মন খারাপ হলে কেউ চুপচাপ শুয়ে থাকে, কেউ গান শোনে, কেউ সিনেমা দেখে, কেউবা আবার দূরে কোথাও ঘুরতে যায়। কিন্তু এমনটা কি শুনেছেন যে মন খারাপ হলে মন ভালো করার জন্য কেউ রান্না করছে? একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, কোনো একটা রান্না সফলভাবে শেষ করতে পারলে আপনার মন ফুরফুরে লাগছে। এটাই হলো রহস্য।
কিন্তু এটি কি শুধুই মনের ভুল? নাকি সত্যিই এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? ‘জার্নাল অফ পজিটিভ সাইকোলজি’র একটি সমীক্ষা বলছে, সত্যিই এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে।
গবেষকরা প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে অন্তত ৭০০ মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে রান্না বা কেক তৈরি করার মতো ছোটখাটো ক্রিয়েটিভ কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকেন, তাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা দুই-ই বাড়ে। যদি আপনার (মন ভালো থাকে, তা হলে যে মৌলিক কাজটি করছেন, সেটিও অতি উচ্চ মানের হবে।
রান্নার আরও একটি ইতিবাচক দিক আছে। রেঁধে কাউকে খাইয়ে তৃপ্তি পান না, এমন মানুষের সংখ্যা বিরল। তারপর যদি প্রশংসা পাওয়া যায়, তাহলে তো আর কথাই নেই! ধীরে ধীরে রান্নার স্বাদ যত ভালো হবে, তত বাড়বে আপনার আত্মবিশ্বাসও।
কেক বা পাউরুটির বেকিং পারফেক্ট হলে দারুণ সুন্দর গন্ধ বেরোয়, সেটাও ভিতর থেকে চনমনে করে তোলে মানুষকে। কয়েকটা একেবারে সাধারণ কাঁচামাল নিয়ে কাজ শুরু করে দারুণ স্বাদু একটি পদ বানিয়ে ফেলার মজাটাই আলাদা।
তবে খেয়াল রাখুন, মন খারাপ কাটানোর উদ্দেশ্য নিয়েই মূলত যারা রান্নাবান্না শুরু করেছেন, তারা খাওয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন। যা রাঁধছেন, তার বেশিরভাগটাই যদি নির্দ্বিধায় খেয়ে ফেলেন, তা হলে কিন্তু লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি! ওজন বাড়তে আরম্ভ করলে কিন্তু মন খারাপও বাড়বে। ডিপ্রেশন বা মন খারাপের চিকিৎসায় আজকাল রোগীর মনের জোর বাড়ানোর জন্য এমনসব কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় যা তাকে ব্যস্ত রাখার পাশাপাশি রিল্যাক্স হতেও সাহায্য করবে। আর এই দুটো মেরুকে একসঙ্গে মেলাতে রান্নার জুড়ি নেই।
শিশুর মনঃসংযোগের সমস্যা থাকলে তাদেরও সহযোগী হিসেবে সঙ্গে রাখতে পারেন। তাতে নতুন কিছু শেখার পাশাপাশি তারা কাজে মন দিতেও অভ্যস্ত হয়ে উঠবে ক্রমশ। তবে হ্যাঁ, ধারালো ছুরি বা সরাসরি আগুনের তাত থেকে তাদের দূরে রাখাই ভালো।