স্বাস্থ্য বিভাগের একটি গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশে তিন কোটিরও বেশি মানুষ বিভিন্নভাবে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু মানসিক রোগে আক্রান্ত হলেও এখনো এ নিয়ে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেয়ায় ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশে মানসিক রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনো নানা ভুল ধারণা আছে। অথচ শুরুতে চিকিৎসা নেয়া হলে আরও অনেক রোগের মতো মানসিক রোগ থেকেও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, মানসিক রোগের সঙ্গে অন্য কিছুর সম্পর্ক নেই। বিভিন্ন কারণে মানসিক রোগ হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা না গেলে মানসিক রোগীদের অবস্থা আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষদের মধ্যে যে অনীহা, স্টিগমা ছিল তা থেকে কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। তবে একেবারে নেই, বলা যাবে না। কিন্তু মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে তার কর্মক্ষমতা কমে যায়, সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়ে। ফলে তিনি যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নিতে আসবেন, তার চিকিৎসা সহজ হবে। প্রথমদিকে এলে হয়তো ওষুধ ছাড়াই শুধু কাউন্সেলিং দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু যত দেরি হবে, চিকিৎসা তত দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়। দেরি হলে রোগীর রেসপন্স পেতেও সময় লাগে।
মানসিক রোগ নিয়ে সমাজে যেসব কুসংস্কার ও অজ্ঞতা রয়েছে সেগুলোর মধ্য দিয়েও যারা চিকিৎসার আওতায় আসে, তাদেরও বড় একটি অংশ ওষুধ নিয়ে নানা বিভ্রান্তিতে সঠিক চিকিৎসা করায় না। এ নিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকার মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনতাসীর মারুফ বলেন, মানসিক রোগের ওষুধ খেলে ব্রেনের ক্ষতি হয়, ব্রেন নষ্ট হয়ে যায়, মস্তিষ্ক আর কখনোই স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না এগুলো মানুষের ভ্রান্ত ধারণা। যেকোনো রোগের চিকিৎসায় নতুন কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হলে নির্ধারিত বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে মানবদেহে এটি কতটা কার্যকর ও নিরাপদ, তা পরীক্ষা করার পরই কেবল বাজারজাতকরণের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এ কথা বলা হচ্ছে না যে মানসিক রোগের ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আবিষ্কৃত কোনো কার্যকর ওষুধই শতভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত নয়। এমনকি আমরা নিয়মিতই যে প্যারাসিটামল আর গ্যাসের ওষুধ (অ্যান্টিআলসারেন্ট) সেবন করি, সেগুলোও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন নয়। মনে রাখতে হবে, একটি ওষুধে সবার ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।
যেসব লক্ষণে চিকিৎসা নিতে হবে-
অকারণে মন খারাপ থাকা, অল্পতে রেগে যাওয়া, নিজেকে গুটিয়ে রাখা, সামাজিক কাজকর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা, নিজে নিজে কথা বলা— ইত্যাদি মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। এসব রোগের সঙ্গে অনেক সময় শারীরিক নানা উপসর্গ দেখা যায়। যার মধ্যে রয়েছে খাবারে অনীহা, হজমে সমস্যা, মাথা ব্যথা, বুক ব্যথা, শরীরের নানা জায়গা ব্যথা হচ্ছে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু পরীক্ষা—নিরীক্ষা করেও এগুলোর কোনো কারণ পাওয়া যায় না। এরকম হলে মানসিক রোগের বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা উচিত।