আপনি যখন একটি গান শুনছেন তখন সেটি আপনার গান: রাহুল আনন্দ

0
181

[int-intro]বহুমাত্রিক শিল্পী তিনি। অভিনয়, চিত্রকলা, সঙ্গীত সর্বক্ষেত্রে সমান পাদচারণা। তিনি বাঁশি বাজান, বাদ্যযন্ত্র বানান। জলের গানের অন্যতম সদস্য তিনি। অভিনয় করেছেন মঞ্চ, ছোট ও বড় পর্দায়। তিনি রাহুল আনন্দ। মনেরখবর পাঠকের মুখোমুখি হয়ে এবার তিনি জানাচ্ছেন তাঁর মনের কথা, ভালোলাগার কথা, স্মৃতির কথা, ইচ্ছার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন।  [/int-intro]
[int-qs]রাহুল আনন্দের জীবনে আনন্দ বেদনা কতটুকু?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]যতটুকু আনন্দ ততটুকুই বেদনা। বেদনা ছাড়া তো আর আনন্দ হয় না।[/int-ans]
[int-qs]কিছু কি ফারাক নেই?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”] আনন্দ বেদনা দুটোই মধুর। অনেক বেদনায় যেমন মানুষ কান্না করে, অনেক আনন্দেও মানুষ কান্না করে। অনেক বেশি বেদনায় যেমন মানুষ পাথর হয়ে যায় তেমনি অনেক বেশি আনন্দেও পাথর হয়ে যায়।  ফারাক হচ্ছে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। এক পিঠে তার আনন্দ আরেক পিঠে তার বেদনা।[/int-ans]
[int-quote]জল যেমন যখন যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের রঙ রূপ ধারণ করে, গানগুলোও তেমন। আপনি যখন একটি গান শুনবেন তখন সেটি আপনার গান। আমার মাধ্যমে গীত হতে পারে, আমার মাধ্যমে সুরকৃত হতে পারে, আমার মাধ্যমে একটি রূপ তৈরি হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন গানটি শুনছেন তখন সেটি আপনার গান, আমার নয়। গানটি যখন গাইছেন তখন সেটি আপনার গান। আপনিই জানবেন আপনার ঝরা পাতা কোনটি।[/int-quote]
[int-qs]বেশি আনন্দ হয় কিসে?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]বেশি আনন্দের ব্যাপারটা তো সময়ের উপর নির্ভর করে।[/int-ans]
[int-qs]যেমন?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”] যখন নতুন গানের সুর তৈরির জন্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বসি তখন এক ধরণের আনন্দ। একটা সুর তৈরি করার চেষ্টা করা। সুর ধরা দিচ্ছে কি দিচ্ছেনা অথবা ছলনা করছে। এটা ছলনার মধ্য দিয়ে যাওয়াটাও একটা আনন্দ। ছলনাটা বেদনা আবার যখন পাওয়া যায় সেটা আনন্দ। [/int-ans]
[int-qs]গানে সুর দরকার কেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”] গান যে সব সময় সুর নির্ভর হতে হবে এমটা নয়। বেসুরো গান বলেও তো একটা কথা আছে। একটা গানকে শিমুল মুস্তাফা যখন আবৃত্তি করেন তখন সেটি হয়ে যায় কবিতা। [/int-ans]
[int-qs]কবিতা ও গানের মধ্যে পার্থক্য কি?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”] খুব বিস্তারিত বলতে পারবো না। যেটুকু বলতে পারি, অনেকে বলেন সব গানই কবিতা, সব কবিতা গান নয়। আমি নতুন করে নিজের মতো করে তৈরি করেছি, সব গানও গান নয়, যে গান উড়তে পারে সেটাই গান। উড়তে পারার অর্থ হচ্ছে যে গান আমার গলা থেকে উড়ে গিয়ে আরেকজনের গালয়া বাসা বাঁধে সেটাই গান। যে গান শুধু আমিই গাইলাম সেটা কোন গান নয়।  [/int-ans]
[int-qs]স্বপ্ন দেখেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]দেখি।[/int-ans]
[int-qs]কেমন সে স্বপ্নগুলো?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]ঘুমিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখি তার বেশিরভাগই তো মনে থাকে না। এবং আমার ধারণা অধিকাংশ মানুষই রাতের স্বপ্নগুলো সেভাবে মনে রাখতে পারে না। সেটাই বোধহয় স্বপ্ন জেগে জেগে যেটা দেখা হয়। সেক্ষেত্রে বলবো, আমি সাধারণ পর্যায়ের মানুষ, আমার স্বপ্নগুলোই সাধারণ। বেশি বড় স্বপ্ন আমি দেখতে পারি না। আমার স্বপ্ন হলো আমার আশেপাশের মানুষকে হাসি ও আনন্দের মধ্যে দেখতে চাই। অন্তত আমার পাশে যে মানুষটি থাকে তাকে আনন্দ দিতে চাই, আমার যত বেদনাই থাকুক। [/int-ans]
[int-qs]কল্পনায় এই মহুর্তে কোথাও যেতে বললে কোন জায়গায় যাবেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]বেশি দূরে যাবো না, চারুকলায় যাবো। চারুকলার ঐ অঙ্গনটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। যদিও আমি এখন আর সেখানকার ছাত্র নই তবুও সেখানে হাঁটতে আমার ভালো লাগে। সেখানে আমার কিছু গাছ লাগানো আছে এবং গাছগুলোর সাথে আমার একটা সম্পর্ক আছে। কেউ আমাকে না দেখলেও ঐ গাছগুলো আমাকে দেখে।  [/int-ans]
[int-qs]আরেক জীবনে গাছ হয়ে জন্মাতে হলে কোন গাছ হতে চাইবেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]যে গাছে সারা বছর ফুল ফোটায় এমন কোন গাছ।[/int-ans]
[int-qs]খ্যাতিকে কীভাবে উপভোগ করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]খ্যাতি আর জনপ্রিয়তার মধ্যে পার্থক্য আছে। এখানে আমরা একটা ভুল করি। জনপ্রিয়তাকে খ্যাতির সাথে ভুলভাবে মিলিয়ে ফেলি। কখনও জনপ্রিয় মুখকে আমরা বলি তারকা। কিন্তু তারকা ও জনপ্রিয় দুটো ভিন্ন জিনিষ। জনপ্রিয় যে কেউ হতে পারে, তারকা সবাই হতে পারে না। আমাদের গানের দলকে জনপ্রিয় দল বলতে পারেন, খ্যাতিমান নয়। মানুষজন জলের গানকে পছন্দ করে এই পর্যন্তই। খ্যাতিমান হতে হলে যে পর্যায়ে যাওয়া দরকার জলের গান ঐ পর্যায়ের ধারেকাছেও যায়নি।  [/int-ans]
[int-qs]গানের পাশাপাশি আপনি একজন চিত্রকর ও নাট্য শিল্পী। এরমধ্যে কোন পরিচয়টি আপনার বেশি পছন্দ?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”] আমি থিয়েটার করি, আমি চারুকলার একজন শিক্ষার্থী, আমি থিয়েটারের একজন শিক্ষার্থী। একটা সময় ছিলো যখন নিকটজনরা বলতো, একটা কিছু নিয়ে চেষ্টা করো। এতকিছু নিয়ে তো পারবে না। একটা সময় মনে হতো শুধু থিয়েটার করি, কিন্তু তখন গান বাজনাও করতে চাই, ছবি আঁকতে চাই। তারপর নিজে থেকে একটা কর্মপ্রক্রিয়া ঠিক করি। আমি থিয়েটার ভালোবাসি, আমি সঙ্গীত ভালোবাসি, আমি চিত্রকলা ভালোবাসি। তাই চিন্তা করলাম তিনটিকে মিশিয়ে কিছু করা যায় কিনা। যখন আমি গান করি তখন সেখানে থিয়েটারকে মেশাই, চিত্রকলাকে মেশাই। যখন চিত্রকলা করি তখন সেখানে আমার সঙ্গীতকে মেশাই, আমার থিয়েটারকে মেশাই। [/int-ans]
[int-qs]জলের গান কেন জলের গান?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]বাংলাদেশের একটা গানের দল করার ইচ্ছে। যে যার মাতৃভাষাতেই স্বপ্ন দেখে, আমরা স্বপ্ন দেখি বাংলায়। যেহেতু বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় আমরা গান করবো সেহেতু দলটার নাম জলের গান। বাংলাদেশ একটা জলাভূমির দেশ, শত শত নদী, অদ্ভুত সুন্দর তাদের নাম। জলের সাথে সাথে এদেশের রূপ পরিবর্তিত হয়। বর্ষায় এক রকম, শরতে এক রকম আবার শীতে সেখানে শুকনো, কখনও আবার সবুজ ধানগাছে ভরা অথবা হলুদ সর্ষে ফুলে। [/int-ans]
[int-qs]ঝরা পাতার সাথে কী কথা?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]এই ঝরা পাতাটি হতে পারে গাছের একটি ঝরা পাতা, ডায়েরির ঝরা পাতা, চিঠির পাতা, জীবন খাতার একটি পাতা, গতকালের একটি দিন, একটু আগের এক ঘন্টা, জীবনের শত সহস্র মুহুর্তগুলো, আমার ঝরে পড়া বন্ধু, ঝরে পড়া প্রেম যাকে আমি হারিয়ে বারবার খুঁজি অথবা এমন অনেক কিছু।  [/int-ans]
[int-qs]অর্থাৎ এটি নির্ভর করবে শ্রোতার অনুভূতির উপর?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”] ঠিক তাই! জল যেমন যখন যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের রঙ রূপ ধারণ করে, গানগুলোও তেমন। আপনি যখন একটি গান শুনবেন তখন সেটি আপনার গান। আমার মাধ্যমে গীত হতে পারে, আমার মাধ্যমে সুরকৃত হতে পারে, আমার মাধ্যমে একটি রূপ তৈরি হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন গানটি শুনছেন তখন সেটি আপনার গান, আমার নয়। গানটি যখন গাইছেন তখন সেটি আপনার গান। আপনিই জানবেন আপনার ঝরা পাতা কোনটি। [/int-ans]

[int-qs]আবারো ব্যক্তিগত প্রশ্ন। রাগ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]প্রচুর।[/int-ans]
[int-qs]রাগ হলে কী করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]আগে ভাঙচুর করতাম। আক্ষরিক অর্থেও ভাঙচুর করতাম, মানসিক অর্থেও ভাঙচুর করতাম।এখন অবশ্য ভাংচুরটা করি না, রাগটাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। এখন বুঝতে পারি রাগটা আমার জন্য ক্ষতিকর, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে আমার কাজের। আগে অনেক বিষয় না বুঝেই রাগ করতাম, এখন বুঝতে পারি বা অপর পক্ষটা বোঝার চেষ্টা করি। আগে শুধু আমাকে দেখতাম কিন্তু এখন অন্য পক্ষকেও দেখার চেষ্টা করি। [/int-ans]
[int-qs]মন খারাপ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]সকলেরই মন খারাপ হয়। কেউ যদি বলে তার মন খারাপ হয় না তাহলে সেটি মিথ্যা বলা হবে।[/int-ans]
[int-qs]মন খারাপ হলে কী করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]কখনও চুপচাপ হয়ে যাই আবার কখনও একটু গভীরে গিয়ে ভাবতে চাই মন কেন খারাপ। তবে বেশিরভাগ সময় আমি আমার শৈশব অথবা কৈশরের সময়টাতে ডুব দেই।  [/int-ans]
[int-qs]স্মৃতি কাতরতা আছে?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]শৈশব কৈশরের ফেলে আসা সময়ের স্মৃতি আমাকে অনেক সময়ই কাতর করে।[/int-ans]
[int-qs]কেমন সে স্মৃতিগুলো?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]শৈশব কৈশোরের একটা বড় সময় কেটেছে আমার মামা বাড়ি। সেটা একটা হাওড় অঞ্চল। হাওরে নৌকা নিয়ে উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতিগুলো বেশ মনে পড়ে। মনে পড়ে মগডালে উঠে গাছের ফল খাওয়া, পাখির বাসা খোঁজা। [/int-ans]
[int-qs]আলো, অন্ধকার, গোধূলি এই তিনটির মধ্যে কোনটি বেশি প্রিয়?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”] একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার আমি সহ্য করতে পারি না। একটা ঘরের সব আলো যদি নিভিয়ে দেয়া হয়, এক বিন্দু আলো যদি ঘরে না আসে তাহলে আমি সেখানে ঘুমাতে পারি না, অস্বস্তি হয়। অতি সামান্য হলেও আমার আলো চাই। গোধূলি অথবা আলো-ছায়া অবস্থাটা ভালো লাগে। তবে সাত/আট মাস আগে আমার একটা একসিডেন্ট হয় এবং সেই একসিডেন্টের পর থেকে আলো ভীষণ ভালোবাসি। [/int-ans]
[int-qs] এই ভালোবাসার পেছনে কোন বিশেষ কারণ আছে কি?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”] ব্যাখ্যা করতে পারবো না। হাসপাতালের যে কেবিনটাতে আমি থাকতাম তার জানালাটি ছিলো আমার মাথার বিপরীতে। সে জানালা দিয়ে আমি আলো আসা দেখতে পেতাম না, এভাবে একটানা আঠারো দিন আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম। প্রথম যেদিন আমাকে উঠানো হলো আমি জানালার দিকে তাকালাম। বৃষ্টি হচ্ছিলো তখন এর মাঝে একটি পাখি উড়ে গেলো। আমি বেঁচে আছি এই অনুভূতি আমাকে গ্রাস করলো, সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। এরপর থেকে আলো আমি ভীষণ ভালোবাসি। [/int-ans]
[int-qs]প্রেমে পড়েছেন কখনও?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]হ্যাঁ, সেই স্কুল জীবন থেকেই। সেখানে আমার সমবয়সীরা যেমন ছিলো তেমনি আমার চাইতে বয়সে বড়ও ছিলো। কিন্তু তারা কখনও এ ব্যাপারটি জানতে বা বুঝতে পারেনি। [/int-ans]
[int-qs]মানুষ হিসেবে আরেকটি জীবন পেলে কেমন জীবন চাইবেন?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]আমি আমার এই জীবনটিই চাইবো।[/int-ans]
[int-qs]পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলবো আপনারা সবাই ভালো থাকুন, আপনাদের পাশের মানুষগুলোকে ভালো রাখার চেষ্টা করুন।[/int-ans]
[int-qs]ধন্যবাদ মনেরখবর পাঠকদের সময় দেয়ার জন্য?[/int-qs]
[int-ans name=”রাহুল আনন্দ”]ধন্যবাদ মনেরখবরকেও।[/int-ans]

Previous articleঅফিসের ঝামেলার কারণে আমি মানসিকভাবে খুব অস্থিরতার মধ্যে ছিলাম
Next articleসব মানুষই কোন না কোন ভাবে মানসিক রোগী!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here