আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার আগ পর্যন্ত শিশুরা পিতামাতার আশ্রয়েই থাকে। এ কারণে শিশুদের মানসিকতা এবং ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন করে শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে পিতা পাতার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ সময়ে পিতা মাতা তাদের শিক্ষা দানের, বড় করে করে তোলার, এবং ভবিষ্যৎ জীবনে উন্নতির পথে অগ্রসর হওয়ার অনুপ্রেরণা প্রদানের সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে তারা যেন একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন গড়ে তোলার লক্ষে সুস্বাস্থ্য এবং উন্নত মানসিকতার অধিকারী হয় সেই প্রচেষ্টা করার সুযোগ ও পেয়ে থাকে। অনেক সময় পারিপার্শ্বিক, ব্যক্তিগত এবং সামাজিক অবস্থার কারণে অনেকে হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু শিশুদের সুস্থ সুন্দর একটি জীবন উপহার দিতে তাদের যতোটা সম্ভব শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে তোলা উচিৎ।
বেঁচে থাকা এবং মানুষের মত বেঁচে থাকার মধ্যে অনেক বড় ব্যবধান রয়েছে। মানুষের মত বেঁচে থাকতে হলে মন মানসিকতার বিকাশ হওয়া জরুরী। এ কারণে শিশুদের উন্নত মানসিকতা গড়ে তোলার জন্য সর্বদা অনুপ্রাণিত করতে হবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের অস্তিত্ব এবং বেঁচে থাকার অর্থ বোঝাতে হবে। নতুন সম্ভাবনার দিকে তাদের দৃষ্টি সম্প্রসারিত করতে হবে এবং তাদে চিন্তাধারা এবং অনুভবে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রয়াস করতে হবে।
বিভিন্নভাবে আমরা শিশুদের জীবনের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সহায়তা করতে পারি যেন তারা সব থেকে ভাল চিন্তা ধারা নিয়ে মানুষের মত বাঁচতে শেখে। এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হল যা শিশুকে অনুপ্রাণিত করবে এবং মানসিক ভাবে তাদের সুস্থ ও সুন্দর একটি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে।
১) শিশুর নিকট নিজেই হয়ে উঠুন তার রোল মডেলঃ প্রত্যেক পিতা মাতার নিজের সন্তানকে শিক্ষা দানের পূর্বে আগে নিজের ভাব মূর্তি সঠিকভাবে তার সন্তানের সামনে প্রকাশ পাচ্ছে কিনা সেটির দিকে লক্ষ রাখা উচিৎ। আপনাদের মানসিকতা, আচার আচরণ, জীবন ব্যবস্থা, শক্তি ও দুর্বলতা সব কিছুই কিন্তু আপনার সন্তান লক্ষ করে। তাই সন্তানকে কিছু সেখানর পূর্বে আগে নিজের শারীরিক ও মানসিক স্থিতির দিকে নজর দিন। সব সময় মনে রাখবেন সন্তানের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল তার পরিবার এবং প্রথম শিক্ষক তার পিতা মাতা। তাই সন্তানের কাছে আপনি যদি আপনার সুন্দর ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটাতে পারেন তাহলে আপনার সন্তান খুব সহজেই তা গ্রহণ করতে পারবে।
২) সন্তানকে নিজের ছায়া নয় বরং স্বাধীন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে গড়ে তুলুনঃ কখনোই নিজের ইচ্ছা আপনার সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবেনা। তাদের আপনার প্রতিচ্ছবি নয় বরং স্বাধীন স্বত্বা হিসেবে গড়ে তুলুন। তারা যদিও আপনার লালন পালনে বেড়ে উঠছে কিন্তু তাদের উপর কখনোই নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস করবেন না। এতে তাদের স্বাভাবিক মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। তাদেরকে নিজের প্রতিচ্ছবি হিসেবে না দেখে স্বাধীন স্বত্ত্বা হিসেবে দেখুন।
৩) তাদের প্রতি পর্যাপ্ত স্নেহ প্রদর্শন করুনঃ বর্তমান যুগে এই ব্যস্ত সময়ে চেষ্টা করুন তাদেরকে পর্যাপ্ত সময় দেবার এবং তাদের বোঝাবার যে আপনি তাদের অনেক স্নেহ করেন, ভালবাসেন। সব পিতা মাতাই তাদের সন্তানকে ভালবাসেন,স্নেহ করেন। সেই স্নেহ, ভালবাসা মনের মাঝে শুধু রাখলে হবেনা, বরং সেগুলো প্রকাশ করতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে তারা আপনার কাছে কতোটা বিশেষ, কতোটা আদরের। তাহলে আপনাদের উপর তাদের আস্থা এবং ভরসা বাড়বে এবং আপনাদের সাথে তাদের আত্মিক যোগাযোগ ও বাড়বে। তাদেরকে যে কোন বিষয় বোঝানো সহজ হবে।
৪) তাদের প্রতি মনযোগী হনঃ আপনার সন্তানের প্রতি মনযোগী হন। তারা কখন কি করছে, কোথায় যাচ্ছে কিংবা তাদের আচার ব্যবহার চিন্তাভাবনা সব কিছুর বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। এছাড়াও তাদের প্রতি আপনার ভাষার ব্যবহারে সতর্ক হন। আপনি কিভাবে তার প্রশংসা করছেন, কিভাবে তাকে শাসন করছেন সব কিছু মনোযোগের সাথে সতর্কতার সাথে করুন। তাদেরকে আপনার আচার আচরণের মধ্য দিয়েই নৈতিক শিক্ষা প্রদান করুন।
৫) সন্তানদের দায়িত্বশীল হওয়ার শিক্ষা দিনঃ আপনার শিশুকে নিজের কাজ নিজে করার শিক্ষা দিন। অনেক পিতা মাতাই আছে যারা মোহের বশবর্তী হয়ে সন্তানকে সব বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখাকেই ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ধরে নেন। কিন্তু এতে আপনার সন্তান বাস্তব অভিজ্ঞতা বর্জিত এবং আত্মবিশ্বাস, সাহস, ও ইতিবাচক মানসিকতা বর্জিত হয়ে বেড়ে ওঠে।
৬) নম্র এবং ধৈর্যশীল হওয়ার শিক্ষা দিনঃ যে কোন পরিচিত বা অপরিচিত সবার সাথে নম্র হয়ে কথা বলার শিক্ষা প্রদান করুন। তাদেরকে অন্যদের প্রশংসা করার শিক্ষা দিন এবং হিংসাত্মক মানসিকতা বর্জন করতে বলুন। এতে আপনার শিশু সবার প্রতি ভালবাসা এবং সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেড়ে উঠবে।
৭) বিপদ মোকাবেলা করতে উৎসাহিত করুনঃ তাদের ছোট্ট পৃথিবীটাকে ধীরে ধীরে বর্ধিত করুন। তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা প্রদান করুন। কোন প্রতিকূল পরিবেশে পড়লে তারা যেন ভয়ে গুঁটিয়ে না গিয়ে বরং সাহসের সাথে উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সেই শিক্ষা প্রদান করুন। এতে তারা সাহসী এবং আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।
প্রচেষ্টার দ্বারাই একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। আপনি যদি আপনার শিশুকে সব থেকে ভাল কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার শিক্ষা প্রদানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন, অবশ্যই তারা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে মানুষের মত মানুষ হয়ে বেড়ে উঠবে।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে- https://www.psychologytoday.com/us/blog/in-flux/202002/10-ways-inspire-your-children
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে