বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে যত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন তার ১৫ শতাংশের পেছনে ভূমিকা রেখেছে লম্বা সময় বায়ু দূষণের প্রভাব, এমন দাবি করছেন গবেষকরা।
বায়ু দূষণ সম্পর্কিত পূর্ববর্তী গবেষণাগুলো বলে, যানবাহন ও কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া মানুষের আয়ু থেকে গড়ে দুই বছর কেড়ে নেয়, সব বয়সের নারী-পুরুষের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।
আর এবার জার্মানি ও সাইপ্রাসের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “করোনাভাইরাসে হওয়া প্রাণহানির পেছনে দায় আছে ওই বায়ুদূষণেরও।”
‘কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ’ নামক সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণার জন্য তথ্য নেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বায়ু দূষণ, করোনাভাইরাস ও অন্যান্য ‘সার্স’ ভাইরাস সম্পর্কে।
সেই তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে তৈরি হয় বৈশ্বিক তথ্য, যেখানে পর্যালোচনার আওতায় ছিল, বিশ্বব্যাপি মানুষ কি মাত্রায় দূষিত বাতাসের খালি চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষুদ্র ‘পার্টিকেল’য়ের সংস্পর্শে আসে এবং তার কতটুকু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য হুমকি হতে পারে।
পূর্ব এশিয়া বায়ুদূষণের দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। গবেষকদের পর্যালোচনা অনুযায়ী, ২৭ শতাংশ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর পেছনে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে দূষিত বাতাস। ইউরোপের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ১৯ শতাংশ আর উত্তর আমেরিকায় ১৭ শতাংশ।
গবেষণার সহকারী লেখক থমাস মানজেল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বাতাসে শ্বাস নেওয়া একজন মানুষ যদি করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হন, তবে স্বাস্থ্যের ওপর প্রচণ্ড ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। বিশেষত, হৃদযন্ত্র আর রক্তনালীর। করোনাভাইরাসের কারণে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয় তাকে আরও জটিল ও তীব্র করে তোলে বায়ু দূষণ।”
জোহানেস গুটেনবার্গ ইউনিভার্সিটি’র ইউনিভার্সিটি মেডিকাল সেন্টার’য়ের একজন অধ্যাপক থমাস মানজেল।
তিনি আরও বলেন, “বায়ু দূষণের কারণে ফুসফুসের কোষের উপরিভাগে থাকা ‘এসিই-টু’ নামক ‘রিসেপ্টর’য়ের সক্রিয়তা বেড়ে যায়। আর এই ‘এসিই-টু রিসেপ্টর’য়ের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। ফলে সমস্যা দুদিক দিয়ে বাড়ছে। বায়ু দূষণ ফুসফুসকে দূর্বল করছে এবং ‘এসিই-টু রিসেপ্টর’য়ের সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে। আর সেটাই করোনাভাইরাসকে সংক্রমণের সহজ সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।”
গবেষণার লেখকরা আরও বলেন, “করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সঙ্গে বায়ু দূষণকে সম্পৃক্ত করা মানেই এই নয় যে দূষণ মানুষকে ভাইরাসে আক্রান্ত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে সেই দিকটাও সম্পুর্ণ বাতিল করে দেওয়া যায় না।
ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউড ফর কেমিস্ট্রি’র জশ লেলিভেল্ড বলেন, “দূষণের কারণে করোনার প্রকোপ আরও তীব্রতর হয়েছে। আমাদের হিসেব মতে, ব্রিটেইন’য়ে ‘কোভিড’য়ে হারিয়ে যাওয়া ৬ হাজার ১শ’ বা তারও বেশি প্রাণের দায় দেওয়া যায় বায়ু দূষণের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা প্রায় ৪০ হাজার।
শহরতলীর জ্বালানিতে বড় কোনো পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত মহামারী ফুরিয়ে গেলেও মৃত্যু মিছিল হয়ত থামবে না। টিকা আবিষ্কার হয়ত করোনাভাইরাস নির্মূল করবে তবে বায়ু দূষণের তো কোনো টিকা হয় না।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে