ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে হতাশা এবং বিষণ্ণতা দূর করতে: বুশরা শাহরিয়ার

0
271
বুশরা শাহরিয়ার
বুশরা শাহরিয়ার

চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক, চলচ্চিত্রে গীতিকার-সুরকার, হিন্দী এবং বাংলা জনপ্রিয় বেশি কিছু গানের মিউজিক ভিডিও, টেলিভিশনে সংবাদ পাঠের পাশাপাশি বিউটি ব্লগার হিসেবে রয়েছে তাঁর খ্যাতি। বয়সের তুলনায় খ্যাতির উচ্চতা একটু বেশিই। তিনি বুশরা শাহরিয়ায়। নেশায় শিল্পী, পেশায় স্থপতি, নগর পরিকল্পনা বিষয়ে পিএইচডি করছেন দিল্লির উত্তরাখন্ডের রোরকি আইআইটিতে। করোনাকালীন সময়ে অবস্থান করছেন বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে। মনের খবর এর তারকার মন বিভাগে কথা বলেছেন জনপ্রিয় চৌকস এই তরুণ তারকা…..

মনের খবর: কেমন আছেন?
বুশরা শাহরিয়ার: ভালো আছি। লকডাউনের মধ্যে নিজেকে যতটুকু ভালো রাখা সম্ভব, সেভাবে ততটুকুই ভালো আছি।

মনের খবর: ভালো থাকার জন্য মনের গুরুত্ব কতখানি?
বুশরা শাহরিয়ার: আমার কাছে মনে হয় ভালো থাকাটা পুরোপুরি মানসিক ব্যাপার। ভালো থাকার জন্য বিশেষ করে এই মহামারী সময়ে ভালো থাকার জন্য মানসিকভাবে শক্ত থাকার বিকল্প নেই।

মনের খবর: সংগীতের সাথে সখ্যতা শুরুর গল্পটা যদি একটু বলতেন?
বুশরা শাহরিয়ার: আমার মা গান করতেন। সাড়ে তিন বছর বয়সে মায়ের কাছেই সা-রে-গা-মা-পা এর হাতেখড়ি। এরপর সাড়ে চার বছর বয়সের সময় আমার জন্য ওস্তাদ রাখা হয়। তখন থেকে টানা আঠারো বছর আমি আমার ওস্তাদ ঢাকা মিউজিক কলেজ এর অধ্যাপক সুব্রত সাহা’র কাছে গান শিখি। প্রথমে উচ্চাঙ্গ, এরপর নজরুল গীতি, তারপর আধুনিকে গানে আমার আসা।

মনের খবর: গান আপনার মনকে কতটা প্রভাবিত করে?
বুশরা শাহরিয়ার: গান আমার প্রাণশক্তি। আমি আমার পড়াশোনার পাশাপাশি গানটাকে সবসময় সাথে রেখেছি। গান থেকে শক্তি নিয়ে সেটা আমি আমার পড়াশোনার কাজে ব্যয় করেছি।[/int-ans]

মনের খবর: গান শিখতে হলে বা শিল্পী হতে হলে কীভাবে মনের যত্ন নেওয়া উচিত?
বুশরা শাহরিয়ার: গান শিখতে হলে মনকে সবার আগে এটা বোঝাতে হবে যে গান শেখার কোনো শেষ নেই। যে যত বড় শিল্পী হোক না কেনো, তাকে আজীবন শিখতে হবে এবং চর্চা করে যেতে হবে। তাই সঙ্গীতের জন্য মনকে ধীর স্থির এবং দীর্ঘ সাধনার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাখতে হবে।

মনের খবর: আপনার সাফল্যের পিছনে নিজের কোন গুণটির ভূমিকা বেশি?
বুশরা শাহরিয়ার: আমি নিজেকে নিজে এখনও সফল ভাবি না। তবে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য যদি কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে সফল ভেবে নিই; তাহলে বলবো, এর পেছনে দেশের প্রতি আমার অতি মমত্ববোধ এবং আমার স্বচ্ছতা; এই দুটি গুণের অবদান সবচেয়ে বেশি।

মনের খবর: নিজেকে শেষ পর্যন্ত কোন অবস্থানে দেখতে চান?
বুশরা শাহরিয়ার: আমি খুব বেশি কাজ করিনি। এখন পর্যন্ত আমার ১১ টি মিউজিক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে কাজ বেশি করতে হবে এরকম কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আমি চাই জীবনে যদি আর মাত্র দুটি গানও গায় তবে সে দুটি গান যেন দেশের মানুষ তাদের পছন্দের প্লে লিস্টে রাখে। পাশাপাশি সঙ্গীতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করার একটি ইচ্ছে আমার আছে।

মনের খবর: মন খারাপ হয়? মন খারাপ হলে কীভাবে মন ভালো করার চেষ্টা করেন?
বুশরা শাহরিয়ার: আমি আসলো একটু বেশি সংবেদনশীল, তাই আমার খুব বেশি বেশি মন খারাপ হয়। মন খারাপ হলে আমি কেঁদে ফেলি, আর গান শুনি কিংবা মুভি দেখি। এতে করে আমার মনকে কনভার্ট করতে খুব সহজ হয়।

মনের খবর: রাগ ক্ষোভ হিংসা আপনার মধ্যে কি রকম আছে?
বুশরা শাহরিয়ার: হিংসা ব্যাপারটি আমার মধ্যে মোটেই নেই। আর রাগ তো সবারই থাকে, আমরা মধ্যেও আছে। তবে আমার মধ্যে ধ্বংসাত্মক কোনো রাগ নেই। আর আমার মধ্যে আসলে প্রচন্ড পরিমাণে জিদ রয়েছে। আমি যদি বলি যে, এটা আমি করেবা; তবে সেটা আমি করবোই।

মনের খবর: স্মৃতিতাড়িত হন? কোন সময়টা সবচেয়ে বেশি তাড়িত করে?
বুশরা শাহরিয়ার: আমি আসলে খুব বেশি নস্টালজিক। প্রচন্ড পরিমানে অতীত রোমন্থন করি। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে স্কুলজীবন। সেসময়ে অনেক কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলাম, দুষ্টুমিও করেছি অনেক, আর সবার খুব প্রিয়ও ছিলাম।

মনের খবর: রাগ হলে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন?
বুশরা শাহরিয়ার: রাগ হলে সেটিও আমার চোখের পানি হিসেবে গড়িয়েই পড়ে।

মনের খবর: স্বপ্ন এবং ভালোবাসা বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?
বুশরা শাহরিয়ার: স্বপ্ন ছাড়া কিছুই হবে না। আমি প্রচন্ড পরিমানে স্বপ্নবাজ একজন মানুষ। আমি বিশ্বাস করি যে, আপনি যদি খুব বড় কিছু পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তবে সেটা না পেলেও মাঝামাঝি কিছু একটা পাবেন। তাই, স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে কৃপণতা করা যাবে না, স্বপ্ন দেখতে হবে মন খুলে। আমি স্বপ্ন দেখি যে, আমি ফ্লিম ফেয়ার অ্যাওর্য়াড পাবো। কিন্তু কবে পাবো, কিভাবে পাবো তা জানি না। আর আমি খুব বেশি ইমোশোনাল একটা মানুষ, খুব সহজে মানুষকে ভালোবেসে ফেলি। মানুষকে আজীবন ভালোবেসে যেতে চাই, সেই সাথে মানুষের ভালোবাসা পেতেও চাই।

মনের খবর: হতাশা বোধ করেন? হতাশা বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
বুশরা শাহরিয়ার: মানুষের জীবনে উত্থান পতন থাকবেই। এই সময়গুলিকে খুব সর্তকতার সাথে মোকাবিলা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে হতাশা এবং বিষণ্ণতা দূর করতে। তাই আমি সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছি। যারা হতাশা কিংবা বিষণ্ণতায় ভুগছেন, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই; সময় সবসময় একরকম থাকে না, আপনার সময় যখন খারাপ যাচ্ছে তখন পৃথিবীর অন্য কোথাও ভালো কিছু ঘটছে। ধ্যৈর্য ধরে খারাপ সময়টুকু মোকাবিলা করুন, আপনার জীবনেও সুসময় আসবেই। রাতে পরেই দিন আসে, আপনি যদি হতাশার কারণে রাতেই নিজের ক্ষতি করে ফেলেন তাহলে সুন্দর দিনটা আপনি পাবেন না।

মনের খবর: মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের আচরণ কী রকম হওয়া উচিত?
বুশরা শাহরিয়ার: যখন কোনো ব্যক্তি হতাশা বা বিষণ্ণতায় বোগেন তখন তার সাথে আমাদের প্রচন্ড পরিমানে ইতিবাচক কথাবার্তা বলতে হবে। কোনোভাবেই তার সাথে নেতিবাচক আচরণ বা কথা বলা যাবে না। আর যিনি হতাশায় ভুগছেন তারও উচিত হবে এই সময়টায় নিজের পরিচিত মানুষদের মধ্যে যারা বেশি ইতবাচক কথা বলেন বা ইতিবাচক ভাবনা ভাবেন; তাদের সাথে সাথে বেশি বেশি সময় কাটানো।

মনের খবর: সুস্থতার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব কতটুকু?
বুশরা শাহরিয়ার: শরীর এবং মস্তিষ্ক দুটোই পারষ্পারিকভাবে জড়িত। মন ভালো থাকলেই শরীর ভালো থাকবে। মনের জোর দিয়ে শারীরিক অনেক বড় প্রতিকূলতাও জয় করা সম্ভব। আবার মানসিকভাবে দুর্বল হলে ছোটোখাটো শারীরিক অসুস্থতার কাছেও মানুষ হেরে যেতে পারে। এই করোনা মহামারী সময়ে তাই মনের শক্তি খুব বেশি প্রয়োজন।

মনের খবর: ভক্ত এবং পাঠকদের উদ্দশ্যে যদি কিছু বলতে চান?
বুশরা শাহরিয়ার: আমি সবাইকে বলবো; নিজেকে ভালোবাসুন। নিজে ভালো থাকাটা খুব বেশি জরুরী। নিজে ভালো থাকলে নিজেকে ভালোবাসতে হবে। কোনো মানুষ যখন নিজেকে ভালোবাসে তখন সে খুব হাশিখুশি থাকে। আর একজন হাশিখুশি মানুষ পারে তার পরিবার এবং আশেপাশের মানুষগুলিকে হাসি আনন্দের মধ্যে রাখতে, যা একজনা হতাশাগ্রস্থ মানুষ কখনোই পারেন।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleসন্তান হতাশাগ্রস্ত কিনা বুঝবেন যেভাবে
Next articleসমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ও দক্ষতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here