ধাতু দৌর্বল্য: ভারতবর্ষে জন্ম নেয়া এক মানসিক রোগ

ধাতু দৌর্বল্য বা ধাত সিনড্রোম আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে বিদ্যমান একটি খুবই প্রচলিত সিনড্রোম বা ভ্রান্ত ধারণা। এটাকে কালচার নিয়ন্ত্রিত একটি ভ্রান্ত ধারণা হিসাবে বৈজ্ঞানিকভাবে গৃহীত হয়েছে পৃথিবী জুড়ে। ১৯৬০ সালে ভারতীয় চিকিৎসক Narendra Wig এটি প্রথম বর্ণনা করেন। পরবর্তীতে সারা পৃথিবী জুড়ে এটি ভারতীয় উপমহাদেশের কালচার বেষ্টিত রোগ হিসাবে স্বীকৃতি পায়।

গতানুগতিকভাবে ধাতুকে শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ তরল হিসাবে আমাদের কালচার এ ধারণা করা হয়। প্রথাগতভাবে আমাদের ধারণা ৪০ ফোটা খাবার থেকে এক ফোটা রক্ত তৈরি হয়, ৪০ ফোটা রক্ত থেকে এক ফোটা রক্ত নির্যাস তৈরি হয়, ৪০ ফোটা রক্ত নির্যাস থেকে এক ফোটা শুক্র বা sperm বা semen তৈরি হয়। আদতে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুজে পাওয়া যায় নাই।

এই রোগের লক্ষণ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসাবে দেখা যায়, রোগীরা মনে করেন তাদের প্রস্রাবের সাথে সাদা তরল হিসাবে ধাতু বা সিমেন চলে যায়। এই জন্য তারা শরীরের শক্তি হারিয়ে ফেলছেন, নিজেদের দুর্বল মনে হয়, মাথা ঘুরায়, মনোযোগ কমে যাওয়া, মেজাজ হারিয়ে ফেলা, অস্থির মনে হওয়া, মন খারাপ হওয়া, কাজে কর্মে আনন্দ হারিয়ে ফেলা, নিজেকে অন্যদের চেয়ে ছোট মনে হওয়া, নিজেকে পাপী মনে হওয়া, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, রাতে ঘুমের অসুবিধা হয়, অনেকে মনে করেন তাদের শরীরে অনেক বড় রোগ আছে যার জন্য এমন হয়। অনেকের ক্ষেত্রে এটা দৃঢ় বিশ্বাস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যা থেকে নাড়ানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

সাধারণত যুবক, ছাত্র, কম লেখা পড়া, অতিরক্ষণশীল মানসিকতা, নিম্নবিত্ত, নতুন বিবাহিত, হস্তমৈথুন নিয়ে ধারণা, স্বপ্নদোষ নিয়া ধারণা, গ্রামে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে আমাদের কালচারে এটি এতো বেশি প্রচলিত যে, এই বিস্তার মেনে খুবই কম রোগী দেখা যায়। আমাদের কালচার এ মহিলাদের ক্ষেত্রে লিওকরিয়া নামক এক ধরনের রোগ আছে যেটা কিনা মহিলাদের ধাত সিনড্রোম হিসাবে অনেকেই চিন্তা করে থাকেন।

গবেষণায় মূলত তিন ধরনের ধাত সিনড্রোম পাওয়া যায়

১) শুধুমাত্র ধাতু যায় এই চিন্তা করেন এবং এটা সাংঘাতিক ভাবে বিশ্বাস করে নিজেদের উদ্বিগ্ন রাখেন ও নিয়মিত বিভিন্ন ডাক্তার, কবিরাজ, হারবালিস্টদের কাছে যাওয়া আসা করে পথ্য সেবন করেন।
২) যারা মনে করেন, তাদের ধাতু ক্ষয় হচ্ছে এবং তাদের বিভিন্ন মানসিক রোগ দেখা দেয়; যার মধ্যে বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতা অন্যতম।
৩) যারা মনে করেন, তাদের ধাতু ক্ষয় হচ্ছে এবং তাদের বিভিন্ন সেক্সুয়াল রোগ দেখা দেয়। যেমনঃ দ্রুত বীর্যপাত, মিলনে অক্ষমতা সহ বেশ কিছু রোগ দেখা দেয়।
চিকিৎসা
চিকিৎসার মূল অংশই হল রোগ সম্পর্কে উপযুক্ত তথ্য প্রদান ও সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বলে মেনে নেওয়া। Sex education, Relaxation therapy, Counseling, anti-anxiety and Antidepressant Cognitive behavioral therapy (CBT) ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে ও রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleআপনার মেয়ে কনভার্সন ডিজঅর্ডারে ভূগছে
Next articleআপনি উদ্বেগাধিক্য নামক মৃদু মানসিক রোগে ভুগছেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here