ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার: রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার রোগ

0
220
ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার: রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার রোগ

ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার (আইইডি) বলতে কী বোঝায়?

এটি একপ্রকার আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী সমস্যা, যার ফলে কোনও সঙ্গত কারণ বা প্ররোচনা ছাড়াই মানুষ হঠাৎ করে প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়ে। তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ  করার ক্ষমতা হারিয়ে যায় এবং পরিস্থিতির গভীরতার সঙ্গে তাদের রাগ বা ক্রোধের মাত্রার সমতা থাকে না।

সাধারণ রাগের সমস্যা এবং আইইডিকে একরকম বলে মনে হলেও তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যেখানে রাগ ধাপে ধাপে বা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ পায়,  সেখানে আইইডি-এর ক্ষেত্রে কোনও রাগ বা ক্রোধ খুব তাড়াতাড়ি, আচমকা একটি মাত্রায় পৌঁছে যায় এবং মানুষ প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক বা মারমুখী হয়ে ওঠে।  আইইডি-তে আক্রান্ত মানুষ কদাচিৎ নিজের এহেন বিস্ফোরক রাগের কারণ বুঝতে ও ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়।

আইইডি-র সমস্যা সাধারণত শুরু হয় বয়ঃসন্ধিকালে এবং এর ফলে মানুষের মধ্যে  অন্যান্য অনেক মানসিক অব্যবস্থার ঝুঁকি যেমন- উদ্বেগ, অবসাদ প্রভৃতি দেখা দেয়। আইইডি-তে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি তার বিস্ফোরক রাগের পর্ব মিটে যাওয়ার  পরে শান্ত হয়ে যায়, কিন্তু মনে মনে সে তার আচরণের জন্য অনুশোচনা, দুঃখ, অনুতাপ এবং বিমূঢ় বা বিব্রত বোধ করে।

আইইডি-র লক্ষণ শুধু বাহ্যিক বা দৈহিকভাবেই প্রকাশ পায় না, জ্ঞান বা চেতনা এবং আচার-আচরণগতভাবেও প্রকাশ পায়। এই সমস্যাটি একটানা বা লাগাতারভাবে চললেও থেরাপি ও ওষুধের ব্যবহার সমস্যার লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে মানুষকে সাহায্য করে। সাধারণত বয়সের সঙ্গে সঙ্গেই এই বিস্ফোরক রাগের সমস্যা কমতে থাকে।

ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলো কী?

ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার বা আইইডি-তে আক্রান্ত মানুষের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো মৌখিক এবং অ-মৌখিক বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগত- দুটোই হতে পারে। একজন মানুষের অন্যায্য বা নিরর্থক ক্রোধের বিস্ফোরণ অন্ততপক্ষে তিনটি পর্বে না ঘটলে তাকে আইইডি সমস্যা বলে নির্ধারণ করা যায় না। এই পর্বগুলো সাধারণত আধঘণ্টা বা তার কম সময় স্থায়ী হয় এবং আচমকা ঘটে।

আইইডি-র লক্ষণগুলো হল-

আচরণগত বাহ্যিক বা দৈহিক জ্ঞান বা চেতনাগত মনোসামাজিক (সাইকোসোশ্যাল)
দৈহিক বা শারীরিকভাবে আক্রমণাত্মক
হয়ে ওঠা
বুক ধড়ফড় করা হতাশা সহ্য করার শক্তি কমে যাওয়া সংক্ষিপ্ত সময়ের আবেগগত বিচ্ছিন্নতা
মৌখিকভাবে আক্রমণাত্মক
হয়ে ওঠা
পেশির টান অনুভব করা চিন্তাভাবনায় নিয়ন্ত্রণহীনতা বোধ করা খিটখিটে হয়ে ওঠা
সম্পত্তি নষ্ট করা বা মূল্যবান জিনিসপত্র ভেঙে ফেলা মাথাব্যথা চিন্তাভাবনায় স্থিরতার অভাব দেখা দেওয়া রাগ বা ক্রোধ অনুভব করা
রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় আক্রোশপূর্ণ ব্যবহার শিহরণ বোধ করা
মানুষকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা বা কোনও বস্তুকে আঘাত করা  কম্পন বা কাঁপুনি অনুভব করা

 

কী কারণে ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার দেখা দেয়?

আইইডি-র প্রকৃত কারণ এখনও জানা না গেলেও বিশেষজ্ঞদের মতে এই সমস্যার পিছনে রয়েছে জৈবিক এবং পরিবেশগত উপাদানের মিলিত প্রভাব। এর প্রমাণস্বরূপ বলা যায় যে এই সমস্যায় আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ এমন একটি পরিবারে বেড়ে ওঠে যেখানে মৌখিক ও দৈহিক নির্যাতন অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ঘটনা বা হামেশাই ঘটে। পরিবারের বড়দের দ্বারা ঘটা প্রকাশ্য হিংসার এই প্রভাব ছোটদের মধ্যে পড়ে এবং তারাও বড়দের মতো সেই একইরকম আচরণ করতে শেখে এবং সেই আচরণটাকেই তারা স্বাভাবিক বলে মনে করে। এক্ষেত্রে জিনও একটা বড় ভূমিকা পালন করে। কিছু ক্ষেত্রে নিউরোট্রান্সমিটারের ভূমিকার প্রমাণও মিলেছে, যেখানে মূলত সেরোটোনিনের প্রাধান্যই বিশেষভাবে থাকে।

ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা কীভাবে হয়?

ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার অসুখের চিকিৎসায় মানুষে-মানুষে প্রভেদ দেখা যায় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি ও ওষুধের মিলিত প্রয়োগ ঘটে।
  • মেডিকেশন বা ওষুধ প্রয়োগ- সাধারণত আইইডি-তে আক্রান্ত মানুষকে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টস্‌ (অবসাদবিরোধী), অ্যান্টি-অ্যানজিওলাইটিক (উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণকারী) এবং মু্ড স্টেবিলাইজার (মনকে শান্ত রাখা) জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়।
  • থেরাপি- আচরণের সংশোধনগত কৌশল, গ্রুপ কাউন্সেলিং বা দলগত পরামর্শ এবং রাগ নিয়ন্ত্রণকারী পন্থাগুলি এক্ষেত্রে ভালো ফল দেয়। রাগ প্রতিরোধ করার জন্য শিথিলকরণ কৌশলও ব্যবহার করা হয়।

সূত্র:Kessler, R.C., Coccaro, E.F., Fava, M., Jeager, S., Jin, R., & Walters, E. (2006). The prevalence and correlates of DSM-4 Intermittent explosive disorder in the National Comorbidity Survey Replication. Archives of general psychiatry, 63(6), 669-678

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleসুবর্ণজয়ন্তীতে স্বাধীনতা বিষয়ে মনের খবর মার্চ সংখ্যা
Next articleআত্মহত্যা প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here