নিউরোসিস

মানসিক রোগের প্রধান দুই ভাগের অন্যতম নিউরোসিস। সংখ্যায় ও পরিমাণে নিউরোসিস এ ভোগা মানুষই অনেক বেশি। অথচ মানসিক রোগ তথা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো অনুসন্ধ্যান ও পরিকল্পনা এখনো শুধু সাইকোসিসের কথা মনে রেখেই সাজানো হয়। নিউরোসিস এর অর্ন্তগত মানসিক রোগ গুলিকে সময়মতো বুঝতে পেরে সঠিক ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
নিউরোসিস
মানুষের মন আছে, সুতুরাং মনের সমস্যা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখনো রোগ চিকিৎসা কিংবা স্বাস্থ্য বিবেচনায় শুধু শরীরের বিষয়গুলিই গুরুত্ব পেয়ে থাকে। সাইকোসিসের মতো, একেবারে সহজ কিছু বিষয় ছাড়া অন্যকিছুকে মানসিক সমস্যা ভাবতে আমরা নারাজ। অথচ মানুষের মনে যেকোনো ধরনের অস্বস্তি, ভয়, টেনশন, উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা, খারাপলাগা বা কষ্টলাগার বিষয়গুলিই নিউরোসিস এর অন্তর্গত মানসিক সমস্যা। সমস্যা হলেই সেটা রোগের পর্যায়ে পরবেনা। তবে সেসব সমস্যা যখন একজন মানুষের প্রতিদিনের চলার ক্ষেত্রে বা পেশাগত জীবনে অসুবিধা তৈরি করে, তখনই সেটাকে নিউরোসিস এর অর্ন্তভূক্ত মানসিক রোগ বলা যাবে।
জানা অজানা মানসিক চাপ
নিউরোসিসকে বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা জানি টেনশান, এনজাইটি, ভয় কিংবা অস্থিরতা এসব মানুষের মনেই হয়ে থাকে। তবুও কেনো যেনো এসবকে মনের সমস্যা ভাবতে অভ্যস্ত নই। মানুষকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পেশাগত জীবনে বিভিন্ন চাপের ভিতর দিয়ে সময় পার করতে হয়। সেসব চাপের কারণ কখনো জানা কখনো অজানাও থাকতে পারে। জানা বা অজানা এসব চাপই মূলত নিউরোসিস এর কারণ।
এসব চাপের উৎস মানসিক, সামাজিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক সহ যেকোনো ধরনের হতে পারে। এমনকি সাইকোসিস বা অন্য কোনো শারীরিক রোগের কারণে মানুষ যখন অস্থির বা ভয়ে থাকে সেটাও নিউরোসিস এর অর্ন্তগত মানসিক সমস্যার মধ্যে পরবে।
নিউরোসিস এ কি হয়?
নিউরোসিস এ মানসিক বা শারীরিক দুই ধরনের সিম্পটমই হতে পারে। মন খারাপ, অস্থিরতা, ভয়, বিরক্তি, মনে না থাকা, মনোযোগের সমস্যা, কান্না আসা, ভুলে যাওয়া, হীনমন্যতা, মেজাজ খারাপ থাকা, ক্ষেপে যাওয়া, মৃত্যু চিন্তা, মৃত্যু ভয়, কাজের অনীহা বা অনাগ্রহতা, চিন্তায় এলোমেলো হয়ে যাওয়া, একই চিন্তা বারবার করা, উদ্বিগ্ন, উদাস লাগা, অনুভূতির অসারতা বা তীব্রতা, অসহায় লাগা, নিজেকে ব্যর্থ ভাবা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই হতে পারে। অন্যদিকে ঘুমের সমস্যা, বুক ধড়ফড় করা, পেটের সমস্যা, চোখের ঝাপসা দেখা, হাত-পা ঠাণ্ডা বা গরম লাগা, হাত-পা বা শরীর কাঁপা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, শ্বাস কষ্ট, গলায় বুকে চাপ বোধ করা, দম বন্ধ ভাব লাগা, যৌন সমস্যা, মাথাব্যথা, মাথাধরা, মাথাঘুরানো, দুর্বলতা, টায়ার্ড লাগা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছুই হতে পারে এই মানসিক চাপের জন্য। এমন অনেক অনুভূতিকে বর্ণনা করার জন্য দুটি শব্দ আমরা প্রায়ই শুনে থাকি- ‘হার্ট দুর্বল’ বা ‘নার্ভ দুর্বল’। মূলত এসব নিউরোসিস এর অর্ন্তভূক্ত সমস্যাগুলিকেই বোঝানো হয়।
নিউরোসিসের অন্তর্ভূক্ত রোগ
Anxiety disorders, Panic disorder, Acute stress disorder, Post traumatic stress disorder, Depression, Sexual dysfunction, Somatoform Disorders, Dissociative (conversion) disorders,  Obsessive Compulsive Disorder, Adjustment Disorder, Sleeping Disorders, School Phobia, Social Phobia-mn Stress related যে কোনো ধরনের মানসিক রোগে হতে পারে। সাইকোসিস বা জটিল কোনো মানসিক রোগের সাথেও এ ধরনের নিউরোসিস থাকতে পারে।
সতর্কতা
শারীরিক রোগ মনে করে বছরের পর বছর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে যাওয়া, এ ডাক্তার থেকে ঐ ডাক্তারের কাছে যাওয়া। পরীক্ষা কিছু না পাওয়ার কারণে অনেকে বলে দেয়, কোনো রোগ নেই। এটি অবশ্যই একটি বড় সমস্যা। মনের রোগ পরীক্ষায় ধরা পরবেনা এটাই স্বাভাবিক। পরীক্ষায় কিছু পাওয়া না গেলেই রোগ নেই বলা উচিত নয়।
নিউরোসিস ও সাইকোসিস
সাইকোসিস এ আক্রান্ত মানুষ যেখানে নিজেকে রোগী ভাবেননা বা চিকিৎসা নিতে চাননা, সেখানে নিউরোসিস এ আক্রান্ত মানুষটি সব সময় অস্থির ও উদ্বিগ্ন থাকেন তার রোগ ও রোগ মুক্তির ব্যাপারে। সব সময় ভালো হতে চান, তার কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে চান। শারীরিক বা মানসিক যেকোনো সমস্যাতেই খুব দ্রুত ভেংগে পরেন।
চিকিৎসা
সমস্যার পিছনের কারণটি জানা খুবই জরুরি। শরীরের কোনো কারণে সমস্যা হলে, সেটাও দ্রুত সনাক্ত করা জরুরি। নির্দিষ্ট রোগটি সনাক্ত করে, সেই মতো চিকিৎসা করা। সাধারনত; ওষুধ ও সাইকোথেরাপী দুটিরই ভালো ভূমিকা থাকে নিউরোসিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে। সাথে প্রয়োজন মতো, রিলাক্সেশন বা সোশ্যাল স্কিল ট্রেনিং এর মতো বিষয়ও দরকার হতে পারে।
সাইকোএডুকেশন
রোগটি সম্বন্ধে জানা এবং চিকিৎসার গ্রহণযোগ্যতা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। মানসিক রোগ মেনে নিতে না পারলে, আক্রান্ত মানুষটিরই সমস্যা। তাতে করে ভোগান্তি বাড়তেই থাকবে। রোগের গ্রহণযোগ্যতা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।  


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleতুমি সম্ভবত অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার রোগে ভুগছ
Next articleআমি প্রচন্ড বাস্তববাদী মানুষ: অভিনয় শিল্পী দীপা খন্দকার
চেয়ারম্যান, মনোরোগবিদ্যাি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here