মানসিক রোগের শারীরিক উপসর্গ : পর্ব-২

মানসিক রোগের শারীরিক উপসর্গ: পর্ব-১ এখানে পড়ুন

মানসিক রোগের কারণে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক উপসর্গ। আর এসব মানসিক রোগ ও তার শারীরিক উপসর্গ বিষয়ে জানতে হলে প্রথমেই মানসিক রোগের ধরন সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

মূ্লতঃ বৃহৎ পরিসরে মানসিক রোগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হলো গুরুতর মানসিক রোগ বা সাইকোসিস (Psychosis)। এ রোগে আক্রা্ন্তদের মধ্যে সাধারণত অস্বাভাবিক আচরণ, অস্বাভাবিক কথাবার্তা, অলীক চিন্তা ও বিশ্বাস, অলীক অনুভূতি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা যায়। বাস্তবতার সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকে না এবং রোগ সম্বন্ধে সচেতনতার অভাব থাকে। অপরদিকে, অন্যটির ক্ষেত্রে লঘুতর প্রকৃতির হয়ে থাকে, যাকে নিউরোসিস (Neurosis) নামে আখ্যায়িত করা হয়। এ রোগে আক্রা্ন্ত রোগীরা সাধারণত বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত থাকে এবং রোগ সম্বন্ধে তাদের অন্তর্দৃষ্টি ঠিক থাকে। নিউরোসিস নামের এ রোগের বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ হতে পারে। এর মধ্যে মানসিক উপসর্গের তুলনায় শারীরিক উপসর্গই প্রকট থাকে।

এসব শারীরিক উপসর্গ সমৃদ্ধ মানসিক রোগ সম্বন্ধে জানা যেমন জরুরি, তেমনি মানসিক রোগ অথবা সমস্যার কারণে শারীরিক অসুবিধা দেখা দিলে তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার মানসিকতা অর্জন করাটাও প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, এসব রোগীদের কি আসলেই কোনো সমস্যা নেই? সব কিছুই কী মনের? রোগটা মানসিক কিন্তু যন্ত্রনা শারীরিক, এরই বা কি ব্যাখ্যা?

আসলে মন ও শরীরকে আপাতদৃষ্টিতে স্বতন্ত্র মনে হলেও এরা পরস্পরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজেই যেকোনো ধরনের শারীরিক অসুস্থতা কিংবা অসুবিধার কারণে যেমন মন খারাপ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক, তেমনি মনের অসুস্থতা বা সমস্যার জন্য শারীরিক অসুবিধা হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছুই নয়।

বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের ফলে জটিল মানসিক প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে রোগীর নানা শরীরিক উপসর্গ তৈরি হয়। এর কোনোটিই ভান কিংবা ঢঙ নয়।

সমস্যার সৃষ্টি তখনই হয়, যখন এ স্বাভাবিক ব্যাখ্যাটাকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। রোগীরও অনেক সময় বোধগম্য হয় না যে, তার এ শারীরিক কষ্ট যার জন্য তার ব্যক্তিগত, পেশাগত কিংবা সামাজিক জীবন দূর্বিসহ তার কারণ মানসিক। আবার রোগের কারণটা মানসিক হওয়ার ফলে রোগী তথা রোগের গুরুত্বটাও অনেকাংশে কমে যায়। রোগীকে শারীরিক যন্ত্রনার পাশাপাশি সহ্য করতে হয় আত্মীয় পরিজনের কটুক্তি।

কাজেই অবহেলা আর তুচ্ছতাচ্ছিল্য পরিহার করে রোগীকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসার বিকল্প আর কিছুই নেই। তবে রোগের উপসর্গ নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা বা অস্থির হওয়াটাও আবার রোগীর আরোগ্যের ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে রোগীর সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা তথা পরিচর্যা বিষয়ে মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নেয়া আবশ্যক। এসব রোগের চিকিৎসায় প্রকারভেদে ওষুধ সেবনের পাশাপাশি সাইকোথেরাপীরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

Previous articleপ্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা দ্রুত বীর্যপাত
Next articleসুখী হোন বিবাহিত জীবনে: দাম্পত্য সম্পর্কে সহিংসতা ও শান্তি
অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, সিলেট

1 COMMENT

  1. চমৎকার লিখেছেন। আমি খুব সম্প্রতি একজনের সাক্ষাৎকারে হেরাক্লিটাসের সেই বিখ্যাত উক্তিটি দেখে খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম। সেই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ-
    যতীন সরকারঃ হেরাক্লিটাস বলছিলেন একটা মানুষ এক নদীতে দুইবার স্নান করতে পারে না। এই কথাটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সত্য। দুইটা মানুষ একটা বই পড়তে পারে না। যার যার অবস্থা, ক্ষমতা, বুদ্ধি, চিন্তা সেই অনুযায়ী সে বই পড়ে। কাজেই, একটা বই যদি তিনশ লোকে পড়ে তো তিনশটা বই পড়ে। আর দুই নম্বর কথা হইলো, একটা মানুষ এক বই দুইবার পড়তে পারে না। আজকে আমি যেই বইটা পড়লাম ছয় মাস পরে যখন আমি এই বইটাই পড়বো, তখন একটা নতুন বই পড়া হবে।
    পারভেজ আলমঃ মানে রিডিং চেঞ্জ হয়ে যাবে?
    যতীন সরকারঃ হ্যা, হ্যা। প্রশঙ্গক্রমে বলে নেই, আগে আমাদের ঠিক করতে হবে, কিভাবে আমরা একটা বই পড়বো, কতোবার পড়বো, কেনো পড়বো। এই বিষয়টার উপর আমাদের জোর দিতে হবে। আর এই পড়াটা একা একা হয় না। পড়াটা অন্যের সাথে শেয়ার করতে হয়।
    আর আইনস্টাইনের ধর্ম এবং সৃষ্টিকর্তার উপলব্ধিটি সম্ভবত প্রচলিত ধারণার মত নয়। তিনি সম্ভবত পারসোনাল গডে বিশ্বাস করতেন যা অনেকটা বাউল বা সুফিদের মতন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here