অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্ট, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ৩য় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

0
37

পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়
ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।।

প্রাণ জুড়ানোর নাছোড়বান্দা তাগিদেই যেন ছুটে এসেছেন তারা। সিওমেক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের একঝাঁক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী। মিলিত হয়েছিলেন ২৮-২৯ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারে অবস্থিত দুসাই রিসোর্ট এণ্ড স্পা-তে অনুষ্ঠিত অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ৩য় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে।

পুনর্মিলনী; এ যেন সতেজ প্রাণের মেলা। এ যেন তোমার আমার স্মৃতিকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখা। খুঁজে ফেরা সেই ফেলে আসা নানা রঙের দিনগুলি। এক সময়ের অচেনা কিছু মুখ; যারা উচ্চতর শিক্ষার দুরূহতম পথ পাড়ি দিতে দিতে, নানা ঘাত-প্রতিঘাতে পরস্পরের হাসি কান্নার সাথী হতে হতে একসময় আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠেছিলেন।

তারা সবাই সিওমেক মনোরোগবিদ্যা বিভাগ হতে পড়াশুনা শেষ করে বিশেষজ্ঞ হয়ে ছড়িয়ে গেছেন দেশের নানা প্রান্তে। মানব সেবার আর মানসিক সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।

২৮-২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ও দিনভর নানা আনন্দ আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় এই পুনর্মিলনী৷ বিকেলে শিশুদের ছবি অঙ্কন ও পিলো পাসিং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জমে উঠে মিলনমেলা।

সন্ধ্যায় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মূল সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিওমেকের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ধরণের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এই ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। উক্ত সভায় অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিমকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। স্মারক বক্তব্যে তিনি সিওমেক মনোরোগবিদ্যা বিভাগ বছরের পর বছর ধরে নানা চড়াই উৎরাই পার করে কীভাবে আজকের সমৃদ্ধি অর্জন করেছে সে ব্যাপারে আলোকপাত করেন। সিওমেক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান ডা. আরকেএস রয়েল তার বক্তব্যে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান দূর-দূরান্ত পাড়ি দিয়ে এই অনুষ্ঠানে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য। উক্ত সভায় সকল শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট এবং উপহার প্রদানের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়। মোড়ক উন্মোচন হয় ‘মনের দেউড়ি’র।

রাতে অনুষ্ঠিত হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সুরের মূর্ছনায় আর লাল নীল আলো ছায়ার খেলায় মিলে-মিশে একাকার এক স্মৃতিবিধুর রাত। বয়সের ভিন্নতা সত্ত্বেও যেন স্মৃতি একইরকম নরম আর মোলায়েম।

স্মৃতির পাতা খুলে বসেছিলেন বর্তমানে সিরাজগঞ্জের নর্থবেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজের অধ্য কর্মরত অধ্যাপক ডা. মো. আবু তাহের, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. কাউসার আহমেদ, খুলনা মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আমিনুর রহমান, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হতে অবসরপ্রাপ্ত  সহযোগী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন আহমেদ, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, টাঙ্গাইলে কর্মরত সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. এনামুল হক খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ ফরিদপুরের সহকারী অধ্যাপক ডা. মেজবাউল খান ফরহাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিন সার্জন অফিসের ডা. মো. মাহমুদুল হাছান,  সিওমেক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা রায়, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহমেদ রিয়াদ চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক ডা. পলাশ রায়, ডা. সাইদ এনামসহ সিওমেক মনোরোগবিদ্যা বিভাগ হতে এমফিল ডিগ্রী অর্জনকারী অন্যান্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, ‘জীবনের অনন্য সময় কাটিয়েছেন সিওমেকের মনোরোগবিদ্যা বিভাগে পড়াকালীন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিরা মনের আঙিনাতে বড্ড ভিড় করে।’ সেই স্মৃতিময় মানুষগুলোকে আবার এভাবে একসাথে দেখার সুযোগ করে দেবার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

সিওমেক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ডা. আহমেদ রিয়াদ চৌধুরী ; যিনি একাধারে শিক্ষা ও শিক্ষক জীবনে জড়িয়ে আছেন এই বিভাগের সাথে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘ বিভাগের অসাধারণ প্রতিভাধর,  পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সাথে জীবনের অনেকাংশ অতিবাহিত করতে পেরে উনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন।’

সন্ধ্যায় কফি পান করতে করতে বসেছিলো কিছু সদ্য তারুণ্য পার হওয়া মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের উচ্ছ্বসিত আড্ডা। যেন সকাল হতে আউটডোরে রোগীর স্রোত, ইনডোরে দীর্ঘ রাউণ্ড আর ক্লিনিকে সাইকোথেরাপি থেকে একটু বিরতি নিয়ে সবাই একত্র হয়েছেন চা পানে; যেমন প্রতিদিন হতো একসময়, প্রিয় বিভাগে!

সেই আড্ডায় স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেছিলেন বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. আব্দুল মতিন, পাবনা মানসিক হাসপাতালের আবাসিক সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. একেএম শফিউল আজম, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জসিম উদ্দীন, সিওমেকের সহকারী রেজিস্ট্রার  ডা. সুচিত্রা তালুকদার, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জের সহকারী অধ্যাপক ডা. রেজোয়ানা হাবীবা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটে কর্মরত ডা. আফরোজা আক্তার।

সহসা আড্ডার বিষয় হয়ে উঠে সেই দিনগুলি। ব্লক ফাইনাল আর থিসিসের সেইসব নির্ঘুম রাত, সবাই মিলে ঘুরে বেড়ানো, মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ও অন্যান্য দিবস পালনে সবাই মিলে কাজ  করা, ফল উৎসব আর সেই উৎসবে নানা ঢঙে ফল হাতে নিয়ে ছবি তোলা – গল্প যেন ফুরোতেই চায় না।  এক ফাঁকে ডা. মো. আব্দুল মতিন স্মরণ করেন অকালে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া সহপাঠী ডা. তানজিনা আহমেদ মিম্মিকে। আহা! সেই মায়াবী মুখ! আরও স্মরণ করেন প্রিয় অধ্যাপক ডা. গোপাল শংকরকে।  তিনি বলেন,’ এই বিভাগে তিনি তার স্বপ্নকে একটু একটু করে বড় হতে দেখেছেন। যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন হৃদয়ের মণিকোঠায়, জ্বলজ্বল করবে প্রিয় মুখগুলো৷’ মুখর হয়ে উঠে পরিবেশ।  ডা. একেএম শফিউল আজম বলেন, ‘মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, সিওমেক; এক অসীম আবেগের নাম। সীমাহীন অনুভূতির সমন্বয় যা এক কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়৷ আরও সমৃদ্ধ হোক প্রিয় বিভাগ।

দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রংপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢামেকের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. জিকরুল ইসলাম, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে সহকারী পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ডা. তাসলিমা রহমান, ডা. রাহাত ইমাম ও ডা মোহাম্মদ হাসান। এমডি রেসিডেন্সী পাশ করে বিভাগ ছেড়ে গেছেন বেশিদিন হয় নি। যেন এখনো প্রিয় বিভাগের ঘ্রাণ – মন জুড়ে। ক্যামেরাবন্দি করছিলেন নিজেদের আনন্দকে।

পরদিন ২৯ ফেব্রুয়ারী সকালে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলে সবাই গাড়ি যোগে রওনা দেয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সমাধি দেখতে। মিরটিংগা, পাত্রখোলা আর দলই চা বাগানের মধ্য দিয়ে ছুটে চলা রাস্তা; দু’পাশে নয়নাভিরাম দৃশ্য। সমাধিতে পৌছে শ্রদ্ধা জানানোর পর চড়ুইভাতিতে মেতে উঠেন সবাই। এ যেন স্মৃতির খাতায় আরও কিছু নতুন পাতার যোগ! বিদায় বেলায় আবারও কি চোখের কোণে জল জমে কিছু; আগের মতো?

এই অসাধারণ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস্ ,  সিলেট শাখা বাপসিল এবং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন  অব ডিপার্টমেন্ট সাইকিয়াট্রি , সিওমেক।

উল্লেখ্য, ২৮ ফেব্রুয়ারী দুসাই রিসোর্টে বাপসিলের ৭ম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং নতুন কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়।

 

Previous articleবাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস সিলেটের নবগঠিত কার্যকরী কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত
Next articleমানসিক রোগ: চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয়তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here