মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় আন্ডার গ্রাজুয়েশন পর্যায়ে পাঠ্য কারিকুলামে সাইকিয়াট্রি বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে আরো বেশি পরিমানে অর্ন্তভূক্ত করার প্রতি জোর দিয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ও অনলাইন পোর্টাল মনের খবর আয়োজিত চট্রগ্রামে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এবিষয়ে অভিমত দেন।
এ সময়ে তারা দেশে শিক্ষা এবং পেশা হিসেবে সাইকিয়াট্রি এর বর্তমান অবস্থা, সংকট, সম্ভাবনা নিয়েও বিশদ আলোচনা করেন।
আজ ২৭ ডিসেম্বর চট্রগ্রামে নিজাম রোডে অবস্থিত হোটেল দ্যা পেনিনসুলা এর কনফারেন্স রুমে Psychiatry with Early Career Physicians শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয় এবং উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রবন্ধ চারটি উপস্থাপনন করেন চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর ফেস-বি রেসিডেন্ট (ইন্টার্নাল মেডিসিন) ডা. মৃণাল সাহা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা এর ফেস-বি রেসিডেন্ট(সাইকিয়াট্রি) ডা. তৈয়বুর রহমান রয়েল, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৃজনী আহমেদ, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক ডা. পঞ্চানন আর্চায্য।
সভায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও মনের খবর সম্পাদক অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব।
তিনি অংশগ্রহণকারী সবাইকে শুভেচ্ছাসহ আলোচনায় তরুণ এবং শিক্ষানবীশ চিকিৎসকদেরদের বেশি বেশি প্রশ্ন করার আহ্বান জানান।
ডা. মৃণাল সাহা তার Career Planing বিষয়ক প্রবন্ধে কেস হিস্টোরির মাধ্যমে দেশে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, পোস্ট গ্রাজুয়েশন পর্যায়ে এসে মেডিকেলেরে অন্যান্য শাখার মত সাইকিয়াট্রি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহটা কম দেখা যায়। এক্ষেত্রে তিনি শিক্ষার্থীদের আগ্রহটা মূলত নিজেদের ইচ্ছার চেয়ে মানুষের কথায় বেশি প্রভাবিত হয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি সাইকিয়াট্রি বিষয়ের উচ্চতর ডিগ্রী নেওয়ার বিস্তারিত সুযোগ এবং কর্মক্ষেত্র নিয়েও আলোচনা করেন।
Psychiatry in Early Career Physicians বিষয়ক প্রবন্ধে ডা. তৈয়বুর রহমান রয়েল বলেন, সমাজের মানুষরা চিকিৎসকদের নিয়ে ভাবে যে তাদের আয় অনেক বেশি। কিন্তু আসলে তারা অন্যান্য সরকারি চাকুরিজীবীদের তুলনায় চিকিৎসকরা অনেক বেশি সুবিধা বঞ্চিত। তাদেরকে অনেক বেশি মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়। এমনকি অনেক সময় রোগীর স্বজনদের দ্বারা শারীরিক নিগ্রহেরও স্বীকার হতে হয়।
ডা. সৃজনী আহমেদ তার Psychiatry in Day to Day Practise বিষয়ক প্রবন্ধে প্রতিদিন কী কী ধরনের রোগী আসে বা আসতে পারে সে সম্পর্কিত আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ ও তার চিকিৎসা ও ঔষধ নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে রোগীদের বিষণ্ণতা দূর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া মানসিক যেসব মানসিক রোগীরা আসেন তাদের অনেকেই শারীরিক কারণে মানসিকভাবে আক্রান্ত থাকেন তাই এবিষয়ে যত্নের সাথে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শাখার চিকিৎসকদের সাথে সমন্বয়ের গুরুত্বও তুলে ধরেন।
Psychiatry : Facts & Myths বিষয়ক প্রবন্ধে ডা. পঞ্চানন আর্চায্য সাইকিয়াট্রি, সাইকোলজি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, প্যারা সাইকোলজি বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
তিনি মানসিক রোগের চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা ও বাস্তবতা নিয়ে আলোকপাত করেন।
রোগ নির্ণয় ও প্রেসক্রিপশনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আরো বেশি সতর্ক হতে হবে বলেন। এছাড়া আবেগপ্রবণ না হয়ে চিকিৎসকদের সবকিছু বিজ্ঞান সম্মত ভাবে করার আহ্বান জানান।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিতসকরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন।
এছাড়া বক্তৃতা রাখেন চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মহিউদিদ্দন শিকদার, ইউএসটিসি এর অধ্যাপক ডা. শফিউল হাসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ, একই বিভাগের কনসালটেন্ট এসএম আতিকুর রহমান, পাল্টফর্ম এর অন্যতম সংগঠক ডা. মুহীব নীরব প্রমুখ।
প্রত্যেক বক্তাই মেডিকেল কারিকুলামে সাইকিয়াট্রি বিষয়টিকে আরো জোরদার করার আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব জানান, বিষয়টি নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টদের সংগঠন বিএপি জোরেসোরে কাজ করছে।
মনের খবর এর সাথে সহযোগী হিসেবে সভাটি আয়োজনে সহযোগিতা করে চিকিৎসকদের দাবী আদায়ের ঐক্য প্লাটফর্ম।
মনের খবর এর নিয়মিত এ আয়োজনে বৈজ্ঞানিক সহযোগী হিসেবে রয়েছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড।