শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা ও ইনজুরি প্রতিরোধ করতে কাউন্সেলিং সেবা বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা হবে। যেখানে এ সংক্রান্ত করণীয় যাবতীয় নির্দেশনা দেয়া থাকবে এবং তা অনুসরণ করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে নিয়মিত কাউন্সেলিং কার্যক্রমের আয়োজন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর (১৫) কাছে পরীক্ষা হলে মোবাইল ফোন উদ্ধারের ঘটনায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বাবা-মাকে বিদ্যালয়ে ডেকে ‘অপমান’ করেন শিক্ষকরা। পরে লজ্জা এবং ক্ষোভে আত্মহত্যা করে অরিত্রি। আত্মহত্যা ওই ঘটনাকে হাইকোর্টের দুই বিচারক হৃদয়বিদারক ও বাজে দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন।
ওই ঘটনার পর টনক নড়ে ওঠে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের। পরে নিজ উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তায় বেইলি রোডের মূল ক্যাম্পাস অডিটরিয়ামে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে এ প্রতিষ্ঠানের সকল শাখাতেও কাউন্সেলিং করানো হয়। প্রতিমাসে একবার করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করানো হবে বলে জানান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার।
সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা ও বিভিন্ন ঝুঁকি এড়িয়ে নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং নিরাপদ রাখতে আদালত থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিং করানো সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আত্মহত্যা ও সকল ধরনের ইনজুরি প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাউন্সেলিং সেবা দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা হবে। এ নীতি প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে ৫/৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে আইনজীবী, মনোবিজ্ঞানী, ডাক্তার, জাতীয় পর্যায়ের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সদস্য করা হবে।
তারা আরও জানান, কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে গত ৭ জানুয়ারি উপ-সচিব আনোয়ারুল হকের স্বাক্ষরিত সংশ্লিষ্ট বিভাগ-দফতর ও প্রতিষ্ঠানে কমিটির সদস্য মনোনয়ন করতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান জাগো নিউজকে বলেন, আদালতের নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিভাগে চিঠি দিয়ে প্রতিনিধি চেয়েছি। প্রতিনিধি নির্বাচন করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কমিটির সদস্যরা এ সংক্রান্ত একটি খসড়া জাতীয় নীতি প্রণয়ন করবে। পরবর্তীতে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেবে। এরপর একটি প্রজ্ঞপন জারি করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি বাস্তবায়নের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হবে।
সূত্র: জাগো নিউজ