বুলিং : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন আতঙ্ক

0
9

নুসরাত জাহান। বয়স ১২। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। হঠাৎ করেই তার স্কুলের প্রতি প্রচণ্ড অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। সে স্কুলে যেতে চায় না। কেন যেতে চায় না তার মা—বাবা জিজ্ঞেস করলে বলে তার স্কুল আর ভালো লাগেনা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই কিছু ছেলে তাকে খারাপ কথা বলে। এতে সে খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়। পাশাপাশি স্কুলে ক্লাসমেটরা প্রায়ই তার নাম ব্যঙ্গ করে ডাকে, তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। বান্ধবীদের কেউ কেউ তার সঙ্গে কথা বলে না, কিছু ছেলে—মেয়ে একজোট হয়ে তাকে কটাক্ষ করে কথা বলে। এতে নুসরাতের খুব খারাপ লাগে, স্কুলে তার খুব অসহায় মনে হয়। ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারে না।
নুসরাত বুলিংয়ের শিকার। এমন হাজারো শিশু—কিশোর প্রতিনিয়তই কোনো না কোনোভাবে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। যার ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে তাদের মানসিক বিকাশ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং ও বুলিং নিয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে চাইলে একেকজন একেক মন্তব্য করেন।
ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী সৃষ্টি সেন গুপ্ত বলেন, ‘‘র‌্যাগিং এবং বুলিং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা যার দরুন শিক্ষার্থীদের শুরুতেই মন ভেঙে যায়। বিশেষ করে বাইরে থেকে আসা একজন শিক্ষার্থীর জন্য মানিয়ে নেওয়ার কাজটা আরও দুরূহ হয়ে ওঠে।’’
গ্লাস এন্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং (জিসিই) বিভাগের শিক্ষার্থী মাজেদুল হাসান রাহাত বলেন, ‘‘বুলিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিঃসংকোচে মেলে ধরতে পারে না।’’
ইলেকট্রিক্যাল এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিসা তাবাসসুম শাম্মা বলেন, ‘‘যারা বুলিং করে এটা তাদের ব্যক্তিত্বের নেতিবাচক বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই না।’’
আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং (ইউআরপি) বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিয়া আঞ্জুম রিমি বলেন, ‘‘র‌্যাগ দিয়ে, বুলিং করে একজন শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেওয়া হয়।’’
সর্বশেষ প্রকাশিত এক জার্নালে দেখা যায়, বুলিংয়ের মতো ঘটনার শিকার হয়েছেন এমন ৪৪.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তাদের ভেতর নাম নিয়ে ব্যঙ্গাত্মকের বচনের শিকার ৩৮.৯ শতাংশ। শারীরিক গঠন নিয়ে ২৩.১ শতাংশ, শরীরের আকার আকৃতি নিয়ে ৩০.৮ শতাংশ এবং শরীরের ওজন নিয়ে ২৪.৫ শতাংশ। এ ছাড়া পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে নানান মন্তব্যের শিকার হন ২৩.৯ শতাংশ, বিভিন্ন কথা দিয়ে মজার মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার ৫৫.১ শতাংশ। পোশাক নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার ১৯.৪ শতাংশ।
বুলিং সমাজে ভয়াবহ সমস্যার রূপ নিচ্ছে। এর সমাধান ও প্রতিকার না করা হলে শিশু, কিশোর ও যুবসমাজ সুশৃঙ্খল জীবনের বলয় থেকে ছিটকে পড়বে। জড়িয়ে পড়বে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। শিশুদের ক্ষেত্রে বুলিং দীর্ঘমেয়াদি মানসিক প্রভাব ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে বুলিংয়ের শিকার হয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করে বসে।
শিক্ষার্থীদের ছাত্রজীবন সুন্দর করতে বুলিং বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং (ইউআরপি) বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনুভা রহমান তন্দ্রা।
বুলিং একটি সাধারণ ঘটনা হলেও তা শিক্ষার্থীর মানসিক সুস্থতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বুলিংয়ের ব্যাপারে সচেতন এবং সোচ্চার হওয়া দরকার প্রত্যেকের। বুলিংয়ের কারণে একজন শিক্ষার্থী তার সামাজিক বলয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। ফলে তার মধ্যে হতাশা, নৈরাজ্য ও অপরাধ প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে, যা কোনোভাবেই কারও কাম্য নয়।

Previous articleসবসময়ই কেমন অস্বস্তি বোধ করি
Next articleসামাজিক ভীতি বা সোশ্যাল ফোবিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here