এক যুগের সংসার ভাঙ্গার পেছনের কারণ!

0
65

এক যুগের সুখের সংসার। স্বামী, সন্তান আর শশুরবাড়ির সবার সাথে ভালোই সময় কাটছিলো নাজনীন আক্তারের (ছদ্মনাম)। কিন্তু স্বামীর সাথে অদেখা এক দূরত্বের ছায়া। একদিন হুট করেই জানালেন, এই সংসার করবেন না তিনি। সবাই তো অবাক! স্বামীসহ কেউই সঠিক কারণ বলতে পারলেন না। নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নাজনীন চলে গেলেন বাপের বাড়িতে।

হতচকিত হয়ে স্বামী প্রথমে দুই বাড়ির সবাইকে নিয়ে সমাধানের আশায় বসলেন। কিন্তু নাজনীন অপারগ সংসার করতে। তবে সিদ্ধান্তে আসে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মুখোমুখি হবেন তারা। প্রথম সাক্ষাতে নাজনীন শারীরিক কিছু সমস্যা ছাড়া আর কিছুই বলেননি। নাজনীন জানালেন, তার শরীর জ্বালাপোড়া করে, মাথা ব্যাথা করে, ঘুম আসে না, মেজাজ খারাপ থাকে, খাওয়া দাওয়া কমে গেছে। তবে ব্যক্তিজীবনে তিনি সবার সঙ্গে হাসিখুশি ভাবেই ছিলেন, যদিও স্বামীর সঙ্গে আগের মতো মিশতে পারেন না তিনি। মানসিক একটা দূরত্ব অনুভব করেন।

চিকিৎসকের প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বামী জানালেন চমকপ্রদ তথ্য। দুইজনের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলেও সেক্সুয়াল কোনো সম্পর্ক নেই দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি স্ত্রী বর্তমানে সেক্স করতে ভয় পায়, এমন তথ্যও জানালেন স্বামী।

এই বিষয় নিয়ে স্ত্রীকে চিকিৎসক প্রশ্ন করতেই, ক্ষোভে ফেটে পড়েন নাজনীন। তিনি বলতে শুরু করেন, তাদের সম্পর্কের মূল সমস্যার শুরু সেক্সুয়াল রিলেশন নিয়ে। নাজনীনের স্বামী তার ইচ্ছেমতো সেক্স করতে চাইতো। ইচ্ছে হলে সেক্স করতো, যতক্ষণ ইচ্ছে করতো, তার চাহিদা মিটলে সে চলে যেতো। কখনো আমার কথা ভাবতো না। সেক্সের বিষয়ে সে আমার কথা ভাবতোই না। এমনকি সেক্সের বিষয়ে আমি কী চাই, কীভাবে চাই এটা নিয়েও কোনো আলোচনা করতো না।

আসলে সেক্স মানে তো কেবল পেনিট্রেশন নয়, সেক্স মানে যে দুইজনের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা, দুইজনের মধ্যে ভালো সময় কাটানো, আমার স্বামী তাই বুঝতে চাইতো না। এমনকি এমন সম্পর্ক কখনো তৈরিই করে নাই তিনি।

এরফলে আমাদের সম্পর্কে দূরত্ব চলে আসে। আসলে তিনি তো আমার কথা ভাবেন না। তিনি শুধু তার ব্যবসা নিয়ে থাকেন। আর ইচ্ছে হলে ঘরে এসে শুধু আমাকে ব্যবহার করেন। আমি যে মানুষ, এই বিষয়টা উনি কখনো বুঝতেই চান না। আমার সাথে যে উনার কোনো সম্পর্ক হতে পারে, এরকম কোনো বিষয় যে ঘটতে পারে, এটা তো উনি জানেনই না।

চিকিৎসক যখন জানতে চাইলো, কেন তিনি স্বামীকে বিষয়টি জানাননি, এমন প্রশ্নের উত্তরে স্ত্রী রাগ করে বলতে লাগলেন, কোনো মানুষের সাথে ১২ বছর একসাথে থাকার পরে যদি তাকে আলাদা করে নিজের জন্য বলা লাগে, তাহলে আমার এই ১২ বছরের সংসারের কী মূল্য! আমিই কেন বুঝতে হবে, বলতে হবে, আমি উনার স্ত্রী, উনার কী আমার জন্য কোনো চিন্তা থাকবে না? আর এজন্য স্বামী এখন চাইলেও আমি উনার সাথে সঙ্গমে রাজি হয় না। কারণ, আমি তো কখনোই সুখ পাই না।

চিকিৎসকের মতামত: প্রথমে আমরা বলতে চাই, নাজনীনের সেক্সের প্রতি ভয়ের যে কথা বলা হচ্ছে বিষয়টা আসলে ভয় না। বরং সেক্সের প্রতি স্ত্রীর এক ধরনের বিরক্তি চলে আসছে। আর এই বিরক্তি আসলে মন-মানসিকতায় আঘাত হানে। যার ফলে তিনি সারাদিন অস্বস্তিতে ভোগা শুরু করেন। এর ফলে নাজনীনের খাওয়া, ঘুম, স্বাভাবিকত্ব সবকিছুতে বিরক্তি চলে আসছে। যদিও বিষয়টি সে সামনে আনতে রাজি না। তাই সবার সাথে ভালো আচরণ করছে।

তবে আমাদের বোঝা উচিত, খাওয়াতে যেমন একটা তৃপ্তি থাকে, সেক্সেও থাকে। আর এটাই স্বামী কখনো বুঝতে চাইতো না। সেক্স যে সময় নিয়ে করা লাগে, সেক্স যে মন চাইলেই করে চলে যাওয়ার মতো জিনিস না এটাই স্বামী বুঝতে চাইতো না। সেক্সের আগে যে প্রস্তুতি আছে এটাই বোঝা উচিত।

এই বিষয়টা কখনো দুইজনের মধ্যে আদান-প্রদান হয়নি। এমনকি স্বামী এটা কখনো বুঝতেই চায়নি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্বামী এটা মানতেও চায়নি। এমনকি স্ত্রীও রাগ করে আর কিছু বুঝায়নি।

এই মুহূর্তে দুইজনের মধ্যে সেই রোমান্টিসিজম, সেক্স, কমুনিকেশন আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। সেক্স যে আলাদা কোনো বিষয় না, বরং নিজেদের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ গড়লে ভালোভাবে বাড়বে এটাই পৃথিবীর সবাই বোঝা উচিত। এই ফ্রেন্ডশিপ, এই ভালোবাসাই দুইজনের মধ্যে মিসিং ছিল।

এই মুহূর্তে বিষয়টি যদি রিলেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে এক রকমের চিকিৎসা, কিন্তু এখন তো স্ত্রীর মানসিক একটা ডিপ্রেশন কাজ করছে, তাই ডিপ্রেশনের জন্য আলাদা চিকিৎসা করতে হবে আবার সম্পর্ক বিল্ড আপের অন্য চিকিৎসা তো করতেই হবে। নিজেদের কমুনিকেশনের জায়গা তৈরি করতে হবে।

কেস ষ্টাডির সূত্রঃ অধ্যাপক ডা. সালাহ্‌উদ্দিন কাউসার বিপ্লব

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous articleআত্মহত্যার কারণ বিষণ্ণতা!
Next articleপ্যানিক ডিজঅর্ডারঃ লক্ষণ ও প্রতিকার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here