স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন : শিমুল মুস্তাফা

0
220

[int-intro] তাঁর দরাজ কণ্ঠের আবৃত্তি প্রাণ দেয় কবিতাতে। পরিবেশ পরিস্থিতি আর শ্রোতারা আবেশে বুঁদ হয়ে যান। দুই বাংলার অন্যতম সেরা আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফার মনের খোঁজ খবর জানাচ্ছেন অভ্র আবীর [/int-intro]
[int-qs]কেমন আছেন?[/int-qs]
[int-ans]ভালো আছি।[/int-ans]
[int-qs]কিভাবে ভালো থাকেন?[/int-qs]
[int-ans]ভালো থাকাটা হচ্ছে আসলে, ‘ভালো আছি মনে করলেই ভালো থাকা যায়’।[/int-ans]
[int-qs]ভালো থাকার কোনো গোপন রহস্য আছে?[/int-qs]
[int-ans]সবসময় মনে করি, যা আছি, যেমন আছি, বেশ ভালো আছি।[/int-ans]
[int-qs]ভালো থাকা কি জরুরি?[/int-qs]
[int-ans]অবশ্যই জরুরি। কেননা পৃথিবীতে মানুষের জন্য ভালো থাকার চেয়ে জরুরি কিছু হতে পারে না। আমরা সবাই ভালো থাকার জন্যেই সব করছি। কেউ এভাবে ভালো আছে। আবার কেউ ওভাবে।[/int-ans]
[int-qs]ভালো থাকার জন্য বিশেষ কোনো কিছু করা উচিৎ?[/int-qs]
[int-ans]ঠিক বিশেষ কিছু না। তবে শরীর ভালো থাকলে সবই ভালো থাকে। অনেকে বলেন, মানসিক সুস্থতা থাকলে সব ঠিক থাকে। আমি মনে করি আমাদের মস্তিষ্ক বা মন তো শরীরেরই অংশ; তাই শরীর ভালো থাকলে সবকিছু ঠিকঠাক চলে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেই তো আমি আমার কাজ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারবো। সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবো।[/int-ans]
[int-qs]কিভাবে ভালো থাকতে হয়?[/int-qs]
[int-ans]ভালো থাকাটা খুবই সহজ। নিজের অবাস্তব কল্পনা এবং উচ্চাকাঙ্খাগুলোকে দমিয়ে অবস্থান বুঝে নিয়ে ঠিকঠাক কাজ করে যেতে পারলেই ভালো থাকা যায়। একটা প্রবাদ আছে, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’। আমরা সবাই তো ভাবি, স্বপ্ন দেখবই যখন, ছোট দেখব কেন? বড়-ই দেখবো। তবে আমার মনে হয় মানে জীবন অভিজ্ঞতা থেকে আমি যা শিখেছি তা হলো, স্বপ্ন দেখব ছোট। কিন্তু কাজ করব বড়। ছোটো আশায় বড় ফল পেলে আনন্দ এমনিতেই বেশী হয়।[/int-ans]
[int-qs]মন খারাপ হয়?[/int-qs]
[int-ans]অনুভূতি থাকলে মন খারাপ তো হবেই। এটা আমাদের শরীরের-ই একটা কার্যকর ব্যাপার। আমারও হয়।[/int-ans]
[int-qs]মন খারাপটা কেন হয়?[/int-qs]
[int-ans]আমাদের আসলে দু’রকমের মন খারাপ হয়। একটা ক্রোধের কারণে মন খারাপ আরেকটা কষ্ট বা অনুভবের জন্য মন খারাপ হয়।[/int-ans]
[int-qs]তখন কি করেন?[/int-qs]
[int-ans]সাধারণত অনুভবের মন খারাপ বা যেটা দেখে মন বিষিয়ে যায়, সেটাকে ওভারকাম করার চেষ্টা করি, যদি সামর্থ্যে কুলায়। যদি সামর্থ্যে না কুলায় তাহলে মনকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করি। তবে মন খারাপ হলে সবচেয়ে বেশী যা করি তা হচ্ছে, কবিতা পড়ি কিংবা প্রিয় কোনো একটা বই নিয়ে বসে পড়ি। এগুলো নিয়েই মন খারাপটা সারিয়ে ফেলি। মন খারাপটা ছড়িয়ে দেই না। নিজের মধ্যেই রাখি।[/int-ans]
[int-quote]ভালো থাকাটা খুবই সহজ। নিজের অবাস্তব কল্পনা এবং উচ্চাকাঙ্খাগুলোকে দমিয়ে অবস্থান বুঝে নিয়ে ঠিকঠাক কাজ করে যেতে পারলেই ভালো থাকা যায়। একটা প্রবাদ আছে, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’। আমরা সবাই তো ভাবি, স্বপ্ন দেখবই যখন, ছোট দেখব কেন? বড়-ই দেখবো। তবে আমার মনে হয় মানে জীবন অভিজ্ঞতা থেকে আমি যা শিখেছি তা হলো, স্বপ্ন দেখব ছোট। কিন্তু কাজ করব বড়। ছোটো আশায় বড় ফল পেলে আনন্দ এমনিতেই বেশী হয়।[/int-quote]
[int-qs]সবচেয়ে বেশি কি কারণে মনটা খারাপ হয়?[/int-qs]
[int-ans]মানুষ খুবই হিংস্র প্রাণী। পৃথিবীতে প্রতিদিন কত মানুষ কত প্রাণী মারছে। কিন্তু কোথাও কেউ কিছু বলছে না। অথচ একদিন একটা হাঙ্গর একটা মানুষকে খেয়ে ফেললে সেটা ফলাও করে বলা হয়। ফলে অবস্থাটা এমন হয়ে যাচ্ছে, ওরা আমাদের কিছু করতে পারবে না। কিন্তু আমরা ওদের ঠিকই নিধন করছি রোজ। যখন আশেপাশের বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষগুলোর ভদ্রবেশী সাজে, তাদের হিংস্র কাজগুলো দেখি, তখন সত্যি মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।[/int-ans]
[int-qs]হিংসা হয়?[/int-qs]
[int-ans]ছোটবেলায় হত। এখন আর হয় না।[/int-ans]
[int-qs]দুঃখ, কষ্ট এগুলো নিয়ে কি ভাবেন?[/int-qs]
[int-ans]দুঃখ, কষ্ট, হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ এগুলো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আমি কষ্ট করছি, অথচ আমার পাশের লোকটা কষ্ট না করে উপরে উঠে যাচ্ছে এই মনোভাব থেকেই হিংসা আসে। তবে সবসময়ই যীশু খ্রিষ্টের একটা কথা মনে করি, ‘ওরা অবুঝ, ওদেরকে ভালো থাকতে দাও।’ এই কথাটা আমি খুব ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করি। আর পারিবারিকভাবে পাওয়া শিক্ষারও একটা প্রভাব আছে। আমি গাড়িতে যাচ্ছি। অথচ পাশেই আমার ছেলে বা মেয়ের বয়সী একটা ছোট্ট শিশু খাবার জ্বালায় বসে আছে ফুটপাতে। এগুলো দেখলে সত্যিই দুঃখ পাই।[/int-ans]
shimul-mustafa-abriti
[int-qs]কিভাবে সে দু:খ ভোলেন?[/int-qs]
[int-ans]আমি আমার সীমা সম্পর্কে খুব সচেতন। তাই ওভাবেই এগুলোকে নিবারণ করি।[/int-ans]
[int-qs]রাগ হয়?[/int-qs]
[int-ans]খুব। অনেকে বলেন, আমি বদরাগী। একটু ধীর-স্থিরভাবে কথা বললেই অনেকে ভাবেন, রাগ করেছি। আমার রাগটা হয় আসলে ভালো করার আকাঙ্খা থেকে।[/int-ans]
[int-qs]রাগলে কি করেন?[/int-qs]
[int-ans]রাগের জায়গাটা আসলে একেকজনের একেকরকম। আমার ছেলেমেয়েদের বকাঝকা করি বা আমার কাছে যত ছেলেমেয়েই এসেছে সবাইকে শাসন করেছি।[/int-ans]
[int-qs]রাগ না অভিমান কোনটি আপনার মধ্যে বেশি?[/int-qs]
[int-ans]বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অভিমান করি।[/int-ans]
[int-qs]রাগের কারণে তো ভুল করার সম্ভাবনা থাকে?[/int-qs]
[int-ans]জীবনে রাগ করে বেশ কয়েকটা ভুল করেছি তবে পরে বুঝতে পেরেছি এগুলো ছিল সাময়িক ভুল।[/int-ans]
[int-qs]রাগ দমানোর কোনো পন্থা আছে?[/int-qs]
[int-ans]দমিয়ে রাখার জন্য আমি সবসময়ই আগে থেকেই ছোট আশা করে থাকি, যাতে পরে সেটি পুরণ না হলেও রাগ না হয়।[/int-ans]
[int-qs]কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করেন?[/int-qs]
[int-ans]চুপচাপ থাকতে চেষ্টা করি। তাতেও কাজ না হলে আমার আবৃত্তির ভুবনে ঢুকে পড়ি।[/int-ans]
[int-qs]কখনো মনে হয়েছে মানসিকভাবে অসুস্থ আছেন?[/int-qs]
[int-ans]আমরা আসলে সবাই মানসিকভাবে কম-বেশী অসুস্থ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আর্থ-সামাজিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। তাই সবাই কম-বেশি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছি। বেশীরভাগ মানুষ দিনের অনেকটা সময় নানা চিন্তা-দুশ্চিন্তা করেন। সেজন্য মানসিক অসুস্থতা আমাদের জন্য স্বাভাবিক হয়ে গেছে[/int-ans]
[int-qs]কখনো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়েছেন?[/int-qs]
[int-ans]নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। কেননা জন্মের পর যেদিন থেকে আমার বোধ হয় সেদিন থেকে আজ অব্দি অসুখে পড়িনি। কখনো কখনো মনে হয়, আবৃত্তির জন্যই সুস্থ আছি।[/int-ans]
[int-qs]স্বপ্ন দেখেন?[/int-qs]
[int-ans]প্রতিদিন।[/int-ans]
[int-qs]স্বপ্নে কি দেখেন?[/int-qs]
[int-ans]সবচেয়ে বেশি দেখি শৈশব। সারাদিন খেলে বেড়াচ্ছি বা সেই ছোট্ট হলুদ বলটাকে কোলে নিয়ে বসে আছি।[/int-ans]
[int-qs]কেমন মানুষ পছন্দ করেন?[/int-qs]
[int-ans]যারা সৎ, সহজ-সরল জীবন যাপন করছেন।[/int-ans]
[int-qs]আবৃত্তির প্রভাব অন্যের মনের উপর কীভাবে পড়ে?[/int-qs]
[int-ans]নানা আর্টের মধ্যে সাউন্ড মেডিটেশন অন্যতম। আবৃত্তির মধ্য দিয়ে পজিটিভ কিছু সাউন্ড শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করি। পজিটিভ শব্দ কারো শরীরে পৌঁছালে এক ধরনের ভালো লাগা আপনাআপনিই শুরু হয়ে যায়। জীবনটা আমার কাছে হোজ্জার গল্পের মতো। নাসিরউদ্দীন হোজ্জা মৃত্যু শয্যায় স্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন ‘আমাদের বিয়ের শাড়িটা একটু পড়ে আসতে পারবে?’ তুমি তো একটু পরে মারা যাবে। শাড়ি পড়ে কি হবে?’ ‘আমার জন্য না। আজরাইল এসে যদি তোমার মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আরো দুটো মিনিট অপেক্ষা করে, তাহলে তো আরো দুটো মিনিট আমি বেশি বাঁচতে পারবো।’[/int-ans]
[int-qs]ভালোবাসা ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখেন?[/int-qs]
[int-ans]বেঁচে থাকার জন্য যেমন ভালো থাকা জরুরি, তেমনি ভালোবাসাও। পৃথিবীতে আমরা ভালোবাসা দিতে-নিতে এসেছি।[/int-ans]
[int-qs]অন্যের ভালোবাসা পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার গোপন রহস্য কি?[/int-qs]
[int-ans]অনেকে প্রায়ই বলে, আপনি খুব সহজ, সরল। আমাকে সবাই সম্মান করে। ‘নাথশাস্ত্র’ বলে একটি শাস্ত্র আছে, যার ধারাবাহিকতা লালন বা বাউল জীবন। সেই জীবনধারা থেকে আমি শেখার চেষ্টা করি। পরিবারের সবাই, আত্মীয়-স্বজনও আমাকে খুব ভালোবাসে। এই ভালোবাসার মূল্য বুঝি। কখনোই অবমূল্যায়ন করি না। এজন্যেই হয়তো ভালোবাসাটা পাই। যশ, খ্যাতি এগুলোর প্রতি খুব বেশি আকৃষ্ট হই না। মনে করি, যশ প্রতিপত্তি মানেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নয়।[/int-ans]
[int-qs]অন্য কোনো পেশায় কি ঠিক এভাবেই সফল হতে পারতেন বলে মনে হয়?[/int-qs]
[int-ans]পেশাগতভাবে আমি সফল না। কখনো সফল হতে চাইনি। বিশ্বাস করি, মননের সঙ্গে কখনো সফলতাকে মেশানো যায় না। তাহলে সেটা আর মনন থাকে না। সবসময়ই মনে করি, অভাব মানুষকে সামনের দিকে পরিচালিত করে। কখনোই বিলাসিতা পছন্দ করি না। তবে অন্য যে কোনো পেশায় থাকলে যথেষ্ট সফল এবং বিত্তবান থাকতাম এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ। কেননা কলেজ জীবনেই নিজের টাকায় গাড়ি কিনেছি।[/int-ans]
[int-qs]স্মৃতি কাতরতা আছে?[/int-qs]
[int-ans]আমি খুব বেশি স্মৃতি কাতর। সবসময়ই ভুগি। আর স্মৃতিগুলোও খুব একটা মধুর না। খুব কষ্টের কিছু স্মৃতি আছে। তবে স্মৃতিকাতরতায় কখনো হতবিহ্বল হয়ে পড়ি না। সবসময় সেটা ওভারকাম করতে চেষ্টা করি। নিজেকে খুব সহজে ভাঙতে দেই না। সবসময় ভাবি, যেহেতু এটা হয়েছিল, এখন তাহলে সামলে নেওয়া যাক। মনে হয়, যারা বেশি বোধসম্পন্ন তারাই স্মৃতিকাতরতায় বেশি ভোগেন। পেছনে না ফিরে বরং সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।[/int-ans]
[int-qs]কোন সময়টা বেশি মিস করেন?[/int-qs]
[int-ans]শৈশবের ভাঙ্গা খেলনাগুলো দেখলে সে সময়টাকে খুব মিস করি। এছাড়াও জীবনের যে কোনো দুর্ঘটনাকে ওয়েলকাম করে আসছি। উত্থান বা পতন আমার কাছে বড় কিছু না।[/int-ans]
[int-qs]নিজের সম্পর্কে আর কোনো তথ্য?[/int-qs]
[int-ans]আমি একদমই গোপনীয় মানুষ না। অকপটেই সত্য বলে দিতে পারি।[/int-ans]
[int-qs]মানুষ হিসেবে নিজের কাছে?[/int-qs]
[int-ans]সহজ সরল জীবন বেছে নিয়েছি। সততাকে জীবনের চেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছি। কিছু না কিছু বাস্তব দায়দায়িত্ব স্বীকার করে আমরা এগিয়ে যাই। সেজন্য আমার ছেলেমেয়েদের সবসময়ই বলি, ‘সিগারেট খেয়ে ৫০ বছর বাঁচা ঘুষ খেয়ে ৮০ বছর বাঁচার চেয়ে ভালো।’[/int-ans]
[int-qs]জীবন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?[/int-qs]
[int-ans]কখনোই পরের দিনটি সাজাতে চাই না। সবসময়ই দক্ষতা এবং অবস্থান দিয়ে পরিস্থিতি ভালো বা মন্দ যাই হোক, সেটাকে অভিনন্দন জানাতে তৈরি থাকি।[/int-ans]
[int-quote]আমি খুব বেশি স্মৃতি কাতর। সবসময়ই ভুগি। আর স্মৃতিগুলোও খুব একটা মধুর না। খুব কষ্টের কিছু স্মৃতি আছে। তবে স্মৃতিকাতরতায় কখনো হতবিহ্বল হয়ে পড়ি না। সবসময় সেটা ওভারকাম করতে চেষ্টা করি। নিজেকে খুব সহজে ভাঙতে দেই না। সবসময় ভাবি, যেহেতু এটা হয়েছিল, এখন তাহলে সামলে নেওয়া যাক। মনে হয়, যারা বেশি বোধসম্পন্ন তারাই স্মৃতিকাতরতায় বেশি ভোগেন। পেছনে না ফিরে বরং সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।[/int-quote]

Previous articleশিশুর বিকাশ-৬ (পাঁচ থেকে আট বছর)
Next articleকোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে গেলে অস্থির হয়ে পড়ি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here