মহামারীকালীন সময়ে আমাদের সবারই জীবন যাত্রায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। এই পরিবর্তিত জীবনে কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা বড় অংশ দখল করে ফেলেছে এবং আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এর ফলে কতোটা প্রভাবিত হচ্ছে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
কোভিড-১৯ মহামারীর এই বছরে আমাদের সবার মাঝেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের হার অনেকটা বেড়েছে। যেহেতু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী মানুষের দীর্ঘ দিন ধরে কাছের মানুষ, বন্ধু বান্ধব কারও সাথে দেখা করা সম্ভব হচ্ছেনা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথেও বাইরে ঘুরতে যাওয়া সহ অন্যান্য কোয়ালিটি টাইম অতিবাহিত করা সম্ভব হচ্ছেনা, তাই স্ট্রেস এবং মন খারাপ দূরে রাখতে অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
এটা নিঃসন্দেহে সত্য যে মহামারীর এই দুঃসময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে। এর মাধ্যমে যেমন বাইরের পরিবেশ, করোনা পরিস্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তেমনি কাছের মানুষদের থেকে দূরে থেকেও তাদের সাথে জুড়ে থাকার সুযোগ আমরা পাচ্ছি। কিন্তু এসব ইতিবাচক দিক এবং সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ফেলছে বিরূপ প্রভাব। কিছু সুনির্দিষ্ট দিকে দৃষ্টিপাত করলে বোঝা যাবে যে কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি সাধন করছে। নিচে সেরকম কিছু বিষয় উল্লেখ করা হল।
১) ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের সময়সীমা বৃদ্ধি
যেহেতু মহামারীর এই সময়টাতে অধিকাংশ সময় আমাদের ঘরের মাঝেই থাকতে হচ্ছে তাই সময় কাটাতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের সময়সীমা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আমাদের অধিক মাত্রায় নীল রশ্মির সংস্পর্শে থাকতে হচ্ছে যা এসব ডিভাইস থেকে নির্গত হয়। এই অতিরিক্ত নীল রশ্মি আমাদের চোখের ক্ষতি করছে। আমরা অনিদ্রায় আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটছে। তথা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
২) মহামারী সংক্রান্ত খবর অধিক হারে শোনার ফলে স্ট্রেস বাড়ছে
প্রতিদিন অগণিত মানুষের আক্রান্ত হওয়া, করোনায় মৃত্যু বরণ, চারিদিকে শোক, সংক্রমণের আশঙ্কা,অর্থনৈতিক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নানা ধরণের নেতিবাচক খবর আমাদের মানসিক ভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং আমাদের স্ট্রেস লেভেল বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত এবং অতি মাত্রায় এসব খবর দেখা এবং সারাক্ষণ এসব নিয়ে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করার ফলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং আমরা অত্যধিক দুশ্চিন্তা, ভয়, স্ট্রেস, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধা মন্দা সহ নানাবিধ মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছি।
৩) ভুল তথ্য আমাদের মানসিক ভাবে হয়রানী করছে
আমরা সব সময় যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে সঠিক তথ্য পাচ্ছি এমনটা নয়। অনেক অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং যেগুলো সরল মনে বিশ্বাস করে আমরা চরম মানসিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছি। এর হলে আমাদের মাঝে হতাশা বাড়ছে এবং ভুল তথ্য আমাদের যথাযথ ভাবে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বিধানের পথে বাঁধার সৃষ্টি করছে।
সব বিষয়ের ভালো এবং খারাপ দুটো দিকই থাকে। আর আমাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে যে আমরা আমাদের সাথে কোনটা ঘটতে দেবো। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে এই আপদকালীন সময়ে আমাদের সহায়ক হিসেবে গ্রহণ করবো নাকি এর নেতিবাচক প্রভাবে নিজেদের মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তুলবো। নিজেদের সচেতনতাই পারে আমাদের এসব সমস্যা থেকে দূরে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ করে দিতে। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রিত হতে না দিয়ে বরং যান্ত্রিক ব্যবহারকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। আর তাহলেই আমরা মানসিকভাবে সুস্থ থেকে নেতিবাচক প্রভাব এড়িয়ে এসব যান্ত্রিক মাধ্যমের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবো।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে