গবেষকদের মতে, হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগী যাদের ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়, তাদের মধ্য একটি পরীক্ষামূলক ওষুধের ট্রায়াল করে দেখা গিয়েছে যে ওষুধটির ভাল ফলাফল পাওয়া গিয়েছে।
ওষুধটির নাম SNG001, এটি ইনহেলারের মাধ্যমে নেয়া হয়, এটি একটি বিটা ইন্টারফেরন যা তৈরি হয় দেহে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত একটি প্রোটিন থেকে এবং এটি দেহের অ্যান্টিভাইরাল প্রতিক্রিয়া তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষকদের মতে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের যাদের SNG001 দেয়া হয়েছে তাদের মৃত্যু হার বা ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন ৭৯% কমে গিয়েছে যাদের প্লাসিবো দেয়া হয়েছিল তাদের থেকে।
এই ওষুধটি নিয়ে কাজ করা দলটি আরও দাবি করে যে, যাদের এই ওষুধটি দেয়া হয়েছে তাদের অন্য কোন কিছু করার প্রয়োজন নেই, ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত অন্যদের তুলনায় তাদের মৃত্যু হার বা ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন ৭৯% কমে গিয়েছে ,এছাড়াও আক্রান্ত হবার ফলে সৃষ্ট উপসর্গ সমূহ কমে যাবার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অন্য কথায় বললে, ১৬ দিনের এই গবেষণায় দেখা যায় যে তাদের সুস্থ্য হবার সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছে। এমন কি এই ওষুধ যাদের দেয়া হয়েছে তাদের মধ্য শ্বাসকষ্ট কমে যাওয়ারও প্রমান পাওয়া যায়।
ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ হাম্পটনের রেস্পিরেটরি মেডিসিনের প্রফেসর ও এই ট্রায়ালের প্রধান ইনভেস্টিগেটর টম উইলকিনসন বলেন, গবেষণার ফলাফল আশাব্যঞ্জক।
ওষুধটি বৃহৎ পর্যায়ে প্রক্রিয়াজাত করার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল খুবই আশাব্যঞ্জক ও শক্ত প্রমান এই ওষুধের ক্লিনিকাল অগ্রগতির জন্য এবং দ্রুতই আন্তর্জাতিক অবকাঠামোতে এটি রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য।“
তবে অভিজ্ঞরা এই ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। “ উপসংহারে পৌঁছানোর জন্য এই ট্রায়ালটি খুব ক্ষুদ্র।
এটা সুখকর যে নতুন ওষুধ তৈরি হচ্ছে, তবে প্রাথমিক ফলফলকে উৎসাহিত করা ও নিশ্চিতভাবে ক্লিনিকালি সেটাকে প্রয়োগ করা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার।“ বলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজিস্ট ও মেডিসিনের অধ্যাপক মার্টিন ল্যান্ড্রে।
SNG001 তৈরি করেছে সাউথ হ্যাম্পটনের একটি বায়োটেক কোম্পানি SYNAIRGEN যা ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ হাম্পটনের অংশ এবং এই ওষুধ মূলত ট্রায়াল করা হয় ইউনিভার্সিটি হসপিটাল হাম্পটনে যার অন্তর্ভুক্ত ৯টি হাসপাতাল হয়েছে।
এই ট্রায়ালটিকে অনুমতি প্রদান করা হয় মার্চে এবং এটা প্রায় ১০০ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিল তাদের উপর করা হয়। এদের মধ্য অর্ধেক জনকে দেয়া হয় SNG001 বাকিদেরকে দেয়া হয় প্লাসিবো। ডাক্তার বা রোগী কেউই জানতোনা কাকে কোনটা দেয়া হয়েছে।
রোগীদেরকে ১৪ দিন এই ওষুধ দেয়া হয়েছে তার পর ১৫ ও ১৬ তম দিনে তাদের চিকিৎসা পরবর্তী তথ্য গ্রহন করা হয়েছে এবং সেটা ২৮ তম দিন পর্যন্ত নেয়া হয়েছে, এর মধ্য যে দলকে প্লাসিবো দেয়া হচ্ছিল তাদের মধ্য ২ জন রোগী মারা গিয়েছে, তবে যারা SNG001 তাদের মধ্যে কেও মারা যায়নি।
বিটা ইন্টারফেরন এর আগের মাল্টিপাল স্ক্লেরোসিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়েছে। তবে, SNG001 ইনহেলার হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল মূলত ক্রনিক অবসট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের চিকিৎসা দেয়ার জন্য। কিন্তু সাউথ হ্যাম্পটনের দলের মনে হয়েছে এই ফরমুলেশনটি কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে। শুধু মাত্র যাদের বিটা ইন্টারফেরনের অভাব রয়েছে তারাই গুরুত্বর অসুস্থ হচ্ছে এমন নয়, বরং কোভিড-১৯ নিজেও বিটা ইন্টারফেরনের উৎপাদন কমিয়ে ফেলে, বলেছেন উইলকিনসন।
এই দুই প্রক্রিয়া সংমিশ্রনের কারনেই কোন কোন জনগোষ্ঠীতে এই রোগটি মারাত্নক আকার ধারন করেছে। এই কারনেই আমাদের এই ওষুধটি দ্বিগুন কার্যকরী হবে- এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর কাজ করবে এবং ভাইরাসের ক্ষমতা হ্রাস করবে যেন তা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে না পারে।
এই দলটি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত জনগোষ্ঠী যাদের মধ্যে রোগটি মারাত্নক আকার ধারন আকার ধারন করার ক্ষমতা রয়েছে তাদের উপরেও এই SNG001 এর ট্রায়াল করছে। উইলকিনসন বলেন, তারা আশা করছে এই ওষুধ শুধু মাত্র গুরুত্বর অসুস্থ হওয়া থেকেই বিরত করবে তা নয় বরং দ্রুত আরোগ্য লাভেও সহায়তা করবে। কারন অনেক সময় অনেক মৃদু লক্ষণ রোগী বলেন যে তাদের লক্ষণ সমূহ প্রায় মাসের পর মাস থেকে যায়।
SNG001 ই প্রথম ওষুধ নয় যা করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় আশাবাদী ফলাফল দিয়েছে, এর আগেও ডেক্সামেথাসোন নামের একটি সস্তা স্টেরয়েড শ্বাসকষ্ট যুক্ত রোগীদের মৃত্যুহার কমিয়েছে। অন্য দিকে রেমডিসিভির নামের ওষুধ রোগীদের হাসপাতালে থাকার সময়কাল কমিয়েছে।
উইলকিনসন এর মতে রেমডিসিভির যেখানে কেবল করোনার উপর কাজ করে সেখানে SNG001 অন্যন্য ভাইরাস জনিত ঠাণ্ডাতেও কাজ করবে।
ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজির অধ্যাপক, ড্যানি অল্টম্যান এই ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “ডেক্সামেথাসোনের মত এটিও একটি আশাব্যঞ্জক ও আকর্ষণীয় খবর।“
অনুবাদ: ডা. রিজওয়ানুল করীম শামীম, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, অসংক্রামক রেগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন