ফারজানা ফাতেমা (রুমী)
মনোবিজ্ঞানী
সাধারণত আমাদের সামনে যখন ২টি বিকল্প উপায় থাকে, আমরা কোনটা বেছে নেবো তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। ধরুন আপনার সামনে ২টি কাজের অফার আছে, আপনি কোনটি করবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। আবার অনেক ভেবে একটি নিলেন, অন্যটি ছেড়ে দিতে হলো বলে সারাক্ষণ ভাবতে লাগলেন যে ছেড়ে দেওয়া কাজটি করলেই বেশি ভালো হতো। এতে আপনি আরও বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে যাচ্ছেন অথবা মানসিক চাপে পড়ে যাচ্ছেন। শারীরিকভাবে ক্লান্ত অথবা অস্থির থাকছেন, নির্ঘুম রাত কাটানো, ক্ষুধামন্দা ভাব, ঘাম হওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া, রক্তচাপ বৃদ্ধি, মাথা ব্যথা ইত্যাদি থেকে আপনার আচরণেও প্রভাব পড়ছে যেমন, রেগে যাওয়া, চিৎকার করা, ভাঙচুর করা ইত্যাদি। সবকিছু মিলে আপনি দৈনন্দিন জীবনে কাজগুলো আর ঠিকঠাক করতে পারছেন না, আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে, আবারো ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার অনুতপ্ত হচ্ছেন ইত্যাদি। শুধু যে দুটি উপায় থেকে একটি বেছে নিতে হবে বলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তা নয়, সামনে যেটাই আসছে, কি করবেন বুঝতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।
যখনই আমরা আসলে কোন সমস্যায় পড়ি, খুব অস্থির হয়ে যাই, দ্রুত সমাধান খুঁজি। শুরুতেই আমরা ঠিক মেনে নিতে চাই না যে, এমনটা হতে পারে! তখন আমরা ডিনায়াল স্টেজে (Denial stage) থাকি, ফলে এক রকম চাপ অনুভব করি। তারপর নিজের অজান্তেই রেগে যাই, যাকে বলে অ্যাংগার স্টেজ (Anger stage)। সমাধানের জন্য পরিচিত-অপরিচিত মানুষের কাছে সাহায্য চাই। একই সাথে ভাবতে থাকি, যা করছি ঠিক করছি তো? নতুন কোন ভুল করছি না তো! একে বলে বারগেইন স্টেজ (Bargain stage), যেখানে আমরা নিজেরাই নিজের সাথে বারগেইন বা দরকষাকষি করি। আমরা কোনো সমস্যা হয়েছে শুনলেই চুলচেরা বিচার শুরু করে দেই। আসলে দোষটা কার তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু করি, যেন সমস্যা হওয়াটা খুব খারাপ ঘটনা, একটি অপরাধ! আমরা এরপর ডিপ্রেশন স্টেজে (Depression stage) চলে যাই। আমরা যখন সমস্যাকে গ্রহণ করে নেই, তখন সেটাকে বলে এক্সেপটেন্স স্টেজ (Acceptance stage)। আর এই স্টেজ থেকেই হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানের শুরু।
তাহলে সিদ্ধান্তহীনতা কাটিয়ে উঠতে মানসিক শক্তি বৃদ্ধির কোনো কৌশল রয়েছে কিনা, জেনে নেই:
১। 5 Why? টেকনিক: কোনো কাজ করার আগে সেটা কেন করবেন, তা খাতা কলমে ৫টি কেনের উত্তর লিখুন।
২। সুবিধা এবং অসুবিধা: কাজটি করলে কি কি সুবিধা এবং অসুবিধা আছে, পয়েন্ট দিয়ে লিখুন। সুবিধা বেশি আর অসুবিধা কম হলে সেটি গ্রহণ করুন। কিন্তু সুবিধা বেশি আর অসুবিধা কম হলেও, অসুবিধাটি এমন যে তা নতুন সমস্যার জন্ম দিবে, তা বাতিল করুন।
৩। সহজভাবে নেয়া: মানুষের জীবনের সব সিদ্ধান্ত সঠিক হবে এমন নয়। সিদ্ধান্ত ভুল হলে, সেটাকে সহজভাবে নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
৪। তুলনা না করা: আমার চারপাশে সবাই ভালো আছে। গাড়ি, বাড়ি আছে আর আমার কিছু নেই, এসব ভেবে নিজেকে ব্যর্থ ভাবা থেকে দূরে থাকুন।
৫। নির্ভরতা কমানো: আমরা সাধারণত শিশুকাল থেকে বাবা-মা যা সিদ্ধান্ত নিয়ে দেয়, সেভাবেই চলি। নিজের উপর আস্থা রাখতে শিখি না। বড় হয়েও অন্যদের বুদ্ধি দিয়ে কাজ করি। অন্যের উপর নির্ভর হলে, নিজের জন্য কোনটা ভালো-মন্দ তা বোঝার ক্ষমতা আর তৈরি হয় না। তাই নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করুন।
৬। নিজের প্রশংসা: নিজের মানসিক শক্তি বোঝার চেষ্টা করুন। মনেমনে অথবা লিখে নিজের কাজের জন্য নিজের প্রশংসা করুন। নিজের উপর খুশি থাকুন, এতে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বাড়বে, যা আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।
৭। রিস্ক নেয়া: কিছু সিদ্ধান্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী ধাপে কি করতে হবে, কার কার সাহায্য লাগতে পারে, উপায় নিয়ে ভাবুন এবং দূরদর্শী চিন্তা করে পরিকল্পনা করুন।
পরিশেষে, সবার আগে ভাবতে শিখুন যে, আপনি সিদ্ধান্তহীনতা কাটিয়ে উঠেছেন, এখন নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কেননা আপনার নিজের সম্পর্কে বলা উক্তিই আপনার মস্তিষ্ক বিশ্বাস করে, সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকে।
এপোয়েন্টমেটের জন্য এখানে ক্লিক করুন- Prof. Dr. Shalahuddin Qusar Biplob
আরও দেখুন-