অনেকেই কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর গ্রহণের পর মানসিকভাবে এই ভেবে ভেঙ্গে পড়েন যে জীবন বুঝি এখানেই শেষ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বয়স বৃদ্ধি কিংবা অবসর হল জীবনের স্বাভাবিক চলমান পরিবর্তনের অংশ।
মনস্তত্ত্ববিদগণ বলেন, জীবনের যে কোন পর্যায়েই নিজেকে উপযোগী এবং কর্মক্ষম প্রমাণ করা যায়। হ্যাঁ, এটি সঠিক যে বয়স বৃদ্ধি মানুষকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয়। তবে এই দুর্বলতা যদি শরীর ছাপিয়ে মনে প্রবেশ করে তখনই মূল সমস্যাটি সৃষ্টি হয়।
একজন মানুষ যিনি তার জীবনের একটি বড় অংশ কোন পেশায় নিবেদিত হয়ে কাটিয়েছেন এবং সব সময় নিজের সামর্থ্য দিয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে এসেছেন, কর্মক্ষেত্র থেকে অবসরের পর তিনিই নিজেকে মূল্যহীন এবং অসমর্থ ভাবতে শুরু করেন।
আর এই চিন্তা ভাবনাই ধীরে ধীরে তাকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে আড়ষ্ট করে ফেলে। তাই অবসর জীবন মানেই যে থমকে যাওয়া নয় এটি প্রতিটি বয়স্ক ও অবসরপ্রাপ্ত মানুষের জানা প্রয়োজন এবং অবসর জীবনের প্রতি যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সেটি পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
মানুষের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কিছু বিশেষ পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবন সামনে এগিয়ে চলে এবং এই প্রতিটি পর্যায়ে সবাইকেই নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্যের নির্বাহ করতে হয়। যুবক অবস্থায় একজন ব্যক্তির মধ্যে সব থেকে বেশী শারীরিক ও মানসিক স্পৃহা থাকে।
এ সময়ে ব্যক্তি তার কাজকেই নিজের জীবন ভাবতে শুরু করে। যেমন- একজন ডাক্তার রোগীকে সেবা প্রদান করাকেই তার জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করেন। জীবনের একটি বড় সময় মানুষ এভাবে নিজের জীবনকে স্বীয় কাজ দ্বারাই পরিভাষিত করে।
কিন্তু বয়সের ভারে ধীরে ধীরে মানুষ তার কর্মক্ষমতা হারায় এবং এক সময় কাজ থেকে অবসর নিতে বাধ্য হয়। দৈনন্দিন জীবনে আসা এই বিশেষ পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া প্রকৃতপক্ষে বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু যদি এই পরিবর্তনকে জীবনের অন্যান্য পর্যায়ের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে সেগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখা হয়, তাহলে বোঝা যাবে তার জীবন আসলে থমকে যায়নি। বরং পরিবর্তনের নতুন একটি পর্যায় শুরু হয়েছে মাত্র। যেখানে তাকে নতুন একটি ভূমিকা এবং নতুন কোন কার্যনির্বাহ করতে হবে।
একজন সদ্য অবসর প্রাপ্ত মানুষকে এটা বোঝানো জরুরী যে, কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর তাকে কোন রকম অস্তিত্ব সংকটে ফেলবে না। তাকে হাসি খুশী থেকেই জীবনের এই পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
অবসর যেমন একটি নির্দিষ্ট রুটিন মাফিক কাজ থেকে তাকে ছুটি দেয়, তেমনি এমন অনেক কাজের সাথে যুক্ত হবার সুযোগও সৃষ্টি করে। একজন ব্যক্তির জীবন শুধু যে তার কাজের সাথেই জড়িয়ে তা নয়। তার সাথে জড়িয়ে আছে তার পরিবার ও তার আত্মীয় পরিজন।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেমন পরিবারের অংশ তেমনি সমাজেরও অংশ। শুধুমাত্র অবসর তার কাজ এবং দায়িত্বের পরিসরকে পরিবর্তন বা পুনঃনির্ধারণ করে দেয়। অবসর মানেই যে বার্ধক্য বা একাকীত্ব এই মানসিকতা থেকে প্রথমে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
যারা আমাদের জন্য ভাবে এবং আমাদেরকে গুরুত্ব দেয় তাদেরকে নিয়েই আমাদের হাসি খুশী থাকতে হবে। পরিবার ও সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেসব কাজ করতে হবে যেগুলো হয়তো কাজের চাপে এতো দিন করে ওঠা হয়নি।
সেসব সখ পূরণ করুন যেগুলো হয়তো আপনার জীবনে অপূর্ণ রয়ে গেছে। বাসায় বসে পছন্দের কাজ করুন বা ঘুরে আসুন দূরে কোন দর্শনীয় স্থানে। এভাবে জীবনকে উপভোগ করুন।
অবশ্যই দীর্ঘদিনের কর্মক্ষেত্র প্রতিটি মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত আবেগের জায়গা। কিন্তু এটিও মিথ্যা নয় যে, আমাদের জীবন নিয়ত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীলতাকে মেনে নিয়েই আমাদের জীবন যাপন করতে হয় আর এই মেনে নেওয়ার মাঝেই আছে চির শান্তি এবং স্ফীতি।
তাই অবসর জীবনকে নেতিবাচক ভাবে না দেখে এটিকে জীবনের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখুন। মনোবল এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে বলুন, অবসর মানেই থেমে যাওয়া নয়।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/resilience/202109/never-too-old
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে