গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে অজানা নতুন করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। কোনো প্রতিষেধক এবং ওষুধ না থাকায় এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেওয়া হয় সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর।
সমস্যা হলো, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে শারীরিক সংস্পর্শের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা স্পর্শ শরীরে বিভিন্ন হরমনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা প্রয়োজনীয় অনুভূতির জন্ম দেয় ও মানসিক চাপমুক্তি ঘটায়। বাংলাদেশে করোনার সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার অনলাইন ব্রিফিংয়ে এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, ইতিবাচক স্পর্শে মানুষের শরীরে ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন নামের হরমন নিঃসরণ বাড়ায় এবং করটিজল নিঃসরণ কমায়, যার ফলে ইতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
যেমন অনুপ্রেরণা, সন্তুষ্টি, নিরাপত্তা, মানসিক চাপমুক্তি ইত্যাদি। দীর্ঘদিন সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা মানসিক দূরত্ব তৈরি করতে পারে। শিশুর সম্মিলিত বিকাশ বাধাগ্রস্থ হতে পারে৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে৷
এর ফলে শিশু এবং বয়স্করা সবচেয়ে বিপদাপন্ন এবং নিরাপত্তাহীনতায় থাকে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বয়স্করা এই পরিস্থিতিতে শিশুর মতো অবুঝ আচরণ করতে পারেন। শিশুরা খিটখিটে বা অস্থির হয়ে উঠতে পারে। তাদের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এই সময়ের নারীদের স্বাস্থ্যের দিকেও বিশেষ নজর রাখার ওপর জোর দেন ডা. নাসিমা। বলেন, নারীর মাসিক পূর্ব বিষণ্ণতা, প্রসব উত্তর বিষণ্ণতা পঞ্চাশোর্ধ নারীদের মাসিক পরবর্তী উপসর্গ বা বিষণ্ণতা, হরমোনে ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশেষ মনযোগের দাবি রাখে। তাদের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দিন। সংবেদনশীল আচরণ করুন এবং সহযোগিতা করুন৷ নারীর প্রতি সব সহিংসতা পরিহার করুন, বলেন এই বিশেষজ্ঞ।
মানসিক চাপ দূর করতে বাগান করা এবং পোষা পশু-পাখির আদর-যত্ন করার পরামর্শ দেন তিনি। নিয়মিত ঘুম, খাবার গ্রহণ, শরীর চর্চা, ভার্চুয়ালি সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা, সুস্থ বিনোদন যেমন নাচ, গান, সিনেমা দেখা, ছবি আঁকা, বাগান করা এমনকি রান্নাও মানসিক চাপ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
দৈহিক স্পর্শে যে সুবিধা মেলে
স্পর্শে যা বোঝা যায়
কোনো পরিস্থিতি বুঝতে এবং আশেপাশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কেমন হওয়া উচিত তা নির্ধারণে আমাদের মস্তিষ্ক প্রাথমিকভাবে ত্বকের কাছ থেকে তথ্য নেয়৷ গবেষকরা বলছেন, স্পর্শ থেকে একজন মানুষের আবেগ, ভালোবাসা, রাগ, কৃতজ্ঞতা এবং ঘৃণার অনুভূতি বোঝা যায়৷ আর নিয়মিত ইতিবাচক স্পর্শ একজন মানুষের আক্রমণাত্মক মনোভাব কমায় এবং সামাজিক আচরণ বাড়ায়৷ মোটের উপর স্পর্শ সম্পর্ককে মজবুত করে৷
আলিঙ্গন
আলিঙ্গন হচ্ছে এমন এক সহযোগিতার প্রতীক যা একজন মানুষের মানসিক চাপ কমিয়ে দয়৷ পরস্পরের মধ্যে কোনো সংঘাতের পর ভেতরকার অস্থিরতা কমাতেও আলিঙ্গন সহায়ক৷ ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে আলিঙ্গন সর্দিকাশির শঙ্কাও কমায়৷
গাঢ় আলিঙ্গন
সঙ্গী-সঙ্গিনীর মধ্যে উষ্ণ স্পর্শ, যেমন হাত ধরা কিংবা গাঢ় আলিঙ্গন, উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷ এমন স্পর্শে শরীরে রক্তচলাচল ভালো থাকে এবং মানসিক চাপ কমে৷ কেননা, ইতিবাচক স্পর্শ একে অপরের প্রতি সমর্থনের প্রতীক, যা হৃস্পন্দন স্বাভাবিক করে এবং মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোনের প্রভাব কমিয়ে দেয়৷
মাসাজ: আয়েশের চেয়েও বেশিকিছু
ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সারা দেহে মাসাজে বাতরোগীদের ব্যাথা কমে এবং হাঁটাচলার সক্ষমতা বাড়ে৷ আর যারা শুধু মাসাজ নিচ্ছেন, তারা নয়, যারা করছেন তাদেরও শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে৷
ত্বক থেকে ত্বকে
অপরিণত শিশুদের ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক মাসাজ৷ আর ত্বকের সঙ্গে ত্বকের স্পর্শে মানুষের দেহে অক্সিটসিন হরমোন ছড়িয়ে পড়ে যা মা এবং সন্তানের মধ্যকার বন্ধন গাঢ় করে৷ শিশুদের শারীরিক যন্ত্রনা লাঘবেও সহায়ক স্পর্শ৷
স্ব-মাসাজ
স্পর্শের সুবিধা পেতে শুধু যে অন্যের উপর নির্ভর করতে হবে, তা কিন্তু নয়৷ আপনি নিজেই নিজেকে মাসাজ করতে পারেন, যা দিয়ে অন্যের করা মাসাজের কিছু সুবিধা পাওয়া যেতে পারে৷ ইয়োগার মতো ব্যায়ামে আপনার দেহের সঙ্গে ভূমির যে স্পর্শ সৃষ্টি হয় তা-ও মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে৷
সমর্থন জানানো
সঙ্গী যখন মানসিক চাপে থাকে, তখন তার হাত ধরে সমর্থন জানালে তা উভয়ের জন্যই ইতিবাচক৷ এতে যার হাত ধরা হচ্ছে তার ব্যাথা লাঘব হয়৷
কৃত্রিম অঙ্গেও অনুভূতি সৃষ্টির চেষ্টা
বর্তমানে কৃত্রিম অঙ্গেও অনুভূতি বুঝতে সক্ষম সেন্সর বসানো হচ্ছে, যাতে স্পর্শের সুবিধা এমন অঙ্গ ব্যবহারকারীরাও পেতে পারেন৷ পাশাপাশি গবেষকরা ইলেক্ট্রনিক স্কিন তৈরির চেষ্টা করছেন যা শক্ত বস্তু, নরম কাপড় কিংবা গরমের মতো অনুভূতি সনাক্তে সক্ষম হবে৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন