আচরণগত সমস্যার সঙ্গে মাদকাসক্তির সম্পর্ক

আচরণগত সমস্যার সঙ্গে মাদকাসক্তির ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক উভয় দিকেই হতে পারে, যেমন কারো যদি আচরণগত সমস্যা (যেমন, কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডার, অপজিশনাল ডিফাইন ডিজঅর্ডার ইত্যাদি) থাকে তবে তার মাদকাসক্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আবার যার মাদকাসক্তি রয়েছে তার মধ্যে বিভিন্ন রকমের আচরণগত সমস্যা দেখা দিবে।

এখন আমাদের প্রথমেই জেনে নিতে হবে যে আচরণগত সমস্যা কি?

আচরণগত সমস্যা হচ্ছে ঐ সমস্ত আচরণ যা কোন মানুষকে কোন কিছু শিখতে বাধাগ্রস্ত করে বা অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে বা রক্ষা করতে সমস্যা তৈরি করে।

কোন মানুষ যদি মাদকাসক্ত হয়ে যায় তবে তার ভিতরে নিম্নলিখিত আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমনঃ

  • লেখাপড়ায় অমনোযোগিতা বা রেজাল্ট খারাপ করা
  • অযথা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া বা অবাধ্য হওয়া বা অন্যের সঙ্গে মত নয় জড়িয়ে পড়া
  • বেশভূষা বা চেহারায় পরিবর্তন লক্ষকরা যেতে পারে
  • সে যদি স্কুলে বা কলেজে পড়ে অথবা কোন চাকরি করে তবে সে চাকরিতে, স্কুলে,কলেজে বা ভার্সিটিতে না যেতে পারে
  • রাগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হওয়া
  • না বলে টাকা পয়সা নিতে পারে বা জিনিসপত্র বিক্রি করে দিতে পারে
  • তার ভেতরে অ্যাংজাইটি বা ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে
  • সে অসহায়ত্ব বোধ করতে পারে
  • তাঁর খাবারের পরিমাণ বা সময়ের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে
  • নিজের ক্ষতিসাধন করতে পারে যেটাকে আমরা ডেলিবারেট সেলফ হার্ম বলি
  • নতুন বন্ধুত্ব গড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে বা পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে
  • আবার এমন নতুন বন্ধু সৃষ্টি হতে পারে যাদেরকে আগে কখনো দেখা যায়নি বা যাদের সম্বন্ধে আগে ভালো কোন রিপোর্ট ছিল না
  • একা একা থাকতে পছন্দ করবে
  • কোন কিছুর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে সমস্যা দেখা দিবে
  • তার ঘুমেরসমস্যা হতে পারে যেমন অনেক কম বা বেশি বা অসময়ে ঘুমাতে পারে
  • যুদ্ধাংদেহী মনোভাব বা আর্গুমেন্ট পড়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
  • বেশি সময় ধরে বাথরুমে থাকতে পারে
  • অন্যকে লাঞ্ছনা করতে পারে
  • প্রচুর মিথ্যা কথা বলতে পারে
  • তার আচরণে বা কথার ভিতরে বিশ্বাসযোগ্যতা পাওয়া যাবে না
  • সর্বোপরিমানসিক স্বাস্থ্যের একটা পরিবর্তন দেখা দিবে

আমরা যদি কারো ভিতরে উপরোক্ত আচরণগত সমস্যা দেখি তবে অবশ্যই আমাদেরকে মাদকাসক্তের কথা চিন্তা করতে হবে। প্রত্যেকটি বাবা-মায়েরই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে এবং  যদি উপরে উল্লেখিত  সমস্যাগুলি তার সন্তান বা কোন আত্মীয় স্বজনের মধ্যে দেখা দেয় তবে তাৎক্ষণাৎ কোন একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

বাচ্চাদের আচরণগত সমস্যা যেমন কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডার, অপজিশনাল ডিফাইন ডিজঅর্ডার ইত্যাদিতে যারা ভুগছে তাদেরকে যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয় তবে তাদের মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ২০১৬ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ইয়াং এডাল্টদের মানসিক রোগ যদি সঠিক চিকিৎসা না দেয়া হয় তবে তাদের প্রায় অর্ধেকের পরবর্তীতে মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

তবে সুখের বিষয় হচ্ছে যদি এই সমস্ত আচরণগত সমস্যা যেমন কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডার, অপজিশনাল ডিফাইন ডিজঅর্ডার ইত্যাদির সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া হয় তবে তার মাদকাসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।  অপরপক্ষে, যারা মাদকাসক্তিতে ভুগছে তাদের যদি উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া হয় তবে আচরণগত সমস্যা গুলো ঠিক হয়ে যায় এবং সে  আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসতে পারে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক এম কামরুল হাসান

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

 

Previous articleঅটিজম সচেতনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে র‌্যালি ও আলোচনা সভা
Next articleঅতিরিক্ত শপিং একটা মানসিক রোগ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here