মিলে অধিকাংশ মানুষই তাদের কর্মজীবন নিয়ে অত্যন্ত মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এই অর্থনৈতিক সমস্যার ফলে উৎপন্ন নানা ধরণের মানসিক সমস্যা যেমন দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, হতাশা ইত্যাদি নিরসনে কিভাবে বিভিন্ন কগনিটিভ থেরাপি আমাদের কাজে লাগতে পারে সেটি নিয়ে বিষদে জানা প্রয়োজন।
১) মহামারীর প্রতি আমাদের এই যে মানসিক প্রতিক্রিয়া এগুলোকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়ার প্রয়াস করতে হবে। প্রতি দিনের জীবন জীবিকার ব্যয় সুষ্ঠুভাবে বহন করতে না পারলে এবং ভবিষ্যতে নিজের ও পরিবারের জীবন যাত্রার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না হলে স্বাভাবিক ভাবেই দুশ্চিন্তা  এসে যায়। মহামারী আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ দুটোকেই চরম ভাবে প্রভাবিত করেছে এবং আমরা জানিনা আজ বাদে কাল আমাদের চাকরী থাকবে কি থাকবেনা। জীবন এবং জীবিকার এই অনিশ্চয়তা থেকে হতাশা, বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা এমনকি অসহায় মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তাই বলা যায়, এই মহামারী কালীন দুঃসময়ে এমন প্রতিক্রিয়া বেশ স্বাভাবিক।  আমরা এগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারিনা বা জোর করে এর থেকে দূরে থাকাও সম্ভব নয়। তবে যেটা সম্ভব সেটি হল এগুলোর প্রভাব হ্রাস করার প্রচেষ্টা করা। তাই ভাল মন্দ বিবেচনা করে চেষ্টা করতে হবে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মানসিকভাবে ভাল থাকার।
২) সেসব বিলাসিতা ত্যাগ করুন যা আপনার এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই এবং এটি নিয়ে কোন প্রকার দুঃখ প্রকাশ করা থেকেও বিরত থাকুন। যেমন, ভ্রমণ, বাইরে খাওয়া, নতুন নতুন জামা কাপড় কেনা ইত্যাদি কাজ যা এই মুহূর্তে আপনার প্রয়োজন নেই এগুলো বাদ রাখুন। এতে অর্থের সঞ্চয় হবে এবং আপনি জরুরী প্রয়োজনে সেটি ব্যবহার করতে পারবেন।
৩) স্মরণ করুন, যখন আপনার উপার্জন কম ছিল বা যখন আপনার হাতে পর্যাপ্ত অর্থ ছিলনা তখন আপনি কিভাবে সব কিছু পরিচালনা করতেন। ঠিক একইভাবে , এই দুঃসময়েও ধৈর্য ধারণ করে সেভাবে সব কিছু ম্যানেজ করুন। এতে আপনি অল্পে সন্তুষ্ট থাকার মানসিক দৃঢ়তা অর্জন করবেন।
৪) আমরা সব সময় আমাদেরকে সেই অবস্থায় ভাবতে বা দেখতে পছন্দ করি যখন আমাদের উপার্জন সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে বা ছিল। এই সময়ে এই অভ্যাস ত্যাগ করুন। নিজেকে কম উপার্জন এবং কম ব্যায় করা মানুষদের মত ভাবতে চেষ্টা করুন। এতে মানসিক পীড়া এবং অর্থের চাহিদা দুটোই কম মনে হবে।
৫) মাসিক আয় ব্যায়ের একটি সুনির্দিষ্ট হিসাব তৈরি করুন। এতে আপনার জন্য অল্প ব্যায়ে প্রয়োজনীয় সব কিছু সঠিকভাবে করা সম্ভব এবং সহজ হবে। এতে করে আপনি মহামারীর এই দুঃসময়ে অপ্রয়োজনীয় ব্যায়ের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারবেন এবং মহামারী শেষ হওয়ার পরবর্তী সময়ের পরিকল্পনা করে সে সময়ের জন্য সঞ্চয়ের সুযোগ ও তৈরি হবে।
আমাদের জীবনে সব কিছুই আপেক্ষিক। আর অর্থনৈতিক বিভিন্ন দিক যেমন চাকরী, বেতন, স্টক মার্কেট, অর্থনৈতিক সাহায্য সব কিছুই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় এবং এগুলোর অবস্থাও চরমভাবে আপেক্ষিক। মহামারীর এই দুঃসময় আপনার জীবনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু মনে রাখবেন এখানেই শেষ নয়। আমাদের জীবনে বিপদ প্রায়শই আসে, এবার ও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। স্মরণকালের সেরা দুঃসময় হলেও আমরা এর মোকাবেলা করতে অবশ্যই সক্ষম। উপরের বিষয় গুলো খেয়াল রাখলে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যা এবং এর থেকে উদ্ভূত মানসিক সমস্যা গুলোকে অবশ্যই মোকাবেলা করতে পারব এবং নতুন সময়ের প্রত্যাশায় এই দুঃসময়কে পরাজিত করব।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleকরোনা দিনে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার
Next articleকরোনায় বেড়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here