নতুন কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালীন সময়ে মায়ের খাদ্যাভ্যাস তার অনাগত সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
আমরা যা কিছু খাই তার প্রভাব আমাদের স্বাস্থ্যের উপর পড়ে এই বিষয়টি আমরা সকলেই জানি। খাদ্যাভ্যাস আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হার্ট এ্যাটাক প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় খাদ্যাভ্যাস রোগ ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। আর সুস্বাস্থ্য বলতে বিশেষজ্ঞগণ শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যকেই বুঝাননি। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ই যদি ভালো থাকে তাহলেই পরিপূর্ণ সুস্থ থাকা যায়। এরই ধারাবাহিকতায়, একজন গর্ভবতী মা এবং তার অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যের উপরেও খাদ্যাভ্যাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গবেষণা বলছে, মায়ের সাথে সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও এই খাদ্যাভ্যাস প্রভাব বিস্তার করে।
গর্ভকালীন সময়ে ধূমপান করা বা মদ্য পানের মতো বিষয় গুলি শিশুর বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ ধরণের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক নির্দেশনা সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি অবগত। তাছাড়া, ভিটামিনের অভাব যে সন্তানের মানসিক গঠনকে বাধাগ্রস্ত করে এটিও বেশ আলোচিত বিষয়। কিন্তু মায়ের সার্বিক খাদ্যাভ্যাস সন্তানের মানসিক বিকাশে ভূমিকা পালনের বিষয়টি অনেকের কাছেই অজানা। বর্তমানে এই বিষয়টি বেশ আলোচিত এবং এটি নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাও পরিচালিত হয়েছে। মায়ের খাদ্যাভ্যাস গর্ভকালীন সময়ে সন্তানের শারীরিক বিকাশের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর এই প্রভাব সন্তান জন্মের পরেও সারা জীবন থেকে যায় কারণ মাতৃ গর্ভেই সন্তানের শরীর ও মন গঠনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য গ্রহণ করেন এবং নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অনুকূল খাদ্য গ্রহণ করেন তাদের সন্তানেরাও শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য নিয়ে জন্ম নেয়। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, মা যেসব খাদ্য গ্রহণ করছেন সেটি শুধু মায়ের শরীরের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকছেনা। সন্তানও গর্ভকালীন সময়ে এই খাদ্যের উপর নির্ভর করেই বেড়ে উঠছে এবং তারা শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও এর উপরই নির্ভর করছে। তাছাড়া, মায়ের মানসিক অবস্থা অনাগত সন্তানের মনস্তত্ত্বে সরাসরি প্রভাব ফেলার কারণেও খাদ্যাভ্যাস শিশুর মনস্তত্ত্বেও প্রভাব বিস্তার করে। একজন মা, যিনি গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন তার মানসিক স্বাস্থ্য, যারা সুষম খাদ্য গ্রহণ করছেন না তাদের তুলনায় ভালো থাকে। কারণ, সুষ্ঠু খাদ্যাভ্যাস বিষণ্ণতা, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি মানসিক সমস্যা থেকে মা’কে দূরে রাখে। আর যারা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করে তাদের মধ্যে এ ধরণের মানসিক সমস্যা অনেক বেশি হয়। ফলে, সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
মায়ের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে পারলে সন্তান মানসিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে এটি নিয়ে আরো বেশি গবেষণা প্রয়োজন। তাছাড়া গবেষণার ফলাফল নিয়েও মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। মায়ের যত্ন মানেই শিশুর যত্ন। তাই মায়ের মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারলে সেটি সন্তানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশেও ভূমিকা পালন করবে।
সাইকোলজি টুডে থেকে অনুবাদ করেছেনঃ প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে