নানা কারণে মন খারাপ হতেই পারে। দুঃখবোধ একটি মৌলিক আবেগ । সুস্থ মানুষের জীবনে দুঃখবোধ হওয়া এবং মন খারাপ থাকা স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণ কথ্য ভাষায় অনেক সময় অতি স্বাভাবিক মন খারাপকে আমরা বিষণ্নতা বলে থাকি। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘বিষণ্নতা’ বা ‘ডিপ্রেশন’ বলতে যা বোঝায়, তা সাধারণ মন খারাপের চেয়ে কিছু বেশি। বিষণ্নতার ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। শরীর ও মনের ভেতর থেকে এই ‘এন্ডোজেনাস’ বিষণ্নতার উৎপত্তি। আবার কখনো বিভিন্ন ব্যক্তিগত বা সামাজিক কারণে সৃষ্ট দুঃখবোধ যদি অযৌক্তিকভাবে বেশি তীব্র ও দীর্ঘ সময় বিরাজমান থাকে, তখন তাকে বলে ‘রিঅ্যাকটিভ’ বিষণ্ণতা। আজকের আলোচনার বিষয় সঙ্গীর বিষণ্ণতা।
সঙ্গী যদি বিষণ্ণতায় ভোগেন দাম্পত্য সম্পর্কও বিষণ্ণতায় ভোগে। হতাশা, বিরক্তি, রাগ, সঙ্গীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা -এ রকম নানা কারণে হতে পারে বিষণ্ণতা। এই সময়টাতে জীবনসঙ্গীর মানসিক সহায়তা খুবই প্রয়োজন। এককথায় বলতে গেলে, আপনার সঙ্গ জীবনসঙ্গীর বিষণ্ণতা দূর করবে।
একাকিত্ব
একাকিত্বের কারণে বিষণ্ণতা হতে পারে। সঙ্গীকে অনুভব করাতে হবে সে একা নয়। তার যেকোনো সমস্যায় সে আপনাকে কাছে পাবে। যখন সে বিষয়টি মন থেকে উপলব্ধি করতে পারবে, তখন ধীরে ধীরে সে বিষণ্ণতা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করবে।
দাম্পত্য জীবনে কলহ
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাম্পত্য জীবনে কলহের কারণে বিষণ্ণতা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে সঙ্গীকে অনুভব করাতে হবে, সংসারে টুকিটাকি ঝামেলা সবারই হয়ে থাকে। এ বিষয়কে যতটা সম্ভব সহজ করে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সম্পর্কে ঝগড়া হতেই পারে। কিন্তু সমস্যা তখনই সৃষ্টি হয়, যখন এই ঝগড়া কেউ ধরে বসে থাকে এবং সে মনে মনে ভাবে, এই সম্পর্কে জড়িয়ে সে অনেক ভুল করেছে। তখনই তার মধ্যে বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ধৈর্যসহকারে সঙ্গীকে বোঝাতে হবে। আপনার কথায় বন্ধুত্ব ও আশ্রয়ের ইঙ্গিত থাকতে হবে।
ভুল হলে
কখনো ভুল হলে অনেকে সেই ভুলটাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে একা একা বিষণ্ণতায় ভোগে। আপনাকে তাকে বোঝাতে হবে, ভুলটাতে আপনিও সমানভাবে দোষী। সঙ্গীকে বোঝাতে হবে, নিজের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে অযথা বিষণ্ণতায় ভোগার কোনো মানেই হয় না।
বিবাহবিচ্ছেদ
বিবাহবিচ্ছেদের একটা বড় কারণ হলো বিষণ্ণতা। অর এ ঘটনা যেন না ঘটে- সে দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। আপনার অস্তিত্ব এবং সান্ত্বনার দু-একটি কথাই আপনার সঙ্গীকে প্রফুল্ল করে তুলবে। যে পরিস্থিতি তাকে বিষণ্ণ করে তুলছে, তা সমাধানের চেষ্টা করুন। দেখবেন, ধীরে ধীরে আপনার সঙ্গীও এই বিষণ্ণতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করবে।
আত্মহত্যা
অনেকে বিষণ্ণতার কারণে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। আপনার সঙ্গী কতটা বিষণ্ণ, কীভাবে এই বিষণ্ণতা তৈরি হলো এবং কীভাবে এর সমাধান হওয়া সম্ভব-এসব বিষয়ে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিন। এসব বিষয় নিয়ে হেলাফেলা করবেন না। কারণ, একটু অবহেলা আর অসচেতনতায় আপনার সঙ্গীকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলতে পারেন। তাই যতটা সম্ভব এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করুন।
প্রিয় মুহূর্ত
সঙ্গীকে বারবার আপনাদের জীবনের প্রিয় মুহূর্তগুলোর কথা মনে করিয়ে দিন। এর ফলে সে জীবনের ভালো সময়গুলো অনুভব করতে পারবে এবং আবারও ভালো কিছু মুহূর্তের আকাঙ্ক্ষা তার মনে জাগবে, যা তার বিষণ্ণতাকে দূর করতে সাহায্য করবে।
সর্বশেষ যদি বলতে হয়-
বিষণ্নতার কারণে যদি সঙ্গীকে কোনো চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়, তাহলে আপনি তার সঙ্গে যাবেন। সে যেন অনুভব করে, এ বিষয়ে আপনি তাকে মানসিকভাবে পুরোপুরি সাহায্য করছেন। অনেক সময় প্রিয়জনের সঙ্গ মানুষকে সব সমস্যা মোকাবিলায় সাহস জোগায়। আর অপনার সাহায্যেই সঙ্গীর এই বিষণ্ণতা দূর হওয়া সম্ভব।