কোভিড-১৯: মনো-সামাজিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য করণীয়

0
63
কোভিড-১৯: মনো-সামাজিক সেবা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যা করবেন
কোভিড-১৯: মনো-সামাজিক সেবা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যা করবেন

সাধারণ মানুষের জন্য বার্তাঃ
১. কোভিড -১৯ সন্দেহভাজন, আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি সহানুভূতিশীল হউন। কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত কেউ কোন অপরাধ করেন নি তাই তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন, সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা থাকা উচিত।
২. এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের “কোভিড -১৯ কেস”, “আক্রান্ত”, “কোভিড -১৯ পরিবার” বা “অসুস্থ” হিসাবে উল্লেখ করা যাবে না। তারা হলো ” কোভিড -১৯ আছে এমন ব্যক্তি “, ” কোভিড -১৯ এর জন্য যাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে “, বা ” কোভিড -১৯ থেকে সেরে উঠছে এমন ব্যক্তি “। কোভিড -১৯ থেকে সেরে ওঠার পরে তাদের জীবন , জীবিকা, এবং পরিবার -পরিজনের সাথে যোগাযোগ স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে।
৩. কোভিড -১৯ সম্পর্কিত সংবাদ যদি আপনাকে উদ্বেগ বা হতাশাগ্রস্ত করে তবে তা দেখা, পড়া বা শোনা কমিয়ে দিন বা বিরত থাকুন; কেবলমাত্র বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য জানুন যেন তা দিয়ে আপনি সঠিক এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।
৪. নিজে সাবধান হউন এবং অন্যকে সহায়তা করুন।
৫. ইতিবাচক এবং আশা জাগানিয়া গল্পগুলি খুঁজে বের করুন আর শেয়ার ক্রুন যেমনঃ যারা কোভিড -১৯ থেকে সেরে উঠেছেন বা কেউ প্রিয়জনকে কীভাবে সহায়তা দিয়েছেন সেই সব ইতিবাচক অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন।
৬. আপনার কমিউনিটিতে কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত ব্যাক্তিকে সাহায্যকারী, এবং স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের সম্মান করুন, বাহবা দিন তাদের অনুপ্রাণিত করুন।
স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য বার্তাঃ
১. এ সময় মানসিক চাপ বোধ করা স্বাভাবিক। কোভিড -১৯ এর কারনে মানসিক চাপ বা স্ট্রেসে আপনি দুর্বল হয়ে পরেছেন বা কাজ করতে পারবেন না এমন পরিস্থিতি যেন না হয়। এ সময় শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনো সামাজিক বিষয়গুলোর যত্ন নেয়া সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
২. এই সময় নিজের যত্ন নিন যেমনঃ কাজের শেষে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া, পর্যাপ্ত এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, হাল্কা ব্যায়াম করা এবং পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলুন। মানিয়ে নেয়ার ক্ষতিকর পদ্ধতি যেমন তামাক, অ্যালকোহল বা অন্যান্য ড্রাগ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
৩. দুঃখজনকভাবে কোভিড -১৯ সংক্রান্ত সামাজিক অপব্যখার কারণে কিছু স্বাস্থ্যসেবাকর্মী তাদের পরিবার বা কমিউনিটি কর্তৃক বিরুপ আচরন এর সম্মুখীন হতে পারেন। এটি এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে আপনার পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। যদি সম্ভব হয়, বিভিন্ন ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে প্রিয়জনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে যাবেন।
মন-সামাজিক সহায়তার জন্য আপনার সহকর্মী, ম্যানেজার বা অন্যান্য সহকর্মীর কাছে যান, পাশে বসে অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন, হাসুন-আপনার সহকর্মী আপনার মতোই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে পারে।
৪. মানসিক প্রতিবন্ধীদের সাথে বার্তা শেয়ার করার জন্য তাদের জন্য বোধগম্য পন্থা /ডিভাইস ব্যবহার করুন।
৫. কোভিড -১৯ দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোথায় কখন কীভাবে সহায়তা প্রদান করবেন এবং কীভাবে সেবা সমূহ তাদের কাছে সহজ লভ্য করবেন তা জেনে নিন এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেসকল প্রতিষ্ঠান/ স্থানের সাথে যোস্ঘথান/করিয়ে দিন। যাদের মানসিক এবং মনোসামাজিক সহায়তা দরকার তাদের কে এই সহায়তা দেওয়া বিশেষভাবে প্রয়োজন । মনে রাখবেন কোভিড -১৯ সংক্রান্ত সামাজিক অপব্যখার কারনে সাধারন মানুষের মধ্যে সহায়তা চাইতে সঙ্কোচ তৈরী হতে পারে। তাতে শুধু চিকিৎসাই না কন্টাক্ট ট্রেসিং, কোয়ারেনটাইন , সন্দেহভাজন কোভিড -১৯ স্ক্রিনিং সবই বাঁধাগ্রস্ত হবে।
৬। সময় সুযোগ মত হাল্কা শারীরিক ব্যায়াম করুন, শাক সবজি ও ফল সহকারে পুষ্টিকর খাবার খান। আপনার শারীরিক সুস্থতা আপনাকে মানসিকভাবে সুস্থ ও সবল হতে সাহায্য করবে।
হেলথ ফ্যাসিলিটিতে টিম লিডার বা ম্যানেজারদের জন্য বার্তাঃ
১. COVID-19 রেসপন্স চলাকালীন সময় সমস্ত কর্মীদের দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ এবং দুর্বল মানসিক অবস্থা থেকে সুরক্ষিত রাখার অর্থ তাদেরকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য আরও সক্ষম ও চাঙ্গা রাখা।
২. সঠিক এবং হালনাগাদ তথ্য নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ এর মাধ্যমে সকল কর্মীকে সরবরাহ করা হচ্ছে তা নিশ্চিত করুন
৩. কর্মীরা যেন প্রয়োজনে যে কোন মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনো-সামাজিক সয়াহতা সেবা গ্রহণ করতে পারে সে সম্পর্কে সচেতন করুন এবং সেই সেবাসমূহকে সহজলভ্য করুন।
৪. নার্স, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, স্বেচ্ছাসেবক, কেস শনাক্তকারী, শিক্ষক এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, কোয়ারান্টাইন সাইটগুলির কর্মীবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সাইকোলজিকাল ফার্স্ট এইড বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করুন।
৫. জরুরি বা সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের মধ্যে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্য এবং নিউরোলোজিক্যাল সমস্যা যেমন ডেলিরিয়াম, সাইকোসিস, সিভিয়ার এনজাইটি, বা ডিপ্রেশন) এর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
৬. স্বাস্থ্যসেবার সমস্ত স্তরে প্রয়োজনীয়, জেনেরিক সাইকোট্রপিক ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করুন।
বাচ্চাদের যত্নে নিয়োজিত ব্যাক্তিদের জন্য বার্তাঃ
১. শিশুদের ভয় এবং দুঃখের মতো অনুভূতি প্রকাশের ইতিবাচক উপায়গুলি খুঁজতে সহায়তা করুন।
২. যদি নিরাপদ মনে হয় তবে শিশুদেরকে তাদের বাবা-মা এবং পরিবারের সাথে রাখুন এবং যথাসম্ভব শিশু এবং তার যত্নদানকারীকে পৃথক করা থেকে বিরত থাকুন।
যদি কোনো শিশুকে তার প্রাথমিক যত্নদানকারী থেকে আলাদা করার দরকার হয় তবে অবশ্যই এটা লক্ষ্য রাখতে হবে যেন , যেভাবে শিশুটির বিকল্প যত্ন দেয়া হচ্ছে তা যেন যথাযথ হয় এবং একজন প্রশিক্ষিত সমাজকর্মী বা সমমানের কেউ যেন শিশুকে ফলো-আপ করে।
এছাড়া, পরিবার থেকে বিচ্ছেদের সময়কালে যেন পিতামাতা এবং যত্নশীলদের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় থাকে তা নিশ্চিত করুন। যেমন দুবার-দৈনিক নির্ধারিত টেলিফোন বা ভিডিও কল বা অন্যান্য বয়স-উপযুক্ত যোগাযোগ (উদাঃ সোশ্যাল মিডিয়া)।
৩. যতটা সম্ভব দৈনন্দিন জীবনে অভ্যস্ত রুটিনগুলি বজায় রাখুন বা তার প্রয়োজন ও সুবিধা মাথায় রেখে নতুন রুটিন তৈরি করুন, বিশেষত বাচ্চাদের যদি বাড়িতেই থাকতে হয়।
৪. মানসিক চাপ ও সংকটের সময়ে সাধারণত শিশুরা বাবা-মায়ের আরও সংস্পর্শ খুঁজে এবং চাহিদাপূর্ণ হয়। আপনার সন্তানদের কোভিড -১৯ বিষয়ে স্বচ্ছ এবং বয়স-উপ যোগী ধারনা দিন।
বয়স্ক ব্যাক্তি, একাধিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের যত্নদানকারীদের জন্য বার্তাঃ
১. বয়স্করা বিশেষ করে যারা আইসোলেশনে আছে এবং কগনিটিভ ক্ষয়/ডিমেনশিয়া আছে তারা মহামারি বা কোয়ারেন্টিন সময়ে বেশি উদ্বিগ্ন, রাগী, চাপ, উৎকিণ্ঠত এবং উদাস হয়ে যেতে পারে। অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক (পরিবার) এবং স্বাস্থ্যপেশাজীবীদের মাধ্যমে তাদের ব্যবহারিক এবং মানসিক সহায়তা প্রদান করুন।
২. কী ঘটতে চলেছে সে সম্পর্কে সাধারণ তথ্য শেয়ার করুন এবং কীভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করা যায় সে সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য দিন যাতে বয়স্ক ব্যক্তিরা (কগনিটিভ ইম্পেয়ারমেন্ট ছাড়া/সহ ) বুঝতে পারেন।
৩. যদি এক বা একাধিক রোগ আগে থেকেই থেকে থাকে তবে বর্তমানে যে ঔষধ ব্যবহার করছেন তা সহজলভ্য এবং প্রয়োজনীয় মজুদ রয়েছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিন।প্রয়োজনে সহায়তা প্রদানের জন্য আপনার সামাজিক যোগাযোগগুলি সক্রিয় করুন।
৪. প্রস্তুত থাকুন এবং আগে থেকে জেনে নিন প্রয়োজনে কোথায় এবং কীভাবে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন, যেমন ট্যাক্সি ডাকা, খাবার সরবরাহ এবং চিকিত্সা র জন্য অনুরোধ। আপনার কাছে আপনার নিয়মিত ওষুধদের দুই সপ্তাহের মজুদ নিশ্চিত করুন ।
৫. কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনের সময় বাড়িতে করতে পারেন এমন সাধারণ ব্যয়াম শিখুন যাতে আপনি সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে পারেন এবং একঘেয়েমি কমাতে পারেন।
৬. যথাসম্ভব নিয়মিত রুটিন এবং সময়সূচী বজায় রাখুন বা নতুন পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী রুটিন তৈরি করুন।
আইসোলেশনে থাকা ব্যাক্তিদের জন্য বার্তাঃ
১. আপনার সামাজিক নেটওয়ার্কগুলি বজায় রাখুন।
২. স্ট্রেসের সময় আপনার নিজের প্রয়োজন এবং অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দিন। স্বাস্থ্যকর ও আনন্দদায়ক কাজগুলি যা আপনি উপভোগ করেন তাতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন এবং আরাম করুন। নিয়মিত অনুশীলন করুন, নিয়মিত ঘুমের রুটিন রাখুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
৩. মহামারী সম্পর্কে সঠিক এবং হালনাগাদ খবরের একটি বিশ্বস্ত তথ্য সুত্রের সাথে অবিরাম নিজেকে সম্পৃক্ত রাখুন নতুবা ভুল তথ্য আপনাকে উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে। WHO ওয়েবসাইটে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য আপডেট এবং ব্যবহারিক নির্দেশিকা সন্ধান করুন একই সাথে মিথ্যা, গুজব যা আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলে তা শোনা বা অনুসরণ করা এড়িয়ে যান।
সূত্র: অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রিজওয়ানুল করীম শামীম এর ফেসবুক পোস্ট অবলম্বনে।

Previous articleপ্রতিবেশী করোনা আক্রান্ত হলে কী করবেন?
Next articleকোয়ারেন্টাইনে লেখালেখি কমাবে মানসিক চাপ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here