শারীরিক অসুস্থতা বা সমস্যা নিয়ে আমরা যতটা খোলাখুলি ভাবে কথা বলতে পারি, মানসিক অসুস্থতা বা সমস্যা নিয়ে কথা বলতে ঠিক ততটাই পিছিয়ে যাই। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক সমস্যা ডেকে আনে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা। প্রত্যেকেই জীবনে কখনও না কখনও মানসিক সমস্যায় ভোগেন। শুধু আমরা নই, ভোগেন তারকারাও। সফল ব্যক্তিত্বরাও ডুবে যেতে পারেন অবসাদের গভীরে। তেমনই কিছু তারকাদের নিয়ে এই প্রতিবেদন। এরা কেউ গভীর অবসাদে ঢলে পড়েছেন মৃত্যুর কোলে, কেউ সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে খুঁজে পেয়েছেন জীবনের অন্য মানে। জেনেই তাদের কয়েকজনের সম্পর্কে-
১. মেরিলিন মনরো
মানসিক ভাবে অসুস্থ এক বিধবা মায়ের সন্তান মেরিলিন। শৈশবের বেশিরভাগ সময়টাই অবহেলায় কেটেছে তার। মাত্র ৬ বছর বয়সে কোনওমতে যৌননির্যাতনের হাত থেকে বেঁচেছিলেন একবার। বুদ্ধি ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে আগ্রহের জেরে অন্যতম সেরা তারকা হয়ে ওঠেন মেরিলিন। কিন্তু খ্যাতির চূড়ায় থাকার সময়ই ঘুমের ওষুধ ও অ্যালকোহলে ডুবে থাকতে শুরু করেছিলেন মেরিলিন। ৬০ বছর বয়সেও বেশ কয়েকবার গর্ভপাত হয় তার। বিবাহ বিচ্ছেদ, বন্ধুর মৃত্যু, অস্থির সম্পর্কের জেরে ক্রমশ অবসাদের গভীরে তলিয়ে যেতে যেতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মেরিলিন।
২.মাইকেল ফেল্পস
কৈশোর না পেরোতেই খ্যাতির শিখরে ওঠা শুরু মাইকেল ফেল্পসের। ছেলের ঝুলিতে যখন আসছে একের পর এক স্বর্ণপদক তখনই তার জীবনের গলিপ শোনান মাইকেলের মা ডেবোরাহ ফেল্পস। জানান, মাত্র ৯ বছর বয়সে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজওর্ডারে (ADHD) আক্রান্ত হন ফেল্পস। স্কুলে পড়াশোনায় মন বসাতে পারতেন না। চিকিত্সকের পরামর্শে ওষুধ ও সাঁতারের জেরে ধীরে ধীরে সমস্যা কাটিয়ে ওঠেন ফেল্পস।
৩. প্রিন্সেস ডায়না
সৌন্দর্য্যের জন্য বিশ্বখ্যাত ডায়না উদ্দেশ্যপ্রণদিত ভাবেই নিজের চারপাশের জগত্টাকে বদলে ফেলেছিলেন। প্রায় ১ দশক ধরে বালিমিয়ায় ভোগেন ডায়না। এই সমস্যার জন্য সমালোচিতও হন তিনি। বালিমিয়ার নামই হয়ে যায় ‘ডায়না এফেক্ট’। বালিমিয়ার কারণেই অবসাদে ভুগতে শুরু করেন ডায়না। বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি।
৪. শাহরুখ খান
বলিউড বাদশা শাহরুখও রেহাই পাননি অবসাদের হাত থেকে। ২০০৮ সালে শুটিংয়ের সময় কাঁধে মারাত্মক চোট পান। অস্ত্রপচারের পর গভীর অবসাদে ভুগতেন শাহরুখ। ঘন ঘন সিগারেট খেতে থাকেন, স্নায়ুর সমস্যাতেও ভুগতে শুরু করেন। এখনও পুরোপুরি অবসাদের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। শরীর ভেঙে গিয়েছে। মাঝে মাঝেই মানসিক কারণে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতে থাকেন তিনি।
৫. পারভিন বব
সত্তর-আশির দশকে বলিউডে রাজত্ব করেছেন পরভিন ববি। আধুনিকতায় বেশ কয়েক দশক এগিয়ে ছিলেন তিনি। অন্যদিকে, ভয়াবহ প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নিজের চিকিত্সাও করান। একটি আশ্রমের সঙ্গেও যুক্ত হন। স্কিজোফ্রেনিয়া ও অবসাদের কারণে জীবনে ক্রমশ একা হয়ে গিয়েছিলেন পরভিন। মৃত্যুও রহস্যময়।
৬. মাইক টাইসন
২০০৫ সালে টাইসন বলেছিলেন, “আমি কোনওদিন খুশি হবো না। আমার বিশ্বাস আমাকে একা মরতে হবে। আমি সেটাই চাই। সারাজীবন আমার গোপন যন্ত্রনাগুলোর সঙ্গে আমি একাই কাটিয়েছি। আমি সত্যিই হারিয়ে গিয়েছি, তবু নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করছি।” এদিকে এই টাইসনই এক সময়ে বক্সিং রিংয়ে অপ্রিরোধ্য ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই অবসাদ ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন টাইসন। সারাজীবনই সেই স্মৃতি বয়ে বেরিয়েছেন তিনি। জীবনে সাফল্য যত এসেছে, ততই ঘিরে ধরেছে অবসাদ।
৭. অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
এখন অ্যাঞ্জেলিনাকে দুনিয়া যেভাবে চেনে কৈশোরে অ্যাঞ্জেলিনা মোটেও তেমন ছিলেন না। ‘মুডি গথিক টিন’ অ্যাঞ্জেলিনা ডুবে থাকতেন নিজের জগতে। অবসাদে নিজের হাত কেটে ফেলেছেন বহুবার। এখনও নাকি তিনি কাল্পনিক বন্ধুদের সঙ্গে রাতে কথা বলেন। জোলির নিরাপত্তারক্ষীর জানিয়েছিলেন মাঝে মাঝেই নাকি হাস্যকর কারণে ভেঙে পড়েন তিনি। মেয়ের অবসাদ নিয়ে কয়েকবার মুখ খুলেছেন জোলির বাবাও।
৮. সঞ্জয় দত্ত
সঞ্জয় যেন একই জীবনকালের মধ্যে দুটি জীবনে বেঁচে ফেলেছেন। অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পর গভীর অবসাদে ভুগেছিলেন নব্বই দশকের ‘খলনায়ক’ সঞ্জয়। সেইসঙ্গেই যোগ হয়েছিল বিবাহ বিচ্ছেদ, বাবার মৃত্যু। ড্রাগ নিতে শুরু করেন সঞ্জয়। রিহ্যাবে কাটাতে হয়েছিল কয়েকবছর। কিন্তু তারপরই যেন জন্ম হয় অন্য সঞ্জুর। জীবনের চড়াই উত্রাই পেরিয়ে রগচটা সঞ্জয় একেবারে শান্ত মানুষ হয়ে গিয়েছেন। প্রভাব পড়েছে অভিনয়েও। ‘খলনায়ক’ আজ ‘মুন্নাভাই’।
৯. মনীষা কৈরালা
সারল্য ও অভিনয় ক্ষমতার জেরে ৯০-এর দশকে বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন মনীষা। কিন্তু সেই মনীষাই ভুগতেন গভীর ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনে। বোহেমিয়ান জীবন, অতিরিক্ত মদ্যপান সবকিছুর জেরে একা হয়ে গিয়েছিলেন। বিয়ের পর থিতু হওয়ার বদলে বাড়তে থাকে অবসাদ। এরপর ডিভোর্স, মারণরোগ ক্যানসার জীবনের খাদে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল মনীষাকে। কিন্তু চুপ করে থাকেননি তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় খুলে বলেছেন মনের কথা, যুঝেছেন অসুস্থাতার সঙ্গে, শান্ত করেছেন মন। এখন সব যুদ্ধ জিতে তিনি যেন এক অন্য মানুষ।
১০. দীপিকা পাডুকোন
বলিউডের এক নম্বর অভিনেত্রী হয়েও অবসাদে ভুগেছেন দীপিকা। তবে তিনিই প্রথম অভিনেত্রী যিনি নিজের অবসাদ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন। অবসাদে ভোগার কারণ না জানালেও সেই সময়ে তার অনুভূতি, তার লড়াইয়ের গল্প তুলে ধরেছেন সকলের সামনে। সাহস জুগিয়েছেন মানসিক ভাবে অসুস্থদের। নিজের পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গী ও পরিণত জীবনবোধের জেরেই অবসাদ কাটিয়ে উঠেছেন দীপিকা।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

https://youtu.be/XHGoBs7E25s