জুয়ার নেশা এক ধরনের মানসিক রোগঃ পর্ব-২

পারিবারিক ইতিহাস, ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ, ড্রাগের প্রতি আসক্তি এবং বয়স- সবকিছুর ক্ষেত্রেই জুয়া খেলার প্রভাব পড়তে পারে। অল্পবয়সি ছেলে-মেয়ে বিশেষ করে যারা বেশ খোলামেলা স্বভাবের হয়, তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ থাকে, চিন্তাভাবনা, মেজাজ-মর্জির হঠকারিতা থাকে, কাজকর্মের ক্ষেত্রে খুব অস্থিরতা দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দিকে এদের মনোযোগ বেশি হয়। ফলে তাদের আচরণের মধ্যে নানারকম নেশার বস্তুর প্রতি আসক্তি জন্মাতে দেখা যায়। এই বিষয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখা জরুরি, অন্যান্য আসক্তিগত সমস্যার মতো জুয়ার আসক্তিও পুরুষদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়।

এই রোগ নির্ধারণের ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণগুলিকে অনেকদিন ধরে স্থায়ী হতে হবে (এবং এই ঘটনা ঘটার এক বছরের মধ্যেই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে)। মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞরা এই রোগ নির্ধারণের জন্য মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, ব্যক্তির জীবনের ইতিহাস এবং আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

জুয়ার নেশাজনিত মানসিক রোগের সমস্যা সাধারণত বহুদিন ধরে স্থায়ী হয় এবং যদি এর সঠিক চিকিৎসা না হয় তাহলে অন্যান্য আরও অনেক জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। সেই সমস্যাগুলো হল-

  • মদ এবং ড্রাগের প্রতি আসক্তি
  • ব্যক্তিগত, পেশাগত এবং অর্থনৈতিক সমস্যা যেমন- সর্বস্বান্ত বা দেউলিয়া হয়ে যাওয়া
  • জুয়া খেলার উত্তেজনায় মানুষ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হতে পারে
  • উদ্বেগজনিত সমস্যা
  • আত্মহত্যার প্রবণতা
    এই রোগের চিকিৎসা তখনই কার্যকরী হয় যখন একজন রুগি এই চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এই রোগের চিকিৎসা মূলত করা হয় কগনিটিভ বিহেভেরিয়াল থেরাপির (সিবিটি) মাধ্যমে; মাদকাসক্তি দূর করতে যে ধরণের ওষুধ দেওয়া হয় সেই ওষুধ জুয়ার নেশা দূর করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয় এবং এই রোগ সারাতে সাহায্য করে স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা সেলফ্‌ হেল্প গ্রুপ। এক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি যে, ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ, যারা জুয়ার নেশায় আক্রান্ত হয়, তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই মনোরোগের শিকার হওয়ার ইতিহাস থাকে।

    যদি কেউ দেখেন যে তার কাছের মানুষ জুয়া খেলার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে তাহলে প্রথমে তার সমস্যাটা ভালো করে বুঝতে হবে এবং এই নেশা থেকে তাকে দূরে সরাতে উৎসাহ দিতে হবে। সঠিক সময়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে হবে এবং অতীতের কথা আলোচনা করা চলবে না। শুধুমাত্র বর্তমানের সমস্যার দিকে নজর দিতে হবে ও জুয়া কীভাবে একজন মানুষের জীবনে বিপদ ডেকে আনছে সেই বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা জরুরি। এক্ষেত্রে জুয়ার নেশায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করা একেবারেই সঠিক কাজ নয়। একবার যদি তারা ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করাতে রাজি হয় তাহলে তার কাছের মানুষের উচিত তার পাশে থাকা এবং তার জন্য অনেক সময় ব্যয় করা। তবেই একজন মানুষকে সর্বনাশা নেশা থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা সফল হয়। জুয়া খেলার মতো বদ অভ্যাস  যে মানুষের জীবনে ধ্বংস ডেকে আনতে পারে সেই বিষয়ে একজন জুয়াড়িকে সতর্ক করা প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়া এক একজনের ক্ষেত্রে এক একরকম হয়। যেমন- কাউকে জুয়াখানা বা ক্যাসিনোর বিজ্ঞাপন দেখিয়ে সতর্ক করা জরুরি, অথবা কারোর হাতে অনেক টাকা দিয়ে তাকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে এমন কাজ করা উচিত নয় যেখানে বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। আসলে বিপদ চেনানোর কাজে তাকে সাহায্য করা এবং সেই বিপদের মধ্যে যেন সে ঝাঁপ না দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা একান্ত জরুরি।

    • কাছের মানুষের আচরণের পরিবর্তনের জন্য নিজেকে দোষারোপ করা উচিত নয়। কারণ এক্ষেত্রে যে মানুষটি নেশা করছে না তার কোনও দায়িত্ব থাকে না।
    • নিজের চিন্তা বিশ্বাসভাজন বন্ধু এবং পরিবারের লোকের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একজন কাউন্সেলর বা প্রশিক্ষিত পেশাদারের সঙ্গেও কথাবার্তা বলা জরুরি।
    • যদি কারোর প্রিয়জনের জুয়ার নেশা তার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ওই নেশাগ্রস্ত মানুষটির সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা করে টাকা পয়সার সমস্যার বিষয়টি সমাধান করা জরুরি। যদি নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি টাকা পয়সার বিষয়টি নিজের দখলে রাখতে চায় তাহলে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন- এক্ষেত্রে তার জন্য আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা দরকার।
Previous articleআসক্তি কি আগ্রহজনিত বিষয়?
Next articleবিএসএমএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের মার্চ মাসের বৈকালিক সেবা সময়সূচি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here