সমস্যাঃ আসসালামু আলাইকুম। আমার বয়স ৩১। সমস্যাগুলো যথাসম্ভব বর্ণনা করার চেষ্টা করলাম, সমাধান পেলে জীবনযুদ্ধের দৌড়ে পিছিয়ে পড়া নিজেকে হয়ত কিছুটা সামলে নিতে পারব। কোনো কাজ সহজে শুরু করতে পারি না। কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারি না। কীভাবে কাজটি শুরু এবং সম্পন্ন করব সেটা চিন্তা করতে করতে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। অলসতা কাজ করে এবং পরে করব বলে মনে হয়। আবার শুরু করার পরও বেশিক্ষণ মন বসে না। সবসময় আমার জীবনের করণীয় কাজগুলো নিয়ে খুবই সংশয় কাজ করে, বিভ্রান্ত এবং চিন্তিত থাকি। যার ফলে শুরু করতে করতেই অনেক সময় চলে যায়। মাঝে মাঝে সবকিছু এলোমেলো মনে হয়। কোনো কাজ করা অবস্থায় মনে নতুন চিন্তার আগমন ঘটে। এর ফলে নতুন করে করণীয় নিয়ে ভাবতে শুরু করি। মাঝে মাঝে কিছুদূর করা কাজ বা পড়া নতুন করে প্রথম থেকে করতে বা পড়তে শুরু করি। কোনো কাজ শুরু করার আগেই সেটাকে কঠিন এবং আমার দ্বারা সম্ভব নয় বলে মনে হয়। আমি খুব ই খুঁতখুঁতে স্বভাবের যা আমাকে খুবই কষ্ট দেয়। যেমন-কম্পিউটারের সামনে কাজ করতে বসলে বারবার মনে হয় যে মনিটরটা আমার বরাবর নেই এবং বারবার মনিটরটা অ্যাডজাস্ট করতে থাকি। এই সমস্যাটা ল্যাপটপের সামনে বসলেও হয়, বারবার ডানে, বামে, সামনে, পিছনে ঘুরিয়ে অ্যাডজাস্ট করতে থাকি যার ফলে মূল কাজ করতে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। আবার কোনো ফাইল সেভ করার সময় অথবা ফোনবুকে কোনো নাম্বার সেভ করার সময় নামের বানান এবং ফরমেট নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। যেমন ধরুন, ফোনবুকে একটি নাম এভাবে সেভ করা আছে- Korim Narayongonj, এখন নতুন একটি নাম সেভ করব যেটি ঠিক আগের নামটির মতো একই ফরমেটে হতে হবে। যেমন- Rohim Gazipur। অর্থাৎ করিমের ক বড় হাতের হওয়ায় রহিমের জ-ও বড় হাতের হতে হবে, এরপর একটি স্পেস দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ঘ বড়োহাতের হওয়ায় গাজীপুরের এ-ও বড়োহাতের হতে হবে। পরবর্তীতে যদি নতুন কোনো ফরমেট বা স্টাইল মাথায় আসে তবে ফোনবুকে সেভ থাকা সমস্ত নাম্বারগুলো আবার এডিট করে ফেলতে হবে। আশা করি উদাহরণ দিয়ে আমার সমস্যা বোঝাতে পেরেছি। সমাধান পেলে খুবই উপকৃত হব।
ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার: ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নের জন্য। আপনার সমস্যাগুলো আপনি সুন্দরভাবে শনাক্ত করতে পেরেছেন। কাজ শুরু করতে অনেক সময় ব্যয় হওয়া, বারবার প্রথম থেকে শুরু করা (আপনি পড়ার কথা লিখেছেন), মন্থরতা বা Slownness, খুঁতখুঁতে স্বভাব ইত্যাদি। সব কাজগুলো যেন একইরকমভাবে হয় সে ব্যাপারেও আপনি অবসেসিভ (ফোনবুকের কথা লিখেছেন)। আপনার সমস্যাগুলো পড়ে মনে হচ্ছে আপনি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার রোগে ভুগছেন। বাংলায় বলা যেতে পারে চিন্তাবাতিক ও বাধ্যতাধর্মী আচরণ বা শুচিবাই। এই রোগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা আছে। আপনাকে ওষুধ (যেমন- SSRI, Clomioramine, Antipsychotic গ্রুপের ওষুধ), সাইকো- এডুকেশন এবং সাইকোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেয়া যেতে পারে। সাইকো-এডুকেশনে রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের রোগ ও রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জানানো হয়।
এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্যও দেয়া হয়। অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারে সাইকোথেরাপিও দেয়া হয়। যেমন-এক্সপোজার অ্যান্ড রেসপন্স প্রিভেনশন থেরাপি (ERP), রিলাক্সেশন থেরাপি, মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন, কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের ওসিডি ক্লিনিকে এই রোগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও সকল মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগেও এই রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। আপনাকে কমপক্ষে এক বছর চিকিৎসা নিতে হবে। রোগের উপসর্গগুলো থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়াটা (Adherence to Treatment) খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের উপশম হবে এবং আপনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার
অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ৯ম সংখ্যায় প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে