সামাজিক ভীতি বা সোশ্যাল ফোবিয়া

0
98

ডা. মো. আব্দুল্লাহ ছায়ীদ
এমবিবিএস; এমডি(সাইকিয়াট্রি)
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ,
নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ, সিলেট

সামাজিক ভীতি বা সোশ্যাল ফোবিয়া  হলো এক জাতীয় উদ্বেগজনিত মানসিক সমস্যা যা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে সামাজিক ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের প্রতিদিনকার জীবনে যথেষ্ট সংকট ও প্রতিবন্ধকতার তৈরি করে। সোশ্যাল ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তি অচেনা লোকের সামনে খুব অস্বস্তিবোধ করেন। এই অনুভূতি এতই কষ্টকর হতে পারে যে আক্রান্ত ব্যাক্তি হয়ত লোকের সঙ্গে মেলামেশাই করতে পারবেন না। সব সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে যান। সোশ্যাল ফোবিয়ার লক্ষণগুলো হল: মনে হবে লোকজন তাকিয়ে আছে, কী করছি না করছি তার উপর নজর রাখছে, এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি অপরিচিত লোকের সঙ্গে আলাপ করতে চান না, দোকানে বা রেস্তোরাঁতে বা যেখানে মানুষ আছে সেই জায়গা এড়িয়ে চলেন। এছাড়াও মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঘামতে থাকা,  বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা কাঁপা, বারবার বাথরুমে যাবার তাড়না, হাত বা পা ঝিমঝিম করা বা অসাড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। অন্যরা তাকে দেখে বুঝতে পারবে সে অস্বস্তিতে আছে এটা মনে করে মুখ লাল হয়ে যায়, তোতলানো শুরু হয় বা হাত-পা কাঁপে।  এই উপসর্গগুলো টেনশন আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।সোশাল ফোবিয়ার চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা ও ঔষধ সংক্রান্ত চিকিৎসা।

সাইকোলজিকাল চিকিৎসা:

সোশ্যাল স্কিলের প্রশিক্ষণ

এখানে সামাজিক দক্ষতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যেমন চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা, কথোপকথন শুরু করা। অনুকরণ, Role play (অভিনয়ের মাধ্যমে শেখানো), নির্দেশিত অনুশীলন, ভিডিও প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়গুলো শেখানো হয়।

গ্রেডেড সেলফ এক্সপোজার

ভীতিকর পরিস্থিতিগুলোর একটা তালিকা তৈরি করা হয় তারপর এদের পরপর সাজিয়ে নেয়া হয় সবচেয়ে কম ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে সবচেয়ে বেশী ভীতিকর পরিস্থিতি্র ক্রম অনুযায়ী। সবচেয়ে সহজ পদক্ষেপটি প্রথমে নেয়া হয় থেরাপিস্টের সাহায্যে। স্বাচ্ছন্দবোধ করলে পরের ধাপে যাওয়া হয়। এক এক করে এগোলে সবচেয়ে ভয়ের পরিস্থিতিও সামলানো যায়।

কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি

সোশ্যাল ফোবিয়ার আক্রান্ত মানুষের চিন্তা, আবেগ, অনুভুতি ও আচরণের সমস্যাগুলো কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপির মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় এবং সেগুলোর সমাধান করা হয়।

রিলাক্সেশন ট্রেনিং

অনেক ধরনের রিল্যাক্সেশন ব্যায়াম প্রচলিত রয়েছে, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, মাংসপেশির শীথিলায়ন ব্যায়াম (progressive muscle relaxation training), কল্পনায় রিলাক্সেশন।

ঔষধসংক্রান্ত চিকিৎসা:

এন্টিডিপ্রেসেন্ট জাতীয় ঔষধ যেমন অ্যামিট্রিপটাইলাইন,  ফ্লুওক্সেটিন, সারট্রালিন। ঔষধ অল্প মাত্রায় প্রথমে দেয়া হয়, তারপর আস্তে আস্তে মাত্রা বাড়ানো হয় এবং ধীরে ধীরে বন্ধ করা হয়। এছাড়াও বিটা ব্লকার ও বেনজডায়াজিপাইন জাতীয় ঔষধও দেয়া যায়।অনেক সময় ঔষধ পুরোপুরি কাজ করতে কিছু সময় লাগে, তাই ধৈর্য নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মত ঔষধ সেবন করতে হয়।

 

Previous articleবুলিং : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন আতঙ্ক
Next articleহাইপোম্যানিক, ম্যানিক এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here