মৃত্যুর পর পারিপার্শ্বিক অবস্থা জানার এক ধরনের ইচ্ছা অনেকের মনেই কাজ করে। মৃত্যুর পর কে কে কাঁদবে, কে তাকে নিয়ে কী বলবে, অবচেতন মনে অনেকে এসব ভাবনাও ভেবে থাকে। অবাক হলেও এসব ঘটনা কিন্তু সত্যি হতে পারে। তবে সে জন্য তাকে কোটার্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে হবে।
কোটার্ড সিনড্রোম হচ্ছে এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যেখানে রোগী মনে করে সে বেঁচে নেই, তার শরীরটা কেবল পড়ে আছে, তার আত্মা তাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক আগেই।
বিষণ্ণতা যখন কোনো মানুষের মনকে পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলে, তখন সেই মানুষটি নিজেকে ছোট ভাবতে থাকেন, ঘৃণা করতে থাকেন, নিজেকে হেয়প্রতিপন্ন মনে করেন, নিজেকে অসহায়, পৃথিবীতে তার থাকা না থাকায় কিছুই যায় আসে না- এমন ভাবনা তার মধ্যে চলে আসে। এ রকম নিজের কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই- ভাবতে ভাবতে সে একসময় ভাবতে শুরু করে, তার নিজেরই কোনো অস্তিত্ব নেই!
১৮৮২ সালে কোটার্ড সিনড্রোমের মতো বিরল রোগের সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা করেন ড. জুলিয়াস কোটার্ড। তিনি বলেন, ‘কোটার্ড সিনড্রোম হচ্ছে এমন এক মানসিক সমস্যা, যেখানে রোগী ডিল্যুশনে ভোগে নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, রক্ত, শরীরের অংশ কিংবা নিজের আত্মারও অস্তিত্ব খুঁজে পায় না।’
একটি কেসস্টাডিতে পাওয়া যায়, ‘এমএস ল’ নামে একজন ফিলিপিনো মহিলা নিজেকে মৃত দাবি করে এবং তাকে মৃতদের সঙ্গে মর্গে রাখার দাবি জানায়, যাতে সে তার মতো মৃত মানুষদের সঙ্গে থাকতে পারে। তার পরিবার কী করবে খুঁজে না পেয়ে জরুরি ৯৯৯ নম্বরে কল করে তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠায়। মানসিক স্বাস্থ্য ইউনিটের কাউন্সেলিংয়ে সে জানায়, তার ভয়টা শুরু হয় যখন তার বাড়ি কিছু লোক পুড়িয়ে ফেলে, যেখানে সে তার ভাই এবং কাজিনের সঙ্গে বাস করত। এর পাশাপাশি একাকিত্ব, আবেগহীনতা, নিম্নপর্যায়ের শারীরিক সক্ষমতাসহ অনেক কিছুই তাকে প্রভাবিত করেছে। তিনি আরও জানান, তিনি সে জন্য আঠারো বছর বয়স থেকে এন্টিডিপ্রেসিভ ওষুধ সেবন করে আসছিলেন, কিন্তু গত মাসে ফিলিপাইন থেকে আমেরিকায় চলে আসার প্রাক্কালে তিনি সে ওষুধের নাম ভুলে যান এবং এরপর থেকে সমস্যা শুরু।
কেসস্টাডিতে আরও জানা যায়, মহিলা বেশির ভাগ সময় বিছানাতেই কাটান এবং ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে বেড়ে উঠতে দেন না। চিকিৎসা শুরু হলে ভদ্রমহিলা পর্যাপ্ত পরিমাণ সাড়া দিতে চান না। এই অসহযোগী মনোভাবের ফলে পরিবারের সহায়তায় তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপর পর্যাপ্ত ট্রিটমেন্ট, এ রকম রোগীর স্বাভাবিক মানসিক চিকিৎসার বাইরে ইলেকট্রো কনভালসিভ থেরাপির প্রয়োগ এবং পরিবারের সহায়তা ও উদ্বুদ্ধকরণে তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেন। তিনি একসময় ভবিষ্যতের কথা ভাবতে শুরু করেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে মিটফোর্ড হাসপাতালে কাজ করার সময়ের ‘কোটার্ড সিনড্রোমে’ আক্রান্ত এক রোগীর কথা উল্লেখ করেন।
লেখক: আসিফ রহমান
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে