রোহিত কলেজ জীবনে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়। তার কিশোর বয়সি বন্ধুরা সকলেই ধূমপান করত। বন্ধুদের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে তার অভ্যাস পাল্টাতে থাকে। আগে সে দিনে একটা বা দুটো সিগারেট খেত, ছমাস পরে দিনে এক প্যাকেট। ক্রমশ সে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট ও গ্রেডের উন্নয়নের বিষয়ে উৎসাহ হারাতে থাকে। ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে ততটা স্মোক করা সম্ভব হত না। ফলে তার মেজাজ চড়তে থাকে, বমিভাব এবং শারীরিক অস্বস্তি দেখা দেয়। সে পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না। ধূমপানের জন্য মাঝে মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে। বাড়িতে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, তাই সে কলেজে ফেরার জন্য ব্যাকুল। এভাবেই তার ধূমপান সীমা ছাড়ায়। অভিভাবকরা তার ধূমপানের বিষয়ে কিছু জানতেন না। যখন কলেজ থেকে তাঁদের ডেকে জানানো হয়, রোহিত ক্লাস কামাই করায় একটা বছর নষ্ট হয়েছে, তাকে আবার আগের ক্লাসেই থাকতে হবে, তখনই তাঁরা পুরো বিষয়টি জানতে পারেন।
আসক্তি এক ধরনের প্রবণতা। অ্যালকোহল, ড্রাগ, সিগারেট ইত্যাদিতে যখন কোনও মানুষ আরাম বোধ করে, তখন তাকে আসক্ত বা অ্যাডিকটেড বলা হয়। কোনও ভাবে নেশার বস্তুতে নির্ভরশীল মানুষ নিজের জীবন, পারিবারিক ব্যবস্থা, বন্ধুবান্ধব বা কর্মক্ষেত্রে কোনও মনোযোগ দিতে পারে না। অভাব দেখা দেয় দায়-দায়িত্ব বোধের। ফলে সেই ব্যক্তি ও তার পারিপার্শ্বিক ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়।
অ্যাডিকশন এক ধরনের মস্তিষ্ক সংক্রান্ত অসুস্থতা, যা আসক্ত ব্যক্তির সামাজিক ও মানসিক বিষয়গুলিকে প্রভাবিত করে।
যে কোনও নেশার বস্তু, যেমন অ্যালকোহল, নিকোটিন ভিত্তিক সিগারেট, ড্রাগ ইত্যাদিতে যে কেমিক্যালগুলি থাকে তা ব্যবহারকারীর শরীরে বেশ কিছু জৈবিক পরিবর্তন ঘটায়। কেউ যখন ওই নেশার বস্তু গ্রহণ করে, তখন ব্রেন ডোপামিন নিঃসরণ করে, যাতে আরামের অনুভূতি হয়। ফলে গ্রাহক ব্যক্তি বারবার সেই আমেজ পেতে চায়। না পেলে ওই বিশেষ বস্তুর জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে এবং যে কোনও ভাবে সেই তুরীয় অবস্থায় পৌঁছতে চায়।
১) তারা এটা বলবর্ধক হিসেবে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
২) স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতে বা নেওয়া আটকাতে পারছে না।
৩) আসক্তের লক্ষ্য থাকছে, কী করে পরবর্তী ডোজটি নেওয়া যায়।
অ্যাডিকশন সংক্রান্ত সমাধানে ‘হু’-এর চিকিৎসাসূত্রের একটি তালিকা রয়েছে। অ্যাডিকশন একটি ক্রনিক, রিল্যাপ্সিং অবস্থা, যেখানে ডায়াবেটিস বা ক্রনিক অসুস্থতার মতোই চিকিৎসার দ্বারা বাধা দিয়ে আয়ত্তে আনতে হয়। একপ্রস্থ চিকিৎসায় তার কোনও স্থিরতা নেই, যাতে রোগী ভাল হয়ে উঠবে। সবসময় আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। রিল্যাপ্স মানেই আসক্ত ব্যক্তির হার স্বীকার করা বোঝায় না, বরং জানান দেয় যে, ওই ব্যক্তির আরও সহায়তা প্রয়োজন, যাতে সে পুরোপুরি সেরে উঠতে পারে।
ভারতে সহজলভ্য নেশার বস্তুগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে –
১) বৈধ মাদক, যেমন অ্যালকোহল এবং সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য।
২) বেআইনি মাদক, বিশেষত আনন্দবর্ধক বস্তু।
৩) চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত বা প্রেসক্রিপশন অনুসারে প্রাপ্ত ড্রাগ।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা ‘ডিপেন্ডেন্স’ বা ‘নির্ভরশীলতা’ শব্দটি ব্যবহার করেন একটি বিষয় বোঝাতে যে, একজন আসক্ত ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট ড্রাগ বা মাদক বারবার প্রয়োজন হয় একই অবস্থায় পৌঁছনোর জন্য। কোনও ব্যক্তি এক গ্লাস পরিমাণ পান করে যে অবস্থায় আনন্দ পায়, কয়েকমাস পর তাকে ঠিক ওই অবস্থায় পৌঁছনোর জন্য কমপক্ষে তিন গ্লাস পান করতে হয়। মাদক নির্ভরতা বা সহন ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া অ্যাডিকশন-এর ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক লক্ষণ বলা চলে।
- নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতিটা দিন বা চিন্তাভাবনা নেশার বস্তুকে ঘিরেই থেকে যায়। যেমন- কখন পরের ডোজ নেব (মদ বা ধুমপান জাতীয়), এর বদলে কী করতে পারি। বস্তুটি কোথা থেকে পাব, কীভাবে পাব ইত্যাদি।
- মাদক যখন ব্যবহার করছে না, তখন উইথড্রয়াল সিম্পটম দেখা দেয় – কাঁপুনি, বিরক্তি, নেশার জন্য ব্যকুলতা-সহ নানারকম শারীরিক ও মানসিক বা আবেগতাড়িত ক্রিয়া।
- নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে যাওয়া। বিশেষত একটা গোটা দিন নেশার বস্তু ছাড়া থাকতে হলে ইচ্ছাশক্তি বাধা দেয় বা কাজ করে না।
- ব্যাকুলতা বা নেশার বস্তুটি পাওয়ার জন্য বিশেষ টান অনুভব করা।
- নিজের এবং আশপাশের অন্যান্যদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কথা জেনেও বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে নেশা চালিয়ে যাওয়া।
অপব্যবহার ও আসক্তির মধ্যে তফাত কী?
দৈনন্দিন ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বস্তুর অপব্যবহার বলতে একটা নির্দিষ্ট ধরনকে চিহ্নিত করা হয়। যখন কোনও ব্যক্তি কোনও মাদক এলোপাথাড়ি নিতে শুরু করে তখন তাকে ‘সাবস্টেন্স অ্যাবিউস’ বলা হয়। ওই ব্যক্তি কোনও বিশেষ মাদক অনেক বেশি পরিমাণে স্থান-কালের বাছবিচার না করেই নিতে থাকে। অপব্যবহারকারী ব্যক্তি কোনও নির্দিষ্ট মাদকে আসক্ত বা অ্যাডিকটেড নাও হতে পারে। সাধারণত মাদক ছাড়া অনেক বেশি সময় ধরে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম হয়। তার অর্থ কখনই এমন নয় যে, এদের শারীরিক, মানসিক বা পারিপার্শ্বিক সমস্যা থাকে না। আসক্তি বা অ্যাডিকশন একটা দীর্ঘস্থায়ী, বেড়ে চলা বিশৃঙ্খল অবস্থা। মাদকের নিয়মিত ব্যবহারের কারণে এমন কিছু পরিবর্তন ঘটে, যাতে ব্যবহারকারীর পক্ষে ওই বস্তুকে এড়িয়ে যাওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব হয় না।
অপব্যবহার বা আসক্তির মধ্যে কিছু তফাত থাকলেও দুটো অবস্থাই যে কোনও ব্যক্তির পক্ষে ক্ষতিকর।
আসক্তি কেন মানসিক অসুস্থতা?
মাদকের নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্রিয়ার গতিপ্রকৃতি পাল্টে যায়। কেউ কোনও বস্তুতে আসক্ত হলে তার স্বাভাবিক চাহিদায় যে পরিবর্তন ঘটছে সেটা টের পায় না। তখন ওই নেশার বস্তুই তার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ওই ব্যক্তির স্বাভাবিক আচরণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ফলে ওই মাদকটি কেন বারবার চায় তা যেমন বুঝতে পারে না, তেমনই চাইলেও আসক্তি ছেড়ে বেরোতে পারে না। ড্রাগ, অ্যালকোহল বা সিগারেটের উপর ব্যবহাকারীর নিয়ন্ত্রণ থাকা অত্যন্ত জরুরি, অথচ আসক্তির ক্ষেত্রে এই নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে অনীহা ও অক্ষমতা দেখা দেয়, যাতে কর্মক্ষেত্রে, দৈনন্দিন জীবনে, পরিবার, বন্ধু বা অন্যান্য দায়িত্ববোধের ক্ষেত্রেও ঘাটতি হতে শুরু করে। আসক্তির কারণে মস্তিষ্কের যে পরিবর্তন হয় তা সাধারণত সেই অংশে ঘটে, যার সঙ্গে অন্যান্য মানসিক সমস্যাগুলি জড়িত, যেমন অবসন্নতা, চূড়ান্ত উদ্বেগ এবং সিজোফ্রেনিয়া। যে কোনও মাদকাশক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এই জাতীয় চূড়ান্ত মানসিক সমস্যাগুলির যে কোনওটা বেড়ে উঠতে দেখা যায়।
আসক্তি কি আগ্রহের বিষয়?
মানুষ নেশা করতে শুরু করে নানা কারণে, যেমন কৌতূহল, প্রবল মানসিক অবসাদ, নিজেকে পরিবেশের পক্ষে যোগ্য করে তোলা, বাড়িতে কারোকে দেখে কোনও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিদ্রোহের তাড়নায়। সেই সূত্রে বলা যায় যে, কিছু মানুষই আসক্ত হয়ে পড়ে, যেখানে অনেকেই কোনও বিশেষ কারণে বা সময়ে সিগারেট বা দু-এক পাত্র মদ পান করে।
চিকিৎসকরা বলেন, কিছু মানুষ নেশার শুরুতেই অন্যদের তুলনায় বেশি অসুরক্ষিত অবস্থায় থাকেন। বিশেষ করে যারা আবেগপ্রবণ, তারা সহজেই রেগে যায়, ক্ষিপ্ত হয়ে অহেতুক বিরোধিতা করে। এর বিপরীত ঘটনাও দেখা যায়, যেমন প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে বা আত্মবিশ্বাসের অভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে বলে জানাচ্ছেন নিমহান্স সেন্টার ফর অ্যাডিকশন মেডিসিন-এর সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ প্রতিমা মুর্থি। যাদের কাছে অ্যাডিকশন একটা জেনেটিক রিস্ক, অর্থাৎ কোনও নিকটাত্মীয় আসক্ত, তারাও এর বাইরে নয়।
কোনও ব্যক্তি আসক্ত কি না সঠিকভাবে বুঝতে তার পরিবেশের প্রভাব বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ব্যক্তির আসক্তি বেড়ে ওঠার জন্য মাদকটি তার কাছে কতটা সহজলভ্য, ক্রয় ক্ষমতার আয়ত্তে কিনা বা সামাজিক পরিস্থির প্রভাব কী, এই সবই দেখা দরকার।
মানুষ নেশা করে কৌতূহলে, সামাজিক অবসন্নতা কাটাতে বা অন্যান্য নানা সামাজিক প্রভাবে। অথচ জানতেও পারে না, কখন আসক্ত হয়ে পড়েছে। অ্যাডিকশনের বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে বুঝতেই পারে না, নেশা মাত্রা ছাড়াচ্ছে। সুরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার জন্য কখন থামা দরকার সেটাও টের পায় না, ফলে সতর্কীকরণের লক্ষণগুলিও অলক্ষ্যে থেকে যায়। বিশেষত পান করার পর কথা জড়িয়ে যাওয়া বা শরীর টলে ওঠার মতো স্বাভাবিক চিহ্নগুলি নজর এড়িয়ে যায়। যে জন্য আরও বেশি মাদক ব্যবহার করে নিজের বিপদ ডেকে আনে।
আসক্তির প্রভাব –
মাদকের মধ্যে থাকা কেমিক্যালগুলি শরীরের ক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। আসক্ত ব্যক্তির মন মাদক ব্যবহার জনিত আনন্দে মশগুল হয়ে থাকে। সে ব্যক্তিগত ও পেশাগত দায় থেকে নিস্তার চায়। পরিবার ও বন্ধুদের এড়িয়ে যেতে থাকে শুধুমাত্র মাদকের টানে। নেশাসক্তি ক্রমশ তার কর্তব্যকর্মে ও পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা গড়ে তুলে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
মাদকের অপব্যবহার ও আসক্তির কারণে অন্যান্য সমস্যা –
- সুরক্ষাহীনতার জন্য মনোবৈজ্ঞানিক ও মানসিক সমস্যা এবং ব্যবহারের মধ্যে অসামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়।
- স্বাস্থ্যগত কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা দেয়। অ্যালকোহল অপব্যবহারজনিত কারণে লিভারের সমস্যা, তামাকের জন্য লাং ক্যানসার এবং ড্রাগের জন্য নার্ভের ক্রিয়া ব্যাহত হয়। মদ ও তামাক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ক্যানসার সহ অন্যান্য দুরারোগ্য ব্যাধির সম্ভাবনাও থাকে।
- মদ ও তামাক দুটোতেই আসক্ত ব্যক্তির শরীরে টক্সিন সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে।
- টক্সিনের প্রকোপে অহেতুক হিংস্রতা, বেপরোয়া গাড়ি চালানো বা কামোত্তেজনার বসে সামাজিক হিংসা, দুর্ঘটনা বা আঘাতজনিত সমস্যা বাড়তে পারে।
- কামোদ্দীপনার বহিঃপ্রকাশ (বিশেষত কমবয়সি মেয়েদের মধ্যে) এবং অবাধ যৌনতার ফলে নানাপ্রকার ছোঁয়াচে রোগ বেড়ে যায়।
- সেপাসিস, অন্যান্য ইনফেকশন ও এইডসের মতো ছোঁয়াচে রোগ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ নেওয়ার ফলে বাড়তে পারে।
- অনেকের ধারণা যে, একটি ছুঁচ একজন নিজের জন্য বারবার ব্যবহার করতেই পারে, অন্য কেউ ব্যবহার না করলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা নেই। ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। স্টেরিলাইজ না করে একাধিকবার ব্যবহারের ফলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা যথেষ্ট পরিমাণে থাকে।
- মাদকে আচ্ছন্ন ব্যক্তি সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন বা একা হয়ে যায়।
- আইনি সমস্যা তৈরি হয়, যেমন জেনে বুঝে ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার করা, অথবা পরবর্তী ডোজের জন্য বেআইনি ও অবাঞ্ছিত উপায় অবলম্বন করা।
মনে রাখা দরকার, কোনও ব্যক্তি আসক্ত না হলেও নির্দিষ্ট মাদক ব্যবহারে এই সমস্যাগুলি হতেই পারে।
আসক্তির চিহ্নঃ
আশপাশের কেউ সমস্যায় পড়লে কীভাবে জানা যাবে?
শারীরিক লক্ষণ |
|
ব্যবহারের পরিবর্তন |
|
মানসিক অবস্থা |
|
উইথড্রয়াল সিম্পটম –
নেশায় নির্ভরশীল কোনও ব্যক্তি যখন মাদক সেবন থামিয়ে দেয়, তখনই কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে, যাকে উইথড্রয়াল সিম্পটম বলে। সাধারণত শারীরিক ও আবেগজনিত, এই দু-ধরনের উইথড্রয়াল সিম্পটম দেখা যায়। পরিচিত শারীরিক সমস্যাগুলি হল – ঘাম হওয়া, খিঁচুনি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, বমিভাব, হজমের সমস্যা এবং কিছু ক্ষেত্রে মানসিক ও আবেগজনিত সমস্যার মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ, মনোযোগের অভাব, সমাজ বিচ্ছিন্নতা, বিরক্তি ও অস্বস্তি।
মাদকের ব্যবহার বা আসক্তির চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধপত্র একইসঙ্গে উইথড্রাইয়াল সিম্পটমের ক্ষেত্রেও কাজ করে। কেউ যদি অ্যাডিকশন থেকে মুক্তি চায় আর উইথড্রয়াল সিম্পটমের সমস্যায় ভোগে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসক বা কাউন্সেলরের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
আসক্ত ব্যক্তি এই অবস্থায় ভয় পায়। ভাবে পরের ডোজ না নিলে আবার এমন হবে। আসক্তির জন্য ওই ব্যক্তির যাবতীয় ভাবনাচিন্তা ও চাহিদা পাল্টে গিয়ে মাদকের প্রতি কেন্দ্রীভূত হয়, যা খাদ্য, পানীয় বা ঘুমের মতো প্রাথমিক চাহিদার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে কেউ যদি জোর করে ছাড়তে চায় তখন মাদকহীন কোনও অবস্থা তার কল্পনাতেও আসে না।
আসক্ত ব্যক্তি নিজের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বিষয়ে নিশ্চিত হলেও মাদকের ব্যবহার বন্ধ করতে পারে না। মাদক বাদ দিয়ে বেঁচে থাকার কথা ভাবতেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। লাগাতার উইথড্রয়াল সিম্পটম, খিঁচুনি ও মাদকের টানের সঙ্গে লড়াই করতে হবে, ভাবতেই তারা ভীত হয়ে ওঠে। যে জন্য তারা আসক্তি কাটানোর পরিকল্পনা ত্যাগ করে তা আগামীকাল হবে বলে প্রতিজ্ঞা করে।
আসক্তি নির্ণয় –
কোনও ব্যক্তি আসক্ত কি না তা বুঝতে সাহায্য করে কিছু প্রশ্নোত্তর –
দ্য কেজ (সিএজিই বা কেজ) কোশ্চেনিয়ার অ্যালকোহল সম্পর্কিত সমস্যার জন্য। এটি নিকোটিন নির্ভরতা পরিমাপেও সাহায্য করে।
দ্য অ্যালকোহল ইউজ ডিসঅর্ডার আইডেন্টিফিকেশন টেস্ট (এইউডিআইটি বা অডিট)। যোগাযোগ http://whqlidoc.who.int/hq/2001WHO_MSD_MSB_01.6a.pdf?ua=1
দ্য ড্রাগ অ্যাবিউস স্ক্রিনিং টেস্ট (ডিএএসটি বা ডাস্ট)
দ্য ফ্যাজারস্ট্রম টেস্ট ফর নিকোটিন ডিপেনডেন্স
দ্য 4Csঅ্যাসেসমেন্ট, DSM – IV গাইডলাইন-এর ভিত্তিতে তৈরি
উল্লেখিত পরীক্ষাগুলির কয়েকটি নিজেই করা যায়। আবার কোনও মনোবৈজ্ঞানিক বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পর্যবেক্ষণেও হতে পারে। নিজেকে মাদক অপব্যবহারকারী ধরে নিয়ে যদি কেউ পরীক্ষাগুলি করে, তাকে মনে রাখতে হবে, এটি প্রথম পদক্ষেপ। সঠিক চিকিৎসার জন্য অবশ্যই সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নেওয়া বা পুর্নবাসন কেন্দ্রে আসক্ত ব্যক্তির যোগাযোগ করা উচিত।
অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধু বা আত্মীয়স্বজন লক্ষ করে যে, তাঁদের কোনও প্রিয়জন মাদকাসক্ত, তখন সহায়তার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। নিকটজনের সাহায্য পেলেও একজন মনোবৈজ্ঞানিক বা কাউন্সেলরের পরামর্শ মেনে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া উচিত। যিনি রোগী ও তার বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে নিয়ে সমস্যার গভীরতা আন্দাজ করেই চিকিৎসার পরিকল্পনা করবেন।
অ্যাডিকশন বা আসক্তির চিকিৎসা –
আসক্তি একটা দীর্ঘস্থায়ী বেড়ে চলা অবস্থা। ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশনের মতো অ্যাডিকশনের রোগীকেও চিকিৎসা এবং স্বাভাবিক জীবনের পরিসরে লক্ষ রেখেই মাদকাশক্তি ছাড়াতে হয়। অনেকেই আশা করে একবার চিকিৎসা শুরু হলেই কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ অবস্থা ফিরে পাওয়া যাবে। তবে উইথড্রয়াল সিম্পটম, খিঁচুনি এবং নেশার টানে চঞ্চল হয়ে ওঠার পর্যায় কাটিয়ে উঠে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া অনেক বেশি জটিল। মনে রাখা দরকার, নেশামুক্তি শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভর করে না, অন্যান্য অনেকগুলি বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
চিকিৎসকও রোগীর শারীরিক অবস্থা খুঁটিয়ে দেখবেন। লক্ষ করবেন, রোগীর শরীরে কোনও আঘাতজনিত ক্ষত রয়েছে কি না, অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে ইসিজি বা ইইজি করা দরকার। টক্সিনের চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দরকার কাউন্সেলিং বা থেরাপি। স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর জন্য কাউন্সেলিং-এর সময় রোগীর ব্যবহার পরিবর্তনে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। রোগীর আসক্তির সূত্রপাত কোথা থেকে হল তা জেনে নিয়ে তাকে নির্ভরতা কাটাতে সচেতন করা এবং নেশা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে কাউন্সেলর সচেষ্ট হবেন। যদি নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি নেশা ছাড়তে চায় তবে কাউন্সেলরকে খোঁজার চেষ্টা করতে হবে এর পরবর্তী সমস্যাগুলির বিষয়ে – উইথড্রয়াল সিম্পটমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কীভাবে সামলানো হবে, অন্য কেউ মদ বা ধূমপানের প্রস্তাব দিলে কী করা উচিত ইত্যাদি। ওই ব্যক্তির আবেগ বা অনুভূতির দিকগুলি বিবেচনা করে তাকে স্বাভাবিক ভা প্রকাশে সাহায্য করবেন। বিশেষত এমন কোনও মানসিক অবস্থায় বিষয়ে, যা বোঝাতেই ওই ব্যক্তি মাদকের আশ্রয় নিয়েছে।
রোগী নিজে আবার মাদক নেওয়ার ইচ্ছে এড়ানোর ব্যাপারে তথ্য দেবে, সতর্কীকরণের লক্ষণগুলি টের পাবে। কী করা উচিত সেই বিষয়ে বন্ধু, আত্মীয়দের সহায়তা আশা করবে। সেই সময়ে তাকে পারিবারিক ও গ্রুপ থেরাপিতে অংশ গ্রহণ এবং ওষুধ ব্যবহার করে নেশার টান বা রিল্যাপ্স-এর বিপদ কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ দিতে হবে।
মাদকাসক্ত প্রিয়জনের পরিচর্যা –
কোনও প্রিয়জনকে মাদকাসক্তি কাটানোর জন্য কাছ থেকে লড়তে দেখা পরিচর্যাকারীর পক্ষেও একটা যুদ্ধ। প্রিয়জনের পাল্টে যাওয়া ব্যবহার, লজ্জা, ভয় বা অপরাধবোধের মতো সমস্যাগুলিকে দক্ষ হাতে সমানভাবে সামলাতে হয়। বিশেষ অস্বস্তির কারণে অন্যকে সমস্যাটা জানাতে বাধে। প্রায়ই পরিস্থিতি খারাপ হলে কী করা উচিত বুঝতে পারে না।
প্রিয়জনের আসক্তির বিষয়ে সন্দেহ হলে বা নিশ্চিত হওয়া গেলে কী করা দরকার –
লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে আসক্ত প্রিয়জনের ব্যবহারে যে পরিবর্তনগুলি চোখে পড়ছে, সেই বিষয়ে তাকে জানানো। কোনও নাটকীয় বা হিংস্র আচরণের জন্য অপেক্ষা না করে সাহায্য করা উচিত।
সমস্যাটির বিষয়ে বেশি করে জানা দরকার, যাতে ওই প্রিয়জনের অবস্থা বুঝে সহায়তা করা যায়।
প্রিয়জনকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে যে, নেশা ছেড়ে দেওয়া একটা শর্ত, এই বিষয়ে যাবতীয় সাহায্যের জন্য তাকে নিশ্চিত করা দরকার।
ধৈর্য ধরতে হবে, প্রায়শই আসক্ত ব্যক্তি সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে সময় নেয় এবং অস্বীকার করে সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
নিজেকে বা প্রিয়জনকে আসক্তির জন্য দোষ না দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। অন্যান্য মানসিক সমস্যার মতোই এক্ষেত্রেও কোনও একটা নির্দিষ্ট কারণ নেই। এর পিছনে পরিবেশ ও জেনেটিক বিষয়গুলি কাজ করছে।
আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়াসগুলিকে উৎসাহিত করতে হবে, নিজের ভূমিকায় স্থির থাকতে হবে, কিন্তু অতিরিক্ত চাপ দেওয়ার দরকার নেই।
পারিবারিক বা দলবদ্ধভাবে থেরাপির প্রসঙ্গ প্রস্তাব করা দরকার।
সহায়তার পাশাপাশি মনে রাখা জরুরি যে, ইচ্ছাশক্তি ছাড়াও আসক্তি কাটানোর জন্য অন্য অনেক বিষয় রয়েছে। আসক্তি কোনও আবেগের বিষয় নয় এবং প্রিয় ব্যক্তিটি নেশামুক্ত হয়ে পরিশ্রম সাপেক্ষ কাজকর্ম করতেই পারে।
নিজেকে অবসাদগ্রস্ত মনে হলে পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে।
আসক্তির অন্তিম পর্ব –
সেরে ওঠার প্রথম ধাপে রয়েছে আসক্তি চিহ্নিত করে সাহায্য নেওয়ার চিন্তা গ্রহণ। কখনও মাদক ব্যবহার না করার চিন্তা সত্ত্বেও কিছু বিষয় আসক্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করে।
চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে আরোগ্যের উপায়টি বুঝে নিতে হবে। তাঁর কাছে আসক্তির বা অভ্যাস বিষয়ে কোনও কিছু গোপন করা ঠিক নয়। চিকিৎসকের পক্ষে পরীক্ষা ও পরিকল্পনার কাজে জরুরি যে কোনও তথ্যই তাকে জানিয়ে দিতে হবে।
নিজের চাহিদার বিষয়ে বাস্তববাদী হওয়া উচিত। রাতারাতি কোনও ফল লাভের আশা ঠিক নয়। আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগে। প্রথমে কাজটা কঠিন মনে হলেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই।
মনে রাখতে হবে, সেরে ওঠার জন্য সকলের জন্য কোনও ধরাবাঁধা সময় নেই। প্রত্যেকের সেরে ওঠা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির পক্ষে সব থেকে ভাল বিষয়গুলির উপর। যেমন কীসে এবং কতদিন ধরে আসক্ত, কীভাবে চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চলা হচ্ছে, আসক্ত ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা কীরূপ ইত্যাদি।
উইথড্রয়াল সিম্পটমের মোকাবিলা –
চিকিৎসকের সঙ্গে সম্ভাব্য উইথড্রয়াল সিম্পটমগুলির বিষয়ে আলোচনা করে একে কীভাবে নির্মূল করা যায় তা ঠিক করতে হবে, চিকিৎসক কি এই অসুবিধা কাটানোর জন্য কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগ করছেন? অন্য কোনও কিছু কি আসক্ত ব্যক্তি নিজে ব্যবহার করছেন?
যে কারণে কোনও ব্যক্তির মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ বেড়ে গিয়ে তাকে আবার মাদক গ্রহণে বাধ্য করে। সেই অবস্থাগুলি বোঝার চেষ্টা করা উচিত, অনেকে কোনও পার্টিতে গিয়ে অন্যকে মদ বা ধূমপান করতে দেখে নিজের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা ত্যাগ করে। এই প্রেক্ষিতকে এড়িয়ে চলা দরকার।
মদ, ধূমপান বা ড্রাগের নেশা বন্ধ করলে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ওই ধরনের নেশার টান অনুভূত হয়। ওই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এমন কোনও পরিকল্পনা দরকার, যাতে আবার নেশার প্রকোপ এড়ানো সম্ভব।
খিঁচুনি জাতীয় বা শারীরিক সমস্যা বা মানসিক টান এই ক্ষেত্রে ১৫ মিনিট থেকে আধ ঘন্টা স্থায়ী হয়। খিঁচুনি কাটিয়ে ওঠার আগে আধ ঘন্টা অপেক্ষা করা দরকার। এভাবেই উইথড্রয়াল সিম্পটম এড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা গড়ে ওঠে। এরপরেও নেশার টান অনুভব করলে, কোনও বন্ধু বা পরিজনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে, যে চিকিৎসার পরিকল্পনায় সাহায্য করবে।
নতুনভাবে কোনও কাজ শুরু করতে হবে বা কোনও হবি গড়ে তুলতে হবে।
রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসন কেন জরুরি –
আসক্তি এক দীর্ঘস্থায়ী নিয়মিত বেড়ে চলা অবস্থা। এটি যে কোনও মাদক আসক্ত ব্যক্তির ব্রেনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। ওষুধ প্রয়োগে ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে উইথড্রয়াল সিম্পটম বা খিঁচুনি কাটিয়ে মাদকের টান এড়ানো সম্ভব।কিন্তু এটাই মাদকাসক্তের পক্ষে নেশা ছাড়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তাকে বাকি জীবনেও নেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই জন্যই রিহ্যাবিলিটেশন জরুরি।
আসক্ত ব্যক্তি যে কারণে নেশায় আচ্ছন্ন হয়েছিল, সেগুলিকে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে সাহায্য করে পুনর্বাসন ব্যবস্থা। পুনরায় মাদক গ্রহণের জন্য অস্বস্তি সামলাতেও সাহায্য করে। এই অস্বস্তি দুরকম অভ্যন্তরীণ, যেমন অনেকেই আবেগ সামলাতে ড্রাগ, ধূমপান বা মদ্যপানে আসক্ত হয়। আবার বাহ্যিক কারণ হিসেবে পারিবারিক, সামাজিক বা কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা কাজ করে।
নেশাসক্তি সাধারণত জীবন যাপনে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে, দায়িত্ববোধের অভাব দেখা দেয়, পড়াশোনা বা কাজের ক্ষেত্রে মনোযোগ থাকে না। সেই সঙ্গে অবসন্নতা, সামাজিক কলঙ্কের ভয় কাজ করে। এ ছাড়াও টাকাপয়সা সংক্রান্ত সমস্যা, জুয়া খেলার প্রবণতা, বিরক্তি বা এলোমেলো মানসিকতার কারণে আবার নেশা শুরু করার সম্ভাবনা থাকে।
নেশার সমস্যা মোকাবিলার জন্য আসক্ত ব্যক্তিকে উপযোগী করে তোলাই পুনর্বাসনের লক্ষ্য। ওই ব্যক্তির জন্য মদ, সিগারেট বা ড্রাগ ব্যতীত এক নতুন জীবন গড়ে তোলা, যেখানে মাদক কোনও সমাধান নয়।
সহায়ক গোষ্ঠী কি সাহায্য করতে পারে –
মাদকাসক্তি থেকে কোনও ব্যক্তিকে সুস্থ করে তুলতে সহায়ক গোষ্ঠী দারুণ কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। ভারতে একজন মাদকাসক্তের পক্ষে সামাজিক কলঙ্ক এক বিরাট বাধা, সে বন্ধুবান্ধব বা অন্য কাউকে নিজের লড়াইয়ের কথা বুঝিয়ে উঠতে পারে না। সহায়ক গোষ্ঠী সেই ব্যক্তিকে অ্যাডিকশনের বিষয়ে সচেতন করে তুলতে সাহায্য করে। অন্যদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে খারাপ বা দুর্বল হিসেবে গড়ে ওঠা পরিচিতি পাল্টে দেয়।
নেশাসক্তি সম্বন্ধে যাদের কোনও ধারণা নেই, তাঁদের তুলনায় সহায়ক গোষ্ঠীর সদস্যরা আসক্ত ব্যক্তির করণীয় সম্বন্ধে অবশ্যই বেশি বুঝে থাকেন এবং সেইমতো তাকে চালিত করতে পারেন।
অন্যের লড়াই এবং সাফল্যের বার্তায় আসক্ত মানুষটি বুঝতে পারে যে, সে একা নয়। আর সেখানেই তার মনে আশার সঞ্চার হয়। নেশা ছেড়ে দেওয়া যখন কঠিন বলে মনে হয়, তখন সহায়তাকারীরা আসক্ত ব্যক্তির বন্ধু বা শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে তাকে সাহায্য করে।
আসক্তি বিষয়ক কল্পনা ও বাস্তব –
কল্পনা– ড্রাগের ব্যবহার বন্ধ করা খুব সহজ। শুধু ‘না’ বলা দরকার। অথবা ছেড়ে দেওয়া সোজা। কিন্তু ওদের ইচ্ছাশক্তি কমজোরি।
বাস্তব – অনেকে বিশ্বাস করেন, ড্রাগকে ‘না’ বললেই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আসক্তি ইচ্ছা বা অনিচ্ছার বিষয় নয়। আসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতায় ড্রাগ পরিবর্তন ঘটায়। ফলে ড্রাগকে ‘না’ বলা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কেউ ‘না’ বলতেই পারে, কিন্তু নিছক উইথড্রয়াল সিম্পটম ও কাঁপুনি এড়ানোর জন্যই তাকে আবার ড্রাগ নিতে হয়। অভ্যাসটাকে সম্পূর্ণ দূর করতে তাদের অনেক বেশি সহায়তা দরকার। যেজন্য আসক্তির চিকিৎসার ওষুধ ও থেরাপির যৌথ প্রয়োগ জরুরি।
কল্পনা – আমি আসক্ত এবং নেশা সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।
বাস্তব – সমস্যা বুঝতে পারাটা নেশা ছেড়ে দেওয়ার প্রথম ধাপ। নেশার ছেড়ে দেওয়া অসম্ভব নয়, তবে সময় সাপেক্ষ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তা প্রয়োজন। যদি কেউ অভ্যাস জনিত কারণে বেড়ে ওঠা সমস্যাগুলি চিহ্নিত করতে পারে তাহলে সাহায্যের খোঁজ করে নেশামুক্ত জীবনে ফিরতেই পারে।
অ্যাডিকশনঃ চিকিৎসাকেন্দ্র, ব্যাঙ্গালোর
স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন সরকারি সংস্থাঃ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ্ মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস (নিমহান্স) ভিক্টোরিয়া হসপিটাল |
অন্যান্য হাসপাতাল যাদের মনোরোগ বিভাগ রয়েছেঃ সেন্ট জন’স মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল কেম্পেগৌড়া ইনস্টিটিউট মেডিক্যাল সায়েন্সেস এম এস রামাইয়া হসপিটাল মনিপাল হসপিটাল |
নন গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন (এন জি ও)ঃ কেমিক্যাল অ্যাডিকশন ইনফর্মেশন মনিটরিং (সি এ ই এম) কেয়ারঃ সি এ আর ই সেন্টার ফর রিসার্চ, এডুকেশন, সার্ভিস অ্যান্ড ট্রেনিং (সি আর ই এস টি) দিব্যশ্রী ফ্রিডম ফাউন্ডেশন টোটাল রেসপন্স টু অ্যালকোহল অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাবিউস (টি আর এ ডি এ) |
ড্রাগ অ্যাবিউস ম্যানেজমেন্টের জন্য নার্সিংহোম বা সেন্টারঃ স্পন্দনা মাইন্ড মেডিক্যাল সেন্টার |
*সূত্রঃ ব্যাঙ্গালোর শহরে ড্রাগ অ্যাবিউস বিষয়ে প্রকাশিত নিমহানস-এর সমীক্ষার ফলাফল (২০০৩)