১০ই অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য “মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার “। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করা হয়। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সবচাইতে বড় পেশাজীবী সংগঠন। বিএপি প্রতিবছর মতো এবারেও দিনটি উপলক্ষ্যে নানা রকম কর্মসূচির আয়োজন করেছে। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস এর উদ্যোগে ও সাইনোভিয়া ফার্মার সহযোগিতায় আজ ৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানটি হয়।
অনুষ্ঠানে বিএপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিএপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম, প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক ডা. এম এ মোহিত কামাল, অধ্যাপক ডা. এম এম এ সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ডা. অভ্র দাশ ভৌমিক, সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ডা. মেখলা সরকার, ডা. ফারজানা রহমান ও সাইনোভিয়া ফার্মার জেনারেল ম্যানেজার, (সেলস) এ কে এম রফিক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএপির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. তারিকুল আলম। অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। বক্তারা জানান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ গবেষণায় বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৮ ভাগ ও শিশু-কিশোরদের ১৩ ভাগ মানসিক রোগে আক্রান্ত। আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৯২ ভাগ কোনো ধরনের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেননি। নগরায়ণ, আর্থ সামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ, বংশগতি, অন্যান্য শরীরবৃত্তি ও মনোসামাজিক কারণ মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে বক্তারা মনে করেন।
বাংলাদেশে মানসিক রোগের ডাক্তারের অপ্রতুলতা নিয়ে বিএপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, “ অন্যান্য দেশের চাইতে আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেয়া সহজ। যদিও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা এখনো বড় শহর কেন্দ্রিক। সবাই সেবা পাচ্ছে না কারণ ১৬ কোটি মানুষের দেশে প্রতি একশ জন মানুষের জন্য মানসিক রোগের ডাক্তার আছে ০.০৭ জন। তারপর নানা কারণে প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে বাইপোলার ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সহজ হয়ে উঠছে না।
তবে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “মানসিক রোগের নতুন ছয়টি ওষুধের অনুমোদন পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা দেশের সব অঞ্চলে এই ওষুধগুলো বিনামূল্যে দিবো”। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষদের মধ্যে আছে। অধ্যাপক ডা. এম এম এ সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, “মানসিক রোগ কোনো জীন-ভুতের আছর নয়। এই বিষয়টাকে বেশিরভাগ সময় আমরা ভুলভাবে উপস্থাপন করতে দেখি। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিন দিন সহজ হচ্ছে”। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন ডা. মেখলা সরকার।
মানসিক রোগ প্রতিরোধ ও মানসিক রোগ চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অপরিসীম গুরুত্ব আছে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
মনের খবর টিভির স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রোগ্রাম দেখতে ক্লিক করুন