দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ওষুধ খাওয়া থেকে সাবধান

ঘুম আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। ঘুম সুন্দর না হলে সব কিছুই এলোমেলো হতে শুরু করে। অনেক মানসিক রোগের প্রথম উপসর্গ ঘুমের সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। ঘুম মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। রোগের কারণে ঘুমের অসুবিধা হতে পারে, আবার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সুবিধা এবং অসুবিধার জন্য ঘুমের অসুবিধা হতে পারে। অনেকের সাধারণ জায়গা বা পরিবেশ পরিবর্তনের জন্য ঘুমের অসুবিধা হতে পারে। বয়সের সাথে সাথে আমাদের ঘুমের চক্রের পরিবর্তন হতে থাকে। শারীরিক রোগের কারণে ঘুমের অসুবিধা হতে পারে। রোগ ছাড়া অন্য কারণে ঘুমের অসুবিধা হলে সেগুলো স্বাভাবিক ভাবে কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।

সামান্য অস্থিরতা, জীবনের স্বাভাবিক কারণে ঘুমের অসুবিধা হলে আমরা সেটার সমাধান করতে চাই। আমাদের ঘুম সুন্দর করার জন্য আমরা ডাক্তারের কাছে যাই, কবিরাজের কাছে যাই, ওষুধের দোকানে যাই, অনেকে বন্ধুর কাছে শুনে ঘুমের ওষুধ (Benzodiazepines) খাওয়া শুরু করি। ওই ওষুধ খাওয়ার পর ঘুম ভালো হয়, মনটা একটু ভালো লাগে। ডাক্তার সাহেবরা ব্যবস্থাপত্রে যে সময়সীমা উল্লেখ করে দেন সেটা খেয়াল না করে নিজের ভালোলাগা মতো ওষুধটি চালিয়ে যাই। ডাক্তার সাহেবের কাছে আর জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন বোধ করি না। কিছুদিন পর দেখা যায় একটা বড়িতে আর তেমন ঘুম হয় না, তখন জেনে হোক না জেনে হোক দুইটা করে সেবন করি। তারপর তিনটা, তারপর চারটা এভাবে চলার পর যখন আর নিজে পারা যায় না তখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাহেবদের কাছে আসতে হয়।

মানসিক রোগের প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে আমরা অনেক রোগী পাই যারা দীর্ঘদিন যাবত Benzodiazepines গ্রুপের ওষুধ সেবন করে আসছেন এবং আমাদের কাছে আসেন যখন আর নিজে নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না। আমরা ইতিহাস নিয়ে দেখতে পাই বেশিরভাগই কয়েক বছর যাবত Benzodiazepines গ্রুপের ওষুধ সেবন করে আসছেন। এদের মধ্যে Clonazepam জাতীয় ওষুধ সবচেয়ে বেশি; যেগুলো বাজারে Pase, Rivotril, Epnil, Epiclon ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়।

এই জাতীয় ওষুধ কোনো ভাবেই নিজের ভালো লাগার উপর নির্ভর করে দীর্ঘদিন খাওয়ার কোনো সুপারিশ চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাই। দুই থেকে তিন সপ্তাহের বেশি খাওয়া বিপদ জনক এবং কোনো ভাবেই এক মাসের বেশি একটানা খাওয়ার কোনো সুপারিশ চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাই। যদি কোনো রোগীর গুরুত্বর কোনো মানসিক রোগ থাকে এবং সেটাও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সক্রিয় তত্ত্বাবধায়নে ঘটে তাহলে এর ব্যাতিক্রম ঘটতে পারে।

সাথে সাথে কিছু মনে রাখা খুব জরুরি; ঘুম না হওয়া একটা উপসর্গ মাত্র। আসল কারণ বা রোগ খুজে চিকিৎসা না করলে রোগ বা সমস্যা দিন দিন বাড়তে থাকবে। Benzodiazepines কোনো স্থায়ী সমাধান নয় এবং সেটা হওয়াও উচিৎ নয়। বরং যত দিন এটা সেবন করা হয় ততই আরও নতুন সমস্যা তৈরি হওয়ার পথ সুগম করা হয়।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleআসুন সিগারেট ছাড়ি
Next articleমাঝে মাঝেই সে অজ্ঞান হয়ে যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here