‘আত্মহত্যা ঠেকাতে’ ঢাবিতে ট্যুরের ওপর নিষেধাজ্ঞা

0
12

কোনো শিক্ষক ছাড়া দলগতভাবে শিক্ষাসফর বা ভ্রমণে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগের সেই ব্যাচের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ‘আত্মহত্যা ঠেকাতে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগের চেয়ারপারসন ফাজরীন হুদা।
১৫ নভেম্বর বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিভাগের নোটিশে জানানো হয়। নোটিশে বলা হয়েছে, কোনো ক্লাস গ্রুপ ট্যুর করলে অবশ্যই বিভাগীয় প্রধানের কাছে লিখিত দরখাস্ত দিয়ে অনুমতি নিতে হবে এবং এ ধরনের ট্যুরে বিভাগের কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সঙ্গে নিতে হবে। এসব নিয়ম ভঙ্গ করলে ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। সুশীল মালাকার নামের এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এ রকমটি যদি হয়, তাহলে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি কেমন বোধ করবেন? আমরা কি প্রাইমারিতে পড়ি? দিন দিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টা কি কিন্ডারগার্টেন হয়ে যাচ্ছে না? ‘
নোটিশের এই বক্তব্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা হিসেবে দেখছেন বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ-মার্কসবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী। তিনি বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী নিজের দায়িত্ব নিতে সক্ষম। একাডেমিক জীবনের বাইরেও শেখার যে পরিসর আছে, এই ধরনের অজুহাতে তাদের সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন করা ঠিক নয়।
বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারপারসন ফাজরীন হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েরা পরিবারকে না জানিয়ে বিভিন্ন ট্যুরে যাচ্ছে। কোনো দুর্ঘটনা যদি ঘটে, তার দায় আমরা কেন নেব? তারা যদি ব্যক্তিগত ট্যুরে যায়, তাহলে বিভাগের নাম ব্যবহার করতে পারবে না এবং ফেসবুকে ছবি দিতে পারবে না। কিছু কাপল কক্সবাজার গিয়ে একসঙ্গে থেকেছে, মদ্যপান করেছে এবং দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসবের দায় আমরা নেব না। আমাদের বিভাগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বা পরিচয় ব্যবহার করতে হলে প্রথমত বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি নিতে হবে এবং দ্বিতীয়ত কোনো শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় এটা কোনো শিক্ষাসফর হবে না।’
ফাজরীন হুদা বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের বিভাগের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত ট্যুরে যাক, এ নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এ ধরনের ট্যুরে গেলে তারা বিভাগের নাম ব্যবহার করতে পারবে না এবং ফেসবুকে ছবি দিতে পারবে না৷ সামাজিক মূল্যবোধের সীমাহীন অবক্ষয় আমরা সহ্য করব না ৷ কয়েকজন অভিভাবক আমার কাছে এসেছিলেন ৷ মায়েরা জানেনই না, এসব ট্যুরে শিক্ষকেরা যান না ৷ প্রত্যেকটি মেয়ের বাসায় ফোন করে আমি বিষয়টি বলব ৷ আমাদের প্রক্টরের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে ৷ ‘
উল্লেখ্য, ১২ নভেম্বর এই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফাহমিদা রেজা সিলভী কম বয়সে বিয়ে ও পরে প্রেমঘটিত সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে ‘আত্মহত্যা’ করেন ৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলছেন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও তাদের সহযোগিতার চিন্তা মাথায় রেখেই এগুলো করা হচ্ছে ৷

Previous articleকেনিয়াতে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেই হয় কারাদণ্ড বা জরিমানা
Next articleমানসিক রোগ নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here