সফলতা পেতে মনস্তাত্ত্বিক মুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম

সফলতা পেতে মনস্তাত্ত্বিক মুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম

মনস্তাত্ত্বিকগণদের মতে, মনস্তাত্ত্বিক মুক্তি ব্যক্তির জীবনে দায়বদ্ধতা, অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা এবং সুখের নিমিত্ত হিসেবে কাজ করে।

মনস্তাত্ত্বিক মুক্তি বলতে (এখানে মনস্তাত্ত্বিক শব্দটি মন বা আত্মার সাথে সম্পর্কিত) নেতিবাচক মানসিকতা এবং আবেগ, (যা আমাদের শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত হয়), থেকে মুক্তি পাওয়াকে বোঝায়।

ব্যক্তির অভিভাবক, সমকক্ষ ব্যক্তিবর্গ, জীবনে থাকা অন্যান্য প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দারিদ্র্য এবং ক্ষতিকর পপুলার কালচার ইত্যাদি অবহেলা, অপব্যবহার, ভয় ভীতি, অপূর্ণ চাহিদা এবং ভুল দিক নির্দেশনার মাধ্যমে তার মনস্তাত্ত্বিক মুক্তি রোহিত করতে পারে।

আমরা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলি যখন আমরা এমন কিছু মূল্যবোধ (আমাকে ত্রুটিবিহীন হতে হবে), মনোভাব, (আমি কখনো ব্যর্থ হতে পারি না) এবং বিশ্বাস (আমি ভালোবাসা পাবার যোগ্য নই) গড়ে তুলি। যা আমাদের অসুখী করে তোলে, আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বাধা প্রদান করে, জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে দূর করে দেয় এবং অন্যান্যদের সাথে অন্তরঙ্গ ও ভালোবাসা পূর্ণ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মনস্তাত্ত্বিক মুক্তি খর্ব হলে আমরা অন্যদের ভালবাসতে, মূল্য দিতে ও সহমর্মী হতে ব্যর্থ হই এবং নিজেদের প্রতি ও অন্যদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব থেকে বিমুখ হয়ে পড়ি। একই সাথে, আমরা আমাদের নিজেদের মধ্যে থাকা শক্তিকে উপলব্ধি করতেও ব্যর্থ হই। তাই বলা যায়, মনস্তাত্ত্বিক মুক্তি হল আমাদের আত্মার মুক্তি যা আমাদের সত্যিকারের সুখী ও সফল আমিতে পরিণত করে।

একজন ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক মুক্তি পেশাদারী ও ব্যক্তিগত পরিপ্রেক্ষিত উভয় ভাবেই আসা প্রয়োজন। পেশাদারী পর্যায়ে সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করা এবং তাদের সাথে সহমর্মী হয়ে ওঠা নিজের এবং একই সাথে তাদের মনস্তাত্ত্বিক মুক্তি ঘটাবে।

আর ব্যক্তিগত পরিপ্রেক্ষিত থেকে অতীতের সব দুঃখজনক ও ভীতিকর অভিজ্ঞতার নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজের চিন্তা ভাবনা, মনোভাব, উদ্দেশ্য, জীবনের লক্ষ্য, আবেগ অনুভূতি এবং নিজেকে বিচার করাকে মুক্ত রাখতে হবে।

এসবের মাধ্যমেই মনস্তাত্ত্বিক মুক্তি আসবে যা আপনাকে নতুন করে নিজেকে চেনাবে এবং অন্যদেরকেও আপনাকে চেনার সুযোগ করে দেবে। আপনার জীবনে পূর্ণতা আনবে, সামাঞ্জস্য বিরাজ করবে এবং সফলতা প্রদান করবে।

আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পালনে কিছুটা সতর্কতা বা নিজের ইচ্ছা বা স্বাধীনতাকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমেও জীবনে প্রাপ্তি ও সুখ আসে। যেমন- আপনি যখন বিভিন্ন সম্পর্কে আবদ্ধ থাকবেন (যেমন, কারও পিতা, মাতা, ভাই, বোন, কারও সন্তান কিংবা কারও বন্ধু হয়ে আচরণ করবেন) তখন পরিবার, বন্ধু মহল, সমাজ, দেশ এবং পৃথিবীর স্বার্থে কিছু ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা স্বাধীনতাকে দমন করবেন।

কারণ এক্ষেত্রে আপনি শুধু নিজের কাছেই দায়বদ্ধ নন বরং অন্য সবার কাছেও আপনি সমান ভাবে দায়বদ্ধ। আর আপনার এই দায়বদ্ধতাই তাদের মনস্তাত্ত্বিক মুক্তির কারণ হবে।

এভাবে নিজের মন মানসিকতাকে স্বাধীনচেতা ও উন্মুক্ত করতে পারলে আপনি নিজের জীবনকে সুখ, সন্তুষ্টি, একাত্মতা এবং সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন এবং নিজের ব্যক্তিত্বের যথাযথ মূল্যায়নে সমর্থ হবেন। দিন শেষে নিজেই নিজের অস্তিত্বকে বলতে পারবেন- আমি বাঁচার মতো বাঁচতে পেরেছি।

লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/the-power-prime/202108/3-essential-human-freedoms

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleসহযোগী হয়ে উঠুক জীবনসঙ্গী
Next articleঅ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here