যেসব বদভ্যাসে মানসিক চাপে তরুণ প্রজন্ম

0
67

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)-এর মতে, মিলেনিয়ালরা অনেক বেশি মানসিক চাপে ভোগেন। আগের প্রজন্মের চেয়ে চাপ সামলাতেও দক্ষ নয় তারা। এক হিসাবে বলা হয়, ১২ শতাংশ মিলেনিয়ালরা অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে ভোগেন। আমেরিকান কলেজ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে বলা হয়, ৬১ শতাংশ কলেজপড়ুয়া নিয়মিত মানসিক চাপে অস্থির থাকেন। তাদের মনের এই বেহাল দশার পেছনে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজার এবং শিক্ষাখাতে ঋণের বিষয়কে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি কারণ তাদের এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এ সম্পর্কে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
১. ঘুমে বদভ্যাস : এটাই সম্ভবত তাদের স্ট্রেসের সবচেয়ে শক্তিশালী কারণ। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণায় বলা হয়, ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের সেই অংশকে উত্তেজিত করে যে অংশ মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। বিভিন্ন সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, ঘুমকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং প্রযুক্তি কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
যা করতে হবে : অনলাইন ম্যাগাজিন ‘কাম ক্লিনিক’ জানায়, ঘুমের আগে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার বাদ দিতে হবে। বরং ঘুমের আগে কোনো জার্নাল বা বই পড়লে ঘুম গভীর হয়। আবার লেখালেকির কাজ করা যাব না।
২. পুষ্টির অভাব : স্বাস্থ্যকর খাবারের অভাবে কেবল বিপাকক্রিয়াই বাধাগ্রস্ত হয় না, মানসিক স্বাস্থ্যের খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। নিয়মিত খাবার খেতে দেরি করা বা না খাওয়ার কারণে রক্তে চিনির মাত্রা ওঠা-নামা করে। এতে দুশ্চিন্তা, অবসাদ, বিহ্বলতা দেখা দেয়।
যা করতে হবে : সময়মতো খেতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণ পানি খেতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানার পাশে এক গ্লাস পানি রাখতে হবে।
৩. অতিমাত্রায় ক্যাফেইন : আমাদের চাঙ্গা করে দেয় কফি। কিন্তু কিছু সময় যাওয়ার পর অবসাদ ভর করে। স্নায়বিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণে মানুষের মাঝে প্যানিক ডিসঅর্ডার এবং সোশাল ফোবিয়া দেখা দেয়। তা ছাড়া ক্যাফেইনে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়।
যা করতে হবে : দিনে এক কাপ কফিতে অভ্যস্ত হয় উঠুন। তা ছাড়া কফি বাদ দিয়ে চা খাওয়া শুরু করতে হবে।
৪. বসে থাকা : চুপচাপ দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণেও মানসিক চাপ দেখা দেয় ভলে বিস্তর পরিসরের গবেষণায় দেখা গেছে। এর কারণটা স্পষ্ট নয় বলে জানায় বিএমসি পাবলিক হেলথ। তবে যারা দিনে অনেক সময় বসে থাকেন তাদের মাঝে মানসিক চাপ দেখা দেয়।
যা করতে হবে : কাজের ফাঁকে একটু হাঁটাহাঁটি করা উচিত। এক গবেষণায় বলা হয়, প্রতি ৯০ মিনিট পর পর চেয়ার থেকে উঠে নড়াচড়া করা উচিত। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে মুক্তি মেলে।
৫. স্মার্টফোন : ২০১৪ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আমেরিকান শিক্ষার্থীরা দিনে গড়ে ৯ ঘণ্টা সময় স্মার্টফোনে ব্যয় করে। প্রযুক্তি অনেক কাজ সহজ করেছে। কিন্তু মেজাজ বিগড়ে দেয়।
যা করতে হবে : কিছু করার না থাকলে স্মার্টফোনটি পকেটে রেখে দিন। অন্যকিছু করুন। বাইরে হেঁটে আসা বা জরুরি কোনো কাজে মন দিতে পারেন।
৬. ব্যক্তিগত ও পেশাজীবন এক হয়ে যাওয়া : ফোর্বসের এক গবেষণায় বলা হয়, মানুষ যখন তার পেশাজীবনের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবন এক করে ফেলেন তখনই বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাদিন কাজ করে যাওয়াই উৎপাদনশীলতা নয়। কাজের সময় আলাদা রাখতে হবে। ব্যক্তিগত জীবনটাকে এ থেকে আলাদা রাখা ভালো।
যা করতে হবে : নিজের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করে বসদের খুশি করে লাভ নেই। কর্মদিবস ধরে কাজ করুন। এরপর নিজের জীবনে ফিরে যান যেখানে আপনজন রয়েছেন।
৭. টেলিভিশন ও সিনেমা : এগুলো বিনোদন মাধ্যম। কিন্তু এগুলো নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকলে বিষণ্নতা দেখা দেয়। বিভিন্ন পরীক্ষায় এর প্রমাণ মিলেছে। অনেকে একে বিশ্রাম বলে মনে করেন। কিন্তু হিতে বিপরীতটাই ঘটে।
যা করতে হবে : কাজ শেষে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টেলিভিশন দেখুন। এরপর অন্য কিছুতে মন দিন। বই পড়তে পারেন। কিংবা অন্য যেকোনো কাজ।
৮. বিষণ্ন মানুষের সঙ্গে থাকা : যার বিষণ্নতায় ভুগছেন তাদের সঙ্গে থাকলে আপনিও বিষণ্নতায় আক্রান্ত হবেন। গবেষণায় এ তথ্য দেওয়া হয়।
যা করতে হবে : এমন মানুষের সঙ্গে সময় কাটান  যিনি আপনার মন ভালো করে দিতে পারেন। যারা বিষণ্নতায় ভুগছেন না তাদের সঙ্গেই চলুন।
সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার

Previous articleশিশুকে সামাজিকতা শেখানোর কৌশল
Next articleযেভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান স্ট্রেসের শিকার কিনা!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here